×

পুরনো খবর

আ.লীগ প্রচারণা শুরু করলেও বিএনপি এখনো নামেনি মাঠে

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৫ অক্টোবর ২০১৮, ০২:১২ পিএম

আ.লীগ প্রচারণা শুরু করলেও বিএনপি এখনো নামেনি মাঠে
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে শরীয়তপুর-১ (পালং ও জাজিরা) আসনে আওয়ামী লীগের সম্ভাব্য প্রার্থীরা প্রচার-প্রচারণা শুরু করলেও বিএনপি এখনো নামেনি মাঠে। দলীয় কর্মসূচিতেও খুঁজে পাওয়া যায় না নেতাকর্মীদের। আসনটি দীর্ঘদিন ধরে আওয়ামী লীগের শক্ত ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত। স্বাধীনতার পর থেকে এখন পর্যন্ত শুধু একবার এ আসনে জিতেছিল বিএনপি। এ ছাড়া সব নির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী জয়লাভ করেন। প্রার্থী যে-ই হন এ এলাকার মানুষ ভোট দেন নৌকায়। এ আসনে প্রার্থীর চেয়ে প্রতীকের গুরুত্বই বেশি। একাদশ সংসদ নির্বাচনে বড় দুদল আওয়ামী লীগ ও বিএনপিতে একাধিক মনোনয়ন প্রত্যাশী রয়েছেন। তবে জাতীয় পার্টির জাফর খান কালাম, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মুফতি তোফায়েল আহম্মেদ কাসেমী ও জাসদের স ম মালেক একক প্রার্থী হিসেবে প্রচার-প্রচারণা চালাচ্ছেন । শরীয়তপুর সদর (পালং) ও জাজিরা উপজেলা নিয়ে শরীয়তপুর-১ নির্বাচনী এলাকা গঠিত। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন দৌড়ে রয়েছেন অন্তত ৪ জন। এদের মধ্যে বর্তমান সংসদ সদস্য ও আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক বিএম মোজাম্মেল হক, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সদস্য ইকবাল হোসেন অপু, শরীয়তপুর পৌর মেয়র ও সাবেক কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ নেতা মো. রফিকুল ইসলাম কোতোয়াল এবং জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সহসভাপতি শিল্পপতি মোবারক আলী সিকদার। বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশায় কাজ করছেন শরীয়তপুর জেলার সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক এমপি সরদার এ কে এম নাসির উদ্দিন কালু। ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আওয়ামী লীগের অনেকে মনোনয়ন প্রত্যাশী হলেও জোর আলোচনায় রয়েছে দুজনের নাম। এরা হলেন বর্তমান সংসদ সদস্য ও আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক বি এম মোজাম্মেল হক এবং আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সদস্য সাবেক ছাত্রলীগ নেতা ইকবাল হোসেন অপু। দুজনই এলাকায় দলীয় বিভিন্ন কর্মসূচিতে নিজেদের প্রার্থিতার জানান দিচ্ছেন। নেতাকর্মীদের দ্বারে দ্বারে ঘুরে নিজের মনোনয়নের পক্ষে জনমত তৈরির চেষ্টা করছেন তারা। ইকবাল হোসেন অপুর বাড়ি শরীয়তপুর সদর উপজেলায় হওয়ায় তার পক্ষে সক্রিয় রয়েছে একটি গ্রুপ। বি এম মোজাম্মেল হকের সঙ্গে জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি ও পৌর মেয়র আব্দুর রব মুন্সি। এ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য মাস্টার মুজিবুর রহমান ও সাবেক জেলা আওয়ামী লীগ সহসভাপতি মোবারাক আলী শিকদারের সুসম্পর্ক না থাকায় ইকবাল হোসেন অপু অনেকটা সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছেন। বি এম মোজাম্মেল হককে ঠেকাতে অনেকটা একাট্টা তারা। ১৯৯১ সালের পর এ আসনে শরীয়তপুর জেলা সদর থেকে কেউ সংসদ সদস্য নির্বাচিত হননি। এ আসনে কখনো ডামুড্যা আবার কখনো জাজিরা উপজেলা থেকে আওয়ামী লীগ মনোনীত কিংবা স্বতন্ত্র প্রার্থী সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। ফলে জেলা সদরে তেমন কোনো উন্নয়নমূলক কাজ না হওয়ায় এবার জেলা সদর থেকে দলীয় প্রার্থী মনোনয়ন দেয়ার জন্য দাবি আওয়ামী লীগের একটি অংশের নেতাকর্মীদের। এ আসনে ২০০১ সালে স্বতন্ত্র প্রার্থী কে এম হেমায়েত উল্লাহ আওরঙ্গজেব নির্বাচিত হয়েছিলেন। ২০০৮ সালের নির্বাচিত হন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক বি এম মোজাম্মেল হক। ২০১৪ সালের নির্বাচনেও আওয়ামী লীগ প্রার্থী বি এম মোজাম্মেল হক নির্বাচিত হন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায়। এ আসনে আওয়ামী লীগ দুটি গ্রুপে বিভক্ত হয়ে দলের বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে থাকে। এক গ্রুপের নেতা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্রনেতা ও আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির অন্যতম সদস্য ইকবাল হোসেন অপু তরুণদের কাছে বেশ জনপ্রিয়। দুর্দিনে লড়াই-সংগ্রাম করে দলের পক্ষে কাজ করেছেন অপু। তাই শরীয়তপুরের উন্নয়নের জন্য তাকে দলীয় মনোনয়ন দেয়ার দাবি অধিকাংশ তৃণমূল নেতাকর্মীর। অন্যদিকে বর্তমান সংসদ সদস্য বি এম মোজাম্মেল হক শরীয়তপুর সদর উপজেলায় কাক্সিক্ষত উন্নয়নমূলক কাজ করতে পারেননি বলে অভিযোগ নেতাকর্মীদের। টিআর ও কাবিখা প্রকল্প যথাযথভাবে বাস্তবায়ন না হওয়ায় সমালোচনা রয়েছে তার বিরুদ্ধে। এ ছাড়া নবগঠিত জেলা আওয়ামী লীগের কমিটি থেকে সাবেক জেলা সভাপতি ও পৌর মেয়র আব্দুর রব মুন্সী, জাজিরা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান সাবেক জেলা আওয়ামী লীগ সহসভাপতি শিল্পপতি মোবারক আলী সিকদার, সাবেক এমপি মাস্টার মজিবুর রহমান বাদ পড়ায় তার বিরুদ্ধে ব্যাপক সমালোচনা রয়েছে। দলের দীর্ঘদিনের ত্যাগী ও পরীক্ষিত নেতাদের বাদ দিয়ে জামায়াত-বিএনপির কিছু নেতাকে অন্তর্ভুক্ত করে কমিটি গঠন করার অভিযোগ রয়েছে এমপি বি এম মোজাম্মেল হকের বিরুদ্ধে। তবে তার সমর্থক-নেতাকর্মীরা এসব অভিযোগ অস্বীকার করেন। এ আসনে মনোনয়ন প্রত্যাশী বর্তমান সংসদ সদস্য ও আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক বি এম মোজাম্মেল হক বলেন, আমি বিগত ১০ বছরে পালং-জাজিরায় ব্যাপক উন্নয়নমূলক কাজ করেছি। রাস্তাঘাট, স্কুল-কলেজ, মসজিদ-মন্দির সর্বত্র আমি সরেজমিন গিয়ে কোথায় কী প্রয়োজন তা জোগান দিতে চেষ্টা করেছি। প্রতিহিংসাবশত অনেকে আমার উন্নয়নমূলক কাজ দেখে না। আমি এ আসনে মনোনয়ন পাওয়ার ব্যাপারে শতভাগ আশাবাদী। আমার বিশ্বস এ অঞ্চলের মানুষ আবারো নৌকায় ভোট দিয়ে আমাকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত করবে এবং উন্নয়ন অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখবে। এ আসনে অপর মনোনয়ন প্রত্যাশী মোবারক আলী সিকদার বলেন, গত বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের ওপর যখন হামলা, মামলা দিয়ে জুলুম-নির্যাতন চালানো হয়েছিল তখন তিনি তাদের পাশে থেকে যে কোনো সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করেছেন। দলের দুর্দিনে অর্থ ব্যয় করে নির্যাতিত নেতাকর্মীদের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন। এবার তিনি দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার ব্যাপারে আশাবাদী। দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশী শরীয়তপুর পৌরসভার মেয়র ও সাবেক কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ নেতা রফিকুল ইসলাম কোতোয়াল বলেন, ১৯৮১ সাল থেকে গণমানুষের জন্য কাজ করছি। জেলা ছাত্রলীগের বিভিন্ন পর্যায়ে দায়িত্ব পালন করেছি। কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের দায়িত্বে থেকে সারা দেশের ছাত্রসমাজের মাঝে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ প্রতিষ্ঠায় আন্তরিকভাবে চেষ্টা করেছি। এদিকে প্রচার-প্রচারণায় আওয়ামী লীগ এগিয়ে থাকলেও এখনো মাঠে নামেননি বিএনপি প্রার্থীরা। সম্প্রতি বিএনপি নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে পালং থানায় একটি মামলা হওয়ায় অনেক নেতাকর্মী গা ঢাকা দিয়েছেন। তবে দলীয় সূত্রগুলো প্রার্থী হিসেবে জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সরদার নাসির উদ্দিন কালুর কথা বললেও তিনি এখনো নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণা শুরু করেননি। তিনি বলেন, বিএনপি যে ৭ দফা ঘোষণা করেছে সরকার তা মেনে নিলে আমরা নির্বাচনে যাব। সে ক্ষেত্রে পালং-জাজিরা আসনে আমাকে দল মনোনয়ন দিলে আমি নির্বাচনে অংশ নিতে প্রস্তুত রয়েছি। ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ মনোনীত প্রার্থী মুফতি তোফায়েল হোসেন কাসেমী বলেন, ইসলামী হুকুমত প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে চরমোনাই পীর সাহেবের নেতৃত্বে সারা দেশের মানুষ ঐক্যবদ্ধ। আমাদের হাতপাখা প্রতীকের পক্ষে ব্যাপক প্রচার-প্রচারণা আগে থেকেই শুরু হয়েছে। জাসদের সম্ভাব্য প্রার্থী স ম মালেক বলেন, আমি বিগত দিনে জাসদের পক্ষে শরীয়তপুর-জাজিরায় ব্যাপক কাজ করেছি। এ বছরও দল মনোনয়ন দিলে আমরা নির্বাচনীযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়তে প্রস্তুত রয়েছি। জাতীয় পার্টির সাবেক সাধারণ সম্পাদক জাফর খান কালাম বলেন, আমি শত বিপর্যয়েও পার্টির হাল ছাড়িনি। দলের হাইকমান্ডের সঙ্গে কথা হয়েছে। আমিই পালং-জাজিরায় জাতীয় পার্টির প্রার্থী।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App