×

পুরনো খবর

মতবিনিময়সহ ব্যাপক তৎপরতা চালাচ্ছেন মনোনয়ন প্রত্যাশীরা

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৬ অক্টোবর ২০১৮, ০২:৪০ পিএম

মতবিনিময়সহ ব্যাপক তৎপরতা চালাচ্ছেন মনোনয়ন প্রত্যাশীরা
আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে নওগাঁ-৩ মহাদেবপুর-বদলগাছী আসনে আওয়ামী লীগের ৪ ও বিএনপির ৫ এবং জাতীয় পার্টির একজন মনোনয়ন প্রত্যাশী দলীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে মতবিনিময়সহ আসনটি নিজ নিজ দখলে নিতে ব্যাপকভাবে তৎপর হয়ে উঠেছেন। আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দল প্রকাশ্যে সংঘাতের দিকে না এলেও ওয়ার্ড থেকে শুরু করে উপজেলা পর্যায়ের নেতাকর্মীদের মধ্যে দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশীদের বিষয়ে নিজেদের মধ্যে বাকযুদ্ধে জড়িয়ে পড়ছেন। দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশীদের পক্ষে-বিপক্ষে প্রকাশ্যে দলটির স্থানীয় পর্যায়ে কতিপয় ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড পর্যায়ে নেতাকর্মী অশালীন ভাষায় মন্তব্য করার ঘটনার বৃদ্ধিতে সংঘাতের আশঙ্কা করছে স্থানীয় রাজনীতি সচেতন মহল। অপরদিকে এ আসনে বিএনপির অভ্যন্তরীণ কোন্দল চরম আকার ধারণ করেছে। এ আসনে বিএনপির ৪ মনোনয়ন প্রত্যাশী গ্রামগঞ্জে নির্বাচনী প্রচারণার পাশাপাশি দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে সাধারণ মানুষের সমর্থন আদায়ের নিরলস চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। তবে একাধিক মনোনয়ন প্রত্যাশী মাঠে কাজ করায় দলটির নেতাকর্মী ও সমর্থকদের মধ্যে চরমভাবে ক্ষোভের সৃষ্টি করেছে। আওয়ামী লীগ ও বিএনপির অভ্যন্তরীণ কোন্দলসহ দল দুটির একাধিক মনোনয়ন প্রত্যাশী থাকার সুযোগটি কাজে লাগাতে চাইছে সুযোগ সন্ধানী জাতীয় পার্টি (এরশাদ)। কেন্দ্রীয় জাতীয় পার্টির (এরশাদ) যুগ্ম মহাসচিব ও জেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি এডভোকেট তোফাজ্জেল হোসেন ১৪ দলীয় জোটের প্রার্থী হতে কেন্দ্রে জোর লবিং করছেন বলে জানা গেছে। এ আসনটি বিএনপির ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত হলেও ২০০৮ সালের নির্বাচনে এ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ড. আকরাম হোসেন চৌধুরী এমপি নির্বাচিত হয়। তবে গত ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে আওয়ামী লীগ থেকে ড. আকরাম হোসেন চৌধুরী মনোনয়ন পেলেও এ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী তৎকালীন উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এবং বর্তমান উপজেলা সভাপতি আলহাজ ছলিম উদ্দীন তরফদার সেলিম এমপি নির্বাচিত হন। এ নির্বাচনে ড. আকরাম হোসেন চৌধুরী পরাজিত হওয়ার পর দলের সাংগঠনিক কর্মসূচিতে অংশ নেয়া থেকে বিরত রয়েছেন বলে দলের স্থানীয় নেতারা জানান। তবে ড. মো. আকরাম হোসেন চৌধুরী বিএমডিএর চেয়ারম্যান হওয়ার সুবাদে এলাকায় বরেন্দ্র উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের বিভিন্ন উন্নয়নমূলক প্রকল্প উদ্বোধন করাসহ গত প্রায় ৪-৫ মাস ধরে এ আসনে আবারো দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশী হয়ে নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধ করাসহ প্রায় প্রতিদিনই এলাকার বিভিন্ন গ্রামগঞ্জে প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। অপরদিকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে এ আসনে আলহাজ ছলিম উদ্দীন তরফদার সেলিম এমপি নির্বাচিত হলেও দলীয় কর্মসূচিতে অংশগ্রহণসহ তৃণমূল পর্যায়ে নেতাকর্মীদের একত্রিত করে সরকারের উন্নয়নমূলক কাজের প্রচারণা এবং নৌকার ভোট চেয়ে প্রায় প্রতিদিনই এ আসনের নির্বাচনী প্রচারণা অব্যাহত রেখেছেন বলে দলের একাধিক নেতা দাবি করেন। এদিকে এ আসনে আওয়ামী লীগের অপর মনোনয়ন প্রত্যাশী সাবেক সচিব, বদলগাছী উপজেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা মো. এনামুল কবির ও সকিনা বেগম বিভিন্ন স্থানে ব্যানার ও পোস্টার লাগানোসহ দলীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে মতবিনিময় এবং প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। অপরদিকে এ আসনে বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশী সাবেক ডেপুটি স্পিকার মরহুম আকতার হামিদ সিদ্দিকীর জ্যেষ্ঠ ছেলে পারভেজ আরেফিন সিদ্দিকী জনি, নওগাঁ জেলা বিএনপির সদস্য আলহাজ রবিউল আলম বুলেট, বদলগাছী উপজেলা বিএনপির সভাপতি ফজলে হুদা বাবুল ও কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সহসংগঠনিক সম্পাদক এ কে এম শফিকুল ইসলাম শফিক। জাতীয় সংসদের সাবেক ডেপুটি স্পিকার আখতার হামিদ সিদ্দিকী ২০০৬ সাল পর্যন্ত এ আসনে এমপি ছিলেন। ২০০১ সালের নির্বাচনে আখতার হামিদ সিদ্দিকী এমপি নির্বাচিত হওয়ার পর জাতীয় সংসদের ডেপুটি স্পিকার নির্বাচিত হন। ২০১৭ সালে ১৯ নভেম্বর জাতীয় সংসদের সাবেক ডেপুটি স্পিকার আকতার হামিদ সিদ্দিকীর মৃত্যুর পর দলটির অভ্যন্তরীণ কোন্দল অনেকটা প্রকাশ্যে চলে আসে। নেতৃত্বের লড়াই নিয়ে শুরু হয় দলটির মধ্যে প্রতিযোগিতা। নেতৃত্বের প্রতিযোগিতা দৌড় শুরু হয় দলটির সুবিধাবঞ্চিত এবং সুবিধাবাদী কতিপয় বিএনপি নেতার মধ্যে। এ নিয়ে উপজেলা বিএনপি ও এর অঙ্গসংগঠন নেতাকর্মীদের মধ্যে বিরোধ সৃষ্টি হয়। এ বিরোধ প্রশমনে দলের সিনিয়র নেতাদের মাধ্যমে একাধিক চেষ্টা হলেও বরফ গলেনি আজও দলটির নেতাকর্মীদের মধ্যে। আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মনোনয়ন প্রত্যাশী পারভেজ আরেফিন সিদ্দিকী জনি, আলহাজ রবিউল আলম বুলেট, ফজলে হুদা বাবুল ও এ কে এম শফিকুল ইসলাম শফিক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্রনেতা আ স ফ কবির চৌধুরী দলীয় নেতাকর্মীদের খালেদা জিয়ার মুক্তি আন্দোলনে সম্পৃক্ত করতে এবং ধানের শীষ প্রতীককে বিজয়ী করতে এলাকায় ব্যাপকভাবে প্রচারণা, গণসংযোগ ও কর্মী সমাবেশ অব্যাহত রেখেছেন। মনোনয়ন প্রত্যাশী পারভেজ আরেফিন সিদ্দিকী জনি দাবি করেন, এ আসনে তিনি দলীয় মনোনয়ন পাবেন এবং সাংসদ নির্বাচিত হলে তার বাবার অসমাপ্ত কাজগুলো সমাপ্ত করবেন। বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশী রবিউল আলম বুলেট বলেছেন, এই মুহূর্তে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে আওয়ামী লীগ সরকারের বিরুদ্ধে রাজপথে আন্দোলন-সংগ্রাম চালিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি ঐক্যবদ্ধ হয়ে আগামী নির্বাচনে এ আসনে বিএনপি মনোনীত প্রার্থীকে বিজয়ী করতে বিএনপির সব স্তরের নেতাকর্মী প্রস্তুত রয়েছেন। অন্যদিকে এ আসনে জাতীয় পার্টির (এরশাদ) কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম মহাসচিব, নওগাঁ জেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি এডভোকেট মো. তোফাজ্জল হোসেন দলীয় ও জোটের প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা দিয়ে মাঠে নেই তিনি। মাঠে না থাকলেও স্থানীয় রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, এ আসনে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির অভ্যন্তরীণ কোন্দল এবং একাধিক মনোনয়ন প্রত্যাশীর সুযোগ নিয়ে আগামী জাতীয় নির্বাচনে দলীয় অথবা মহাজোটের প্রার্থী হয়ে নির্বাচনী বৈতরণী পার হয়ে এমপি হওয়ার স্বপ্ন দেখছেন জাতীয় পার্টির এই নেতা। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন যতই ঘনিয়ে আসছে এ আসনে রাজনীতিতে ততই নতুন মাত্রা যোগ হচ্ছে। বিশেষ করে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশীদের কাছে কদর বাড়ছে তৃণমূল নেতাকর্মীদের। দলীয় মনোনয়ন পেতে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি এবং জাতীয় পার্টির নেতারা উপর মহলে জোর লবিং করছেন। বর্তমান সরকারের উন্নয়নের চিত্র তুলে ধরে এ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী বর্তমান সংসদ সদস্য ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আলহাজ মো. ছলিম উদ্দীন তরফদার সেলিম বলেছেন, দেশের উন্নয়নে আওয়ামী লীগ সরকার রোল মডেল। তাই বাংলাদেশকে মধ্য আয়ের দেশে পরিণত করতে আওয়ামী লীগ সরকারের বিকল্প নেই। সারা দেশের মতো এ আসনেও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নির্মাণ, শিক্ষা, চিকিৎসা, বিদ্যুৎতায়ন, রাস্তাঘাট, মহাদেবপুর আত্রাই নদীর উপর ও বদলগাছীর ছোট যমুনা নদীর উপর জেলার বৃহত্তম ব্রিজ নির্মাণসহ বিভিন্ন স্থানে কালভার্ট ও ছোট ব্রিজ নির্মাণ এবং সর্বোপরি দেশের টাকায় পদ্মা সেতু নির্মাণ করে দেশে উন্নয়নের দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা। একাদশ সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা তাকেই দলীয় মনোনয়ন দেবেন এমন প্রত্যাশা করেন বর্তমান এমপি আলহাজ মো. ছলিম উদ্দীন তরফদার সেলিম। উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আহসান হাবিব ভোদন বলেন, এ আসনে বর্তমান সরকারের সময়ে উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার নৌকা প্রতীককে আবারো বিজয়ী করবে এলাকার ভোটাররা। অপরদিকে উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা চেয়ারম্যান আব্দুস সাত্তার নান্নু বলেছেন, আগামী সংসদ নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু এবং নিরপেক্ষ হলে অবশ্যই এ আসনের ভোটাররা বিএনপির মনোনীত প্রার্থী ধানের শীষ মার্কায় ভোট দিয়ে খালেদা জিয়ার হাতকে শক্তিশালী করবে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App