×

মুক্তচিন্তা

নিশ্চিদ্র নিরাপত্তার ব্যবস্থা নিন

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৪ অক্টোবর ২০১৮, ০৮:১৩ পিএম

 

চলতি বছর সারা দেশে রেকর্ড সংখ্যক পূজামণ্ডপে দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। দুর্গাপূজার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সরকার এ বছর বাড়তি ব্যবস্থা নিয়েছে। এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানাই। তবে দুর্গাপূজার প্রাক্কালে দেশের বিভিন্ন স্থানে প্রতিমা ও মন্দির ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। এমন ঘটনা আমরা দেখতে চাই না।

বাঙালি হিন্দু সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় অনুষ্ঠান শারদীয় দুর্গোৎসব। গতকাল দেবী দুর্গার বোধনের মধ্য দিয়ে শুরু হয়েছে পাঁচ দিনব্যাপী এই মহোৎসব। প্রতি বছরের মতো এবারো দুর্গোৎসবকে ঘিরে দেশব্যাপী দেখা গেছে আনন্দ-উৎসবের ফল্গুধারা। দেবী দুর্গা সত্য, শুভ ও ন্যায়ের পক্ষের সংগ্রামে মর্ত্যরে মানুষকেও সাহসী করে তোলেন। দূর করে দেন যত গ্লানি, হিংসা-দ্বেষ, মনের দৈন্য ও কলুষ। যাবতীয় মহৎ গুণাবলির প্রতি দেবী দুর্গা মানুষকে আকৃষ্ট করেন।

ফলে সত্য শুভ ও কল্যাণের এক গভীর প্রতীকী ব্যঞ্জনা নিয়ে শারদীয় দুর্গোৎসব হয়ে ওঠে সার্বজনীন। উৎসব উপলক্ষে আমরা হিন্দু ধর্মাবলম্বীসহ দেশের সব নাগরিককে জানাচ্ছি শারদীয় শুভেচ্ছা।

প্রতি বছরের মতো এবারো বাংলাদেশের হিন্দু সম্প্রদায় যথাযোগ্য মর্যাদা ও উৎসাহ-উদ্দীপনায় দুর্গোৎসবের আয়োজন করেছে। রাজধানী ছাড়াও প্রত্যন্ত গ্রামের মণ্ডপগুলোও উৎসব মুখরিত। হিন্দু ধর্মাবলম্বীর পাশাপাশি অন্য ধর্মের মানুষও সার্বজনীন দুর্গোৎসবের আনন্দ ভাগ করে নেয়।

এ দেশে শত শত বছর ধরে বিভিন্ন সম্প্রদায় পারস্পরিক সহাবস্থান ও সম্প্রীতির সঙ্গে বসবাস করে আসছে। এটা বাঙালির চিরন্তন ঐতিহ্য ও সম্প্রীতির পরিচায়ক। দুর্গোৎসব কেবলমাত্র একটি ধর্মীয় সম্প্রদায়ের আচার-অনুষ্ঠান ও আনন্দ-উৎসব উদযাপনের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। শরতের এ সময়টাতে আগমনী সুর জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে সব বাঙালিকেই দোলা দিয়ে যায়। শরতের শুভ্র আকাশ, কাশফুলে হাওয়ার নাচন আর আগমনী ঢাক-শাঁখের আওয়াজ যেন মিলেমিশে একাকার হয়ে যায়। গ্রাম-নগরে ধনী-গরিব ছোট-বড় সবাই মিলিত হন শরতের মিলনোৎসবে। দেশের মিডিয়াগুলোও এটিকে সার্বজনীন উৎসব গণ্য করে বিশেষ অনুষ্ঠানমালা সাজায়। এটি অনুপম সম্প্রীতি চেতনারই বহিঃপ্রকাশ।

চলতি বছর সারা দেশে রেকর্ড সংখ্যক পূজামণ্ডপে দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। রাজধানীতে গত বছর যে ক্ষেত্রে ২২৯টি পূজামণ্ডপে দুর্গাপূজা হয়েছে এবার সে সংখ্যা ২৩৪-তে উন্নীত হয়েছে। এ বছর সারা দেশে দুর্গাপূজা হচ্ছে প্রায় ৩১ হাজার মণ্ডপে। গত বছরের চেয়ে এ সংখ্য ৮৬৩টি বেশি। দুর্গাপূজার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সরকার এ বছর বাড়তি ব্যবস্থা নিয়েছে। বিভেদকামী শক্তি যাতে দুর্গাপূজা উপলক্ষে হানাহানি সৃষ্টি করে সুনামে কলঙ্ক লাগাতে না পারে সে জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তীক্ষ্ণ নজর রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানাই।

তবে দুর্গাপূজার প্রাক্কালে দেশের বিভিন্ন স্থানে প্রতিমা ও মন্দির ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। এমন ঘটনা আমরা দেখতে চাই না। কারণ দেশের বিভিন্ন স্থানে হিন্দু সম্প্রদায়ের কিছু মন্দিরে হামলা-ভাঙচুর শুভবোধসম্পন্ন সব মানুষকেই লজ্জিত, আহত এবং শঙ্কিত করে। এই ব্যাপারে প্রশাসনকে কঠোর হতে হবে।

আমরা চাই, সবাই মিলে এই উৎসব-পার্বণ পালনের মধ্য দিয়েই সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি এবং পারস্পরিক সৌহার্দ্যরে বন্ধন আরো দৃঢ় হোক। আমাদের মনের সব হিংসা, দ্বেষ, কালিমা দূর হয়ে যাক। সৌহার্দ্য-সম্প্রীতিপূর্ণ সহাবস্থানের মধ্য দিয়ে আমরা সুখ ও সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে যাব- এই হোক প্রার্থনা।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App