×

মুক্তচিন্তা

আবারো পাহাড় ধস আবারো প্রাণহানি

Icon

কাগজ অনলাইন প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৫ অক্টোবর ২০১৮, ০৭:০১ পিএম

চট্টগ্রাম ও পার্বত্য চট্টগ্রামে পাহাড় ধসে একের পর এক মৃত্যুর ঘটনা প্রায়ই ঘটছে। প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় পাহাড় ধসে প্রাণহানি-ক্ষয়ক্ষতি এড়াতে প্রশাসনের কিছু সতর্কতামূলক তৎপরতা দেখা গেলেও পাহাড় ধস ঠেকানোর ব্যাপারে কারো কোনো মাথাব্যথা নেই। শুধু প্রাকৃতিক কারণেই পাহাড় ধসে পড়ছে তা কিন্তু নয়। নিয়ন্ত্রণহীন পাহাড় কাটা, পাহাড়ে স্থাপনা নির্মাণসহ আরো কিছু অপরিণামদর্শী মনুষ্য তৎপরতার পরিণামে ধসে পড়ছে পাহাড়।

আবারো পাহাড় ধসের ঘটনা ঘটল বন্দরনগরী চট্টগ্রামে। পাশাপাশি দেয়াল ধসের একটি ঘটনাও রয়েছে। এ দুই ঘটনায় একই পরিবারের ৩ জনসহ ৪ জন প্রাণ হারিয়েছে। শনিবার মধ্যরাত ও রবিবার ভোরে নগরীর পাঁচলাইশ থানার রহমাননগর ও ফিরোজশাহ কলোনিতে পাহাড় ও দেয়াল ধসের দুর্ঘটনা ঘটে। এমন ঘটনায় প্রাণনাশকে কি শুধুই প্রাকৃতিক দুর্যোগের বলি বলা যাবে? এই মৃত্যুতে কি আমাদের কোনোই দায় নেই?

ঘূর্ণিঝড় তিতলির প্রভাবে চট্টগ্রামে শনিবার পর্যন্ত টানা চার দিন ভারি বর্ষণ হয়েছে। একটানা বৃষ্টিপাতের কারণে নগরীর পাহাড়গুলোর মাটি নরম হয়ে যায়। এরপর জেলা প্রশাসন, ফায়ার সার্ভিস এবং পুলিশ প্রশাসন ব্যাপক তৎপরতা শুরু করে। সংস্থাগুলোর চেষ্টা ছিল পাহাড়ের পাদদেশে গড়ে ওঠা ঝুঁকিপূর্ণ বসতি থেকে লোকজনকে সরিয়ে দেয়া। বিভিন্ন এলাকায় মাইকিং করা হয়। এরপরও অনেকেই থেকে গিয়েছিল। শেষ মুহূর্তে ঘটে গেল ধসের দুই ঘটনা। চট্টগ্রাম ও পার্বত্য চট্টগ্রামে পাহাড় ধসে একের পর এক মৃত্যুর ঘটনা প্রায়ই ঘটছে। প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় পাহাড় ধসে প্রাণহানি-ক্ষয়ক্ষতি এড়াতে প্রশাসনের কিছু সতর্কতামূলক তৎপরতা দেখা গেলেও পাহাড় ধস ঠেকানোর ব্যাপারে কারো কোনো মাথাব্যথা নেই। শুধু প্রাকৃতিক কারণেই পাহাড় ধসে পড়ছে তা কিন্তু নয়। নিয়ন্ত্রণহীন পাহাড় কাটা, পাহাড়ে স্থাপনা নির্মাণসহ আরো কিছু অপরিণামদর্শী মনুষ্য তৎপরতার পরিণামে ধসে পড়ছে পাহাড়। বর্ষায় প্রাণহানি ছাড়াও পরিবেশ-প্রকৃতিতে এর ভয়ঙ্কর বিরূপ প্রভাব নিয়ে কারো কোনো চিন্তা আছে বলে মনে হচ্ছে না। নির্বিচারে পাহাড় কেটে অসংখ্য ঘরবাড়ি তৈরি করা হয়েছে। পাহাড় কেটে চলছে প্লট ও ফ্ল্যাট বিক্রির রমরমা বাণিজ্য। এমনকি সরকারি উদ্যোগেও উন্নয়ন কর্মকা-ের নামে পাহাড় কাটার অভিযোগ রয়েছে। দীর্ঘকাল ধরে পাহাড় কাটা, স্থাপনা নির্মাণ, পাহাড়ের গায়ে বেড়ে ওঠা গাছপালা উজাড়ের ফলে পাহাড়ের অবশিষ্ট মাটি আলগা হয়ে যায়। যার ফলে বৃষ্টি হলে পাহাড়ের গা বেয়ে তীব্র বেগে নেমে আসা ঢল আলগা মাটি ধুয়ে নিয়ে নিচে নামতে থাকে। পাহাড় হয়ে পড়ে দুর্বল, জীর্ণশীর্ণ। ঘটে পাহাড় ধস। মারা যায় পাহাড়ের ঢালে বস্তিতে বাস করা নিম্ন আয়ের হতদরিদ্র, ছিন্নমূল মানুষ। শুধু বর্ষা মৌসুমে পাহাড়ের ঢালের বসতি উচ্ছেদের ব্যবস্থা করলেই সমস্যার সমাধান হবে না, পাহাড় ধস ঠেকানোরও উদ্যোগ নিতে হবে। বন্ধ করতে হবে পাহাড় কাটা, পাহাড়ের বৃক্ষ উজাড়, উন্নয়নের নামে অপরিকল্পিত স্থাপনা নির্মাণ। ভারি বৃষ্টিপাতের শুরুতেই পাহাড়ে বসবাসকারীদের সরিয়ে নিতে হবে। প্রয়োজনে জোর করে লোকজনকে নিরাপদ স্থানে নিয়ে যেতে হবে। পাহাড় ধসের যেসব কারণ চিহ্নিত ও সুপারিশ করা হয়েছে, সেগুলোর কার্যকর বাস্তবায়ন করতে হবে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App