×

পুরনো খবর

আওয়ামী লীগ জর্জরিত কোন্দলে সাংগঠনিকভাবে দুর্বল বিএনপি

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৪ অক্টোবর ২০১৮, ০১:১৫ পিএম

আওয়ামী লীগ জর্জরিত কোন্দলে সাংগঠনিকভাবে দুর্বল বিএনপি
চট্টগ্রাম-২ (ফটিকছড়ি) সংসদীয় আসনে আগামী নির্বাচনে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল থেকে কে কে মনোনয়ন পাচ্ছেন তা নিয়ে চলছে নানা হিসাব-নিকাশ। তবে এখানে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ জর্জরিত চরম কোন্দলে। অন্যদিকে সাংগঠনিকভাবে দুর্বল অবস্থা বিএনপির। প্রার্থী মনোনয়ন নিয়ে দুদলের নেতাকর্মীদের মধ্যে দলাদলি বেড়ে গেছে। দুদলেই মনোনয়ন প্রত্যাশীর সংখ্যা একাধিক। ১৯৭৩ সালে দেশের প্রথম সংসদ নির্বাচনে এ আসন থেকে আওয়ামী লীগের টিকেটে সংসদ সদস্য হয়েছিলেন চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের বর্তমান সভাপতি নুরুল আলম চৌধুরী। ১৯৮৬ সালে তৃতীয় সংসদ নির্বাচনেও এ আসন থেকে তিনি সংসদ সদস্য হন। ২০০১ সালের অষ্টম সংসদ নির্বাচনে সারা দেশে যখন আওয়ামী লীগের ভরাডুবি হয় তখন চট্টগ্রামের ১৬টি আসনের মধ্যে দুটিতে জয় পেয়েছিল দলটি। ওই দুটি আসনের একটি এই ফটিকছড়ি থেকে রফিকুল আনোয়ার নির্বাচিত হয়েছিলেন। সপ্তম সংসদ নির্বাচনে একই আসন থেকে রফিকুল আনোয়ার নৌকা প্রতীক নিয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। পঞ্চম সংসদে আওয়ামী লীগ টিকেটে নির্বাচিত হন সৈয়দ নজিবুল বশর মাইজভাণ্ডারী। পরের সংসদে তিনি দল বদলে বিএনপি থেকে নির্বাচন করে জয়লাভ করেন। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির দশম সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন জোটের শরিক তরিকত ফেডারেশনের চেয়ারম্যান সৈয়দ নজিবুল বশর মাইজভাণ্ডরী সংসদ সদস্য হন। আগামী নির্বাচনে এ আসন থেকে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশীদের তালিকায় রয়েছেন নবীন-প্রবীণ মিলে অন্তত অর্ধডজন নেতা। তারা হলেন উত্তর জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি নূরুল আলম চৌধুরী, সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান এ টি এম পেয়ারুল ইসলাম, সাবেক সংসদ সদস্য রফিকুল আনোয়ারের ভাই চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আওয়ামী লীগ নেতা ফখরুল আনোয়ার ও মেয়ে খাদিজাতুল আনোয়ার সনি এবং চট্টগ্রাম জেলা পরিষদ সদস্য আখতার উদ্দিন মাহমুদ পারভেজ। উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি নুরুল আলম চৌধুরী বলেন, ১৯৭৩ ও ১৯৮৬ সালের নির্বাচনে ফটিকছড়ির মানুষ আমাকে এমপি নির্বাচিত করেছিলেন। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যখন প্রথম সংসদ নির্বাচনে আমাকে মনোনয়ন দেন তখন আমার বয়স ছিল ২৬ বছর। প্রায় ৫৩ বছরের রাজনৈতিক জীবনে সব সময়েই এলাকায় ছিলাম এবং এখনো আছি। আগামী নির্বাচনে যদি দল মনোনয়ন দেয় তাহলে আবারো ফটিকছড়ির মানুষ আমাকে নির্বাচিত করবে। ফটিকছড়ি উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান এ টি এম পিয়ারুল ইসলাম বলেন, আমি দীর্ঘদিন ধরে আওয়ামী রাজনীতির সঙ্গে আছি। আমি ফটিকছড়ি উপজেলা চেয়ারম্যান ছিলাম। ছাত্রলীগের রাজনীতি থেকে শুরু করে প্রায় ৪৬ বছর আমার রাজনৈতিক জীবন। ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন নিয়ে নির্বাচন করেছি। আশা করি, দল এবারো আমাক মূল্যায়ন করবে। সাবেক এমপি রফিকুল আনোয়ারের মেয়ে খাদিজাতুল আনোয়ার সনি বলেন, গত নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেলেও দলের সিদ্ধান্তে আবার সরে দাঁড়িয়েছি। দলের হাইকমান্ডের নির্দেশনা ও বৃহত্তর স্বার্থে জোটের প্রার্থীকে বিজয়ী করে আনি। কিন্তু তিনি নির্বাচনে নৌকা প্রতীক নিয়ে এমপি হলেও পরবর্তী সময়ে স্থানীয় সরকার নির্বাচনগুলোতে দেখা যায় উনি (বর্তমান এমপি) আমাদের দলের প্রার্থীর বিপক্ষে। নিশ্চয়ই প্রধানমন্ত্রী এ বিষয়টির মূল্যায়ন করবেন। আমাকে মনোনয়ন দেয়া হলে বাবার (প্রয়াত রফিকুল আনোয়ার) আসনটি আমরা নেত্রীকে উপহার দিতে পারব। আমার বাবা ছিলেন ফটিকছড়ির জনপ্রিয় নেতা। দলের দুঃসময়েও তিনি আসনটি নেত্রী ও দলকে উপহার দিতে পেরেছেন। আশা করি আমিও পারব। এ আসনে বর্তমান সংসদ সদস্য আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন জোটের শরিক বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশনের চেয়ারম্যান সৈয়দ নজিবুল বশর মাইজভাণ্ডারী। ২০১৪ সালে জোটগত মনোনয়নে নৌকা প্রতীক নিয়ে তৃতীয়বারের মতো এমপি হয়েছিলেন তিনি। সংসদ সদস্য হিসেবে এলাকার উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে তার ভূমিকা কম থাকা, আওয়ামী লীগ নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ বা সমন্বয় না রাখায় এবার দলীয় প্রার্থীকে মনোনয়ন দিতে একাট্টা আওয়ামী লীগ। স্থানীয় বিভিন্ন ইস্যুতে সরকারদলীয় নেতারা বিভক্ত হলেও কেন্দ্রের কাছে তাদের অভিন্ন দাবি, ফটিকছড়িতে এবার নিজ দল থেকে যেন প্রার্থী মনোনয়ন দেয়া হয়। নির্বাচন উপলক্ষে গত ৪ অক্টোবর ফটিকছড়ি উপজেলায় আয়োজিত আওয়ামী লীগের পথসভায় মারামারি, মঞ্চ ভাঙচুরসহ দুপক্ষে সংঘাতের ঘটনা ঘটে। আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় প্রেসিডিয়াম সদস্য এবং গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনের উপস্থিতিতেই মারামারি ও সংঘাতের ঘটনা ঘটে। ফটিকছড়ির আজাদী বাজারে পথসভা চলাকালে ফটিকছড়ি উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নাজিম উদ্দিন মুহুরীর অনুসারীদের সঙ্গে সাবেক ছাত্রলীগ নেতা এস এম আবু তৈয়বের অনুসারীদের মধ্যে এই সংঘর্ষ ঘটে। এ ছাড়া উত্তর জেলা আওয়ামী লীগ নেতা সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান এ টি এম পেয়ারুল ইসলামের সঙ্গে আওয়ামী লীগের সাবেক প্রয়াত সংসদ সদস্য রফিকুল আনোয়ারের পরিবারের দ্ব›দ্ব রয়েছে। ফটিকছড়ি উপজেলা চেয়ারম্যান ও উত্তর জেলার সাংগঠনিক সম্পাদক এম তৌহিদুল আলম বাবুর সঙ্গে বিরোধ রয়েছে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মুজিবুল হক ও সাধারণ সম্পাদক নাজিম উদ্দিন মুহুরীর। প্রবাসী অধ্যুষিত এ উপজেলায় বিদ্যালয়ের চেয়ে মাদ্রাসা বেশি। নানা দিক দিয়ে পিছিয়ে থাকা এ উপজেলায় আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দলকে কাজে লাগিয়ে মহাজোটের অংশ হয়ে এ আসনটিতে ফের এমপি হতে চাইছেন নজিবুল বশর। এদিকে ফটিকছড়ি আসনটি পেতে মাঠে সক্রিয় রয়েছেন বিএনপির কেন্দ্রীয় ও জেলা পর্যায়ের কয়েকজন নেতা। তবে দীর্ঘদিন ক্ষমতার বাইরে থাকায় ফটিকছড়িতেও বিএনপির সাংগঠনিক অবস্থা দুর্বল হয়ে পড়েছে। নেতাকর্মীদের মধ্যে এক ধরনের ক্ষোভ ও হতাশা বিরাজ করছে। উপজেলা বিএনপির দুটি আহ্বায়ক কমিটি বিদ্যমান। এখানে বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশীদের মধ্যে রয়েছেন যুদ্ধাপরাধের দায়ে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হওয়া সালাউদ্দীন কাদের (সাকা) চৌধুরীর স্ত্রী ফারহাত কাদের চৌধুরী অথবা সাকাপুত্র বিএনপির কেন্দ্রীয় সদস্য হুম্মাম কাদের চৌধুরী, বিএনপির তথ্য ও গবেষণাবিষয়ক সহসম্পাদক কাদের গণি চৌধুরী, চট্টগ্রামের সাবেক সিভিল সার্জন বিএনপি নেতা ডা. খুরশীদ জামিল চৌধুরী, দলের জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও সাবেক বিচারপতি ফয়সল মাহমুদ ফয়েজী। উত্তর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য ডা. খুরশিদ জামিল চৌধুরী বলেন, আমি ডক্টরস এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ড্যাব) চমেক কলেজ শাখার সভাপতি এবং বিএমএ চট্টগ্রাম শাখার সাধারণ সম্পাদক ছিলাম। বিএনপি যোগ্য প্রার্থী মনোনয়ন দিলে এখানে বিজয়ী হবে ধানের শীষ। ফয়সল মাহমুদ ফয়েজী বলেন, দলের দুঃসময়ে আমি ফটিকছড়ির শত শত নেতাকর্মীকে আইনি ও আর্থিকসহ সার্বিকভাবে সহায়তা করে যাচ্ছি। ফটিকছড়ির নেতাকর্মীদের যারা বর্তমানে হাজতে আছে আমিই একমাত্র ব্যক্তি তাদের পাশে আছি এবং থাকব। জাতীয় পার্টির (এরশাদ) কেন্দ্রীয় নেতা সাবেক সংসদ সদস্য মজহারুল হক শাহ চৌধুরীও আগামী নির্বাচনে মনোনয়ন চাইবেন।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App