×

মুক্তচিন্তা

আইয়ুব বাচ্চুর প্রয়াণ

Icon

কাগজ অনলাইন প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৯ অক্টোবর ২০১৮, ০৬:৫৬ পিএম

আঙুলের শৈল্পিক স্পর্শে রুপালি গিটারে সুরের ঝঙ্কার তুলতেন আইয়ুব বাচ্চু। গিটার আর কণ্ঠকে একাকার করে এ দেশের সঙ্গীতের ভুবনে ঝড় তুলেছিলেন সুরের এই রাজকুমার। শিল্পী হিসেবে দেশের প্রতি ছিল তার দারুণ ভালোবাসা। সঙ্গীত ভুবনে তার অবদান চির অম্লান হয়ে থাকবে।

বরেণ্য সঙ্গীতশিল্পী আইয়ুব বাচ্চু আর নেই। অগণন শ্রোতা-ভক্ত, সহযাত্রী ও শুভাকাক্সক্ষীকে বেদনার অশ্রুজলে ভাসিয়ে তিনি পাড়ি জমালেন না ফেরার দেশে। বৃহস্পতিবার সকালে রাজধানী ঢাকায় তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। মাত্র ৫৬ বছর বয়সে ব্যান্ডসঙ্গীতের কিংবদন্তি এই শিল্পীর জীবনের পরিভ্রমণ শেষ হয়ে যায়। তার আকস্মিক মৃত্যুর খবরে সঙ্গীতাঙ্গনসহ দেশের শিল্প-সংস্কৃতি অঙ্গনে নেমে আসে শোকের ছায়া। তার মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এই জনপ্রিয় শিল্পীর মৃত্যুতে আমরাও শোকাহত।

জানা যায়, গত মঙ্গলবার রাতে রংপুরে একটি কনসার্ট শেষ করে বুধবার দুপুরে ঢাকায় ফেরেন আইয়ুব বাচ্চু। পরদিন বৃহস্পতিবার সকালে নিজ বাসায় তার হার্ট অ্যাটাক হয়। এরপর দ্রুত তাকে স্কয়ার হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সকাল ৯টা ৫৫ মিনিটে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। আইয়ুব বাচ্চু দীর্ঘদিন ধরে হৃদযন্ত্রের অসুস্থতায় ভুগছিলেন। তার হার্টের কার্যক্ষমতা ছিল ৩০ শতাংশ। ২০০৯ সালে তিনি হার্টে রিং পরিয়েছিলেন। এরপর ২০১২ সালে ফুসফুসে পানি জমার কারণে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। বেশ কিছুদিন চিকিৎসার পর তিনি সুস্থ হয়ে আবারো গানে ফেরেন। কিন্তু তা আর দীর্ঘায়িত হয়নি; আকস্মিকভাবে নিভে গেল তার জীবন প্রদীপ। তিনি স্ত্রী, এক ছেলে, এক মেয়েসহ অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন। ১৯৬২ সালের ১৬ আগস্ট চট্টগ্রামে জন্মগ্রহণ করেন আইয়ুব বাচ্চু। ১৯৭৮ সালে ‘ফিলিংস’ ব্যান্ডের মাধ্যমে তার পেশাদার মিউজিক ক্যারিয়ারের শুরু। ১৯৮০ থেকে ১৯৯০ পর্যন্ত তিনি ‘সোলস’ ব্যান্ডের লিড গিটারিস্ট হিসেবে যুক্ত ছিলেন। ১৯৯১ সালে আইয়ুব বাচ্চু ‘এলআরবি’ (লিটল রিভার ব্যান্ড) প্রতিষ্ঠা করেন। ব্যান্ড প্রতিষ্ঠার পর থেকে শেষ দিন পর্যন্ত তিনি এর লিড গিটারিস্ট ও ভোকাল হিসেবে কাজ করেছেন। আইয়ুব বাচ্চুর গাওয়া গানগুলোর মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় ‘চলো বদলে যাই’, ‘সেই তুমি কেন এত অচেনা হলে’, ‘উড়াল দেবো আকাশে’, ‘আমি বারো মাস তোমায় ভালোবাসি’, ‘এই রুপালি গিটার ফেলে একদিন’, ‘তারা ভরা রাতে’ ইত্যাদি। এলআরবির ‘তবুও’ অ্যালবামটি বাংলাদেশের সঙ্গীতের ইতিহাসে অন্যতম একটি ‘হার্ডরক’ অ্যালবাম হিসেবে বিবেচিত। অন্যদিকে আইয়ুব বাচ্চুর একক অ্যালবাম ‘কষ্ট’ দেশের ইতিহাসে সর্বাধিক বিক্রি হওয়া অ্যালবামের একটি। রক ঘরানার গানের এই শিল্পী আধুনিক আর লোকগীতিতেও শ্রোতাদের মুগ্ধ করেছেন। বেশ কিছু চলচ্চিত্রে প্লে-ব্যাকও করেছেন তিনি। আঙুলের শৈল্পিক স্পর্শে রুপালি গিটারে সুরের ঝঙ্কার তুলতেন আইয়ুব বাচ্চু। গিটার আর কণ্ঠকে একাকার করে এ দেশের সঙ্গীতের ভুবনে ঝড় তুলেছিলেন সুরের এই রাজকুমার। শিল্পী হিসেবে দেশের প্রতি ছিল তার দারুণ ভালোবাসা। সঙ্গীত ভুবনে তার অবদান চির অম্লান হয়ে থাকবে। আমরা তার বিদেহি আত্মার শান্তি কামনা করছি এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানাচ্ছি।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App