×

মুক্তচিন্তা

রোহিঙ্গা নারী পাচার, প্রশাসনিক উদ্যোগ জরুরি

Icon

কাগজ অনলাইন প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৮ অক্টোবর ২০১৮, ০৮:৩১ পিএম

ভয়াবহ বিষয় হলো অনুপ্রবেশকারী রোহিঙ্গাদের নিয়ে জঙ্গিবাদ বিস্তারের ষড়যন্ত্রও চলছে। রোহিঙ্গা নারী-কিশোরীদের তারা টার্গেট করেছে জঙ্গিবাদে দীক্ষা প্রদানে। জঙ্গিরা গোপনে বিয়ে করে তাদের নিয়ে পাড়ি দিচ্ছে অন্যত্র। এসব ঠেকাতে প্রশাসনিক উদ্যোগও কাজে আসছে না। একাধিক দালাল চক্র এ কাজে সক্রিয় রয়েছে। এদের বিরুদ্ধে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ জরুরি।

মিয়ানমারে হত্যা, নির্যাতনের শিকার হয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গা নারী-শিশুরা এখানেও শান্তিতে নেই। একটি চক্র দারিদ্র্য ও অসহায়ত্বের সুযোগ নিয়ে চাকরিসহ বিভিন্ন প্রলোভন দেখিয়ে তাদের বিদেশে পাচারের চেষ্টায় লিপ্ত রয়েছে। মানবিকতার যে নিদর্শন বাংলাদেশ স্থাপন করেছে বাস্তুচ্যুতদের আশ্রয় দিয়ে, সেখানে এই পাচার প্রক্রিয়া অমানবিকতার নিদর্শন বৈকি।

গত মঙ্গলবার জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক অভিবাসী সংস্থার (আইওএম) এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে শরণার্থী শিবিরে থাকা নারীদের একটা বড় অংশ মানব পাচারের শিকার ও জোরপূর্বক নানা কাজ করতে বাধ্য করা হচ্ছে। ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বর পরবর্তী এক বছরে রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে ৯৯টি মানব পাচারের ঘটনা চিহ্নিত করতে পেরেছে তারা। তারা ধারণা করছেন, বাস্তব সংখ্যা কয়েকগুণ বেশি হবে। পাচার হওয়াদের মধ্যে ৩৫ জন অল্পবয়সী নারী আর ৩১ প্রাপ্তবয়স্ক নারী। প্রাপ্তবয়স্ক ৩১ এবং অল্পবয়সী ২৬ নারীকে বাধ্যতামূলক শ্রমে নিয়োজিত করা হয়। এদের মধ্যে ৪ অল্পবয়সীসহ ৯ নারী যৌন নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। কিছু কিছু পরিবার তাদের দৈনন্দিন কাজের জন্য অর্থ উপার্জন করতে পারছে না। তাই তারা তাদের মেয়েদের বিভিন্ন ঝুঁকিপূর্ণ পরিবেশে কাজে পাঠাচ্ছে যা তাদের জন্য নিরাপদ নয়। এর মাধ্যমেই পাচারকারীরা ওই নারীদের পাচার করার সুযোগ পেয়ে যাচ্ছে। এমন চিত্র আমাদের রাষ্ট্র ও সমাজের জন্য ঝুঁকি বাড়বে। আন্তর্জাতিক ও স্থানীয় পর্যায়ে নারী ও শিশু পাচারে খুব শক্তিশালী নেটওয়ার্ক দরকার হয়। এ ক্ষেত্রে ইন্টারনেট এখন যোগাযোগের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। রোহিঙ্গা মেয়েদের ঢাকা, নেপালের কাঠমান্ডু ও ভারতের কলকাতায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছে বলেও তথ্য মিলেছে। কলকাতায় ব্যস্ত যৌন ব্যবসায় এ রকম অনেক নারীর পরিচয়পত্রের ব্যবস্থা করে দেয়া হচ্ছে। স্থানীয়দের সঙ্গে মিলেমিশে যাচ্ছে তারা। জানা যায়, উখিয়ার কুতুপালং, টিভি টাওয়ার পাহাড়, বালুখালী, মাইন্যারঘোনা, তাজনিমারখলা, হাকিমপাড়া, খাইংখালী ও তেলখোলা অস্থায়ী রোহিঙ্গা ক্যাম্পে নারী ও কিশোরী পাচারকারীরা চালাচ্ছে অশুভ তৎপরতা। ত্রাণ বিতরণের নামে দামি যানবাহন নিয়ে ক্যাম্পগুলোতে তারা নারী, কিশোরীদের টার্গেট করছে। রোহিঙ্গা শরণার্থীদের কষ্টের কথা, তাদের বাস্তুচ্যুত হওয়ার যন্ত্রণা, ক্ষুধা, দারিদ্র্য, ভয় এবং তাদের দুর্দশা বর্ণনা করার মতো ভাষা মেলে না। এমতাবস্থায় পাচারের ঘটনা তাদের পরিবার পরিজনদের মধ্যে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা বাড়বে এটা স্বাভাবিক। ভয়াবহ বিষয় হলো অনুপ্রবেশকারী রোহিঙ্গাদের নিয়ে জঙ্গিবাদ বিস্তারের ষড়যন্ত্রও চলছে। রোহিঙ্গা নারী-কিশোরীদের তারা টার্গেট করেছে জঙ্গিবাদে দীক্ষা প্রদানে। জঙ্গিরা গোপনে বিয়ে করে তাদের নিয়ে পাড়ি দিচ্ছে অন্যত্র। এসব ঠেকাতে প্রশাসনিক উদ্যোগও কাজে আসছে না। একাধিক দালাল চক্র এ কাজে সক্রিয় রয়েছে। এদের বিরুদ্ধে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ জরুরি।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App