×

মুক্তচিন্তা

ডিজিটাল অপরাধ ও তার প্রতিকার

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৩ অক্টোবর ২০১৮, ০৮:৪৯ পিএম

ডিজিটাল অপরাধ ও তার প্রতিকার
ডিজিটাল অপরাধ ও তার প্রতিকার
 

একটি পরিচ্ছন্ন, নিরাপদ, ভাসতে ভাসতে ভেলায় উড়ে বেড়ানোর মতো নীল ডিজিটাল আকাশ কি আমরা পাই? প্রতিদিন কি আমরা শকুনের থাবায় পড়ছি না। যাকে বলে ডিজিটাল আকাশ তাতেই কি সাইবার অপরাধ আতঙ্ক সৃষ্টি করছে না? আমরা কি নিজের জন্য, নিজের সন্তানের জন্য, নিজের ব্যবসার জন্য, সমাজের জন্য বা রাষ্ট্রের জন্য শঙ্কিত নই?

দ্বিতীয় কিস্তির পর তিন নিবন্ধটি লিখতে লিখতে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন মহামান্য রাষ্ট্রপতির অনুমোদন পেয়ে কার্যকর হয়েছে। আইনটির বিষয়ে টেলিভিশন মালিকরা প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন। তারা প্রধানমন্ত্রীর আশ্বাস পাওয়ার পর ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের প্রয়োজনীয়তার পাশাপাশি এর প্রতি সমর্থনও দান করেছেন। ১১ অক্টোবর ’১৮ এই আইনের অধীনে প্রথম মামলাও হয়েছে। প্রশ্নপত্র ফাঁস করার দায়ে এই মামলা দায়ের করা হয়। একই দিনে বিডিনিউজ টোয়েন্টি ফোরের খবরে জানা যায় যে, মেডিকেলের ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র নিয়ে প্রতারণার অভিযোগে পাঁচ জনকে গ্রেপ্তারও করা হয়েছে। এই আইনের আওতায় এটিই প্রথম গ্রেপ্তার। গত বুধবার ১০ অক্টোবর বাড্ডা থানার পুলিশ তাদের গ্রেপ্তার করে। সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার মোল্যা নজরুল ইসলাম জানিয়েছেন যে, এটিই ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের প্রথম মামলা। সেদিন ঢাকার যাত্রাবাড়ী ও বাড্ডা থেকে গ্রেপ্তার করার পর তাদের বিরুদ্ধে মামলা হয়। বৃহস্পতিবার তাদের আদালতে হাজির করে ৭ দিনের রিমান্ড চাওয়ার পর আদালত ২ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করে। আসামিরা হলো কাওসার গাজী, সোহেল মিয়া, তরিকুল ইসলাম শোভন, রুবাইয়াত তানভির (আদিত্য) ও মাসুদুর রহমান ইমন। তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ যে আগেও প্রশ্ন ফাঁস করার সঙ্গে তারা যুক্ত ছিল এবং প্রশ্ন দিয়ে বিকাশে তারা টাকা আদায় করত। খবরটির পরিপ্রেক্ষিতে প্রধানমন্ত্রীর তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয় মন্তব্য করেছেন যে এ ধরনের অপরাধ দমনের জন্যই ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন। তিনি এই মন্তব্যও করেন যে এ ধরনের আইন ছাড়া এমন অপরাধ প্রতিরোধ করা সম্ভব নয়। এখানে উল্লেখ করা দরকার যে, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগে সাইবার পুলিশ সেন্টার গড়ে তোলার অনুমোদন দিয়েছে। তথ্য মন্ত্রণালয় গুজব ও ভিত্তিহীন খবর প্রতিরোধ করার জন্যও পদক্ষেপ নিতে শুরু করেছে। ৩৪২ সদস্যবিশিষ্ট এই বাহিনী বস্তুত ডিজিটাল নিরাপত্তা বিষয়ে কাজ করবে। নির্বাচনের আগেই এই ইউনিটটি কাজ শুরু করবে বলে খবরে জানা গেছে। কাকতালীয় বিষয় হলো যে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম তার একটি ফেক আইডির জন্য একটি জিডি করেছেন। যা হোক, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাংলাদেশের জন্য একটি এমন আইনগত ভিত্তি তৈরি করেছে যা এর আগে কখনো ছিল না। ডিজিটাল রূপান্তরে নেতৃত্বদানকারী দেশ হিসেবে বাংলাদেশের এই সক্ষমতা গর্ব করার মতো। আমি আগেই বলেছি যে, আইনটির বেশ ক’টি ধারা নিয়ে সম্পাদক পরিষদ, বিএনপি-জামায়াত সমর্থিত ডিইউজে ও বিএফইউজে তীব্র সমালোচনা করেছে। আমার ইচ্ছা আছে সেসব বিষয় নিয়ে আলোচনা করার। তবে ডিজিটাল নিরাপত্তা বিশ্ব পরিস্থিতি নিয়ে একটি একাডেমিক আলোচনা হতেই পারে। বাংলাদেশে ডিজিটাল যন্ত্র : বাংলাদেশে কম্পিউটার আসে ১৯৬৪ সালে। তবে কম্পিউটার যন্ত্র এবং অন্যান্য ডিজিটাল যন্ত্রের সঙ্গে আমাদের জানাশোনা ৮৭ সালের পর। ৮৭ সালে আমাদের কম্পিউটারে বাংলা আসে আর মুদ্রণ ও প্রকাশনার জগতে ঘটে বিপ্লব। ধীরে ধীরে ব্যবসা-বাণিজ্য ও ব্যাংকে কম্পিউটারের প্রসার ঘটে। তবে আমাদের ডিজিটাল জগৎ গড়ে ওঠে মোবাইলের মনোপলি ভাঙা ও ইন্টারনেটের প্রসারের পর। বস্তুত ৯৫ সালে ইন্টারনেট দুনিয়াজোড়া বিস্তৃত হওয়ার সব বাধাবিপত্তি অতিক্রম করে। বাংলাদেশেও তখন অফলাইন ইন্টারনেট চালু হয়। তবে এ দেশে ৯৬ সালের জুন মাসে আসে অনলাইন ইন্টারনেট। ৯৭ সালে ভাঙে মোবাইলের মনোপলি। এই শতকের ২০০৭-০৮ সালের দিকে মোবাইল বা ইন্টারনেট দুই ধারাতেই বেশ ভালো গতির সঞ্চার হয়। তবে ইন্টারনেটের সবচেয়ে বেশি প্রসার হয় ২০০৯ সালের পর। ২০১৮ সালে মোবাইলের ব্যবহার ২০০৮-এর তুলনায় তিনগুণের বেশি এবং ইন্টারনেটের ব্যবহার শতগুণের বেশি বেড়েছে। এর পেছনে ডিজিটাল বাংলাদেশ কর্মসূচির যথেষ্ট অবদান রয়েছে। ২০০৮ সালের শেষে আসে ডিজিটাল বাংলাদেশের কর্মসূচি। ফলে এতদিনে কম্পিউটারের জগৎটা ডিজিটাল জগৎ হয়ে গেছে। শুধু ডিজিটাল যন্ত্রকে ভিত্তি করে গড়ে ওঠা প্রযুক্তি এখন সভ্যতার নিয়ামকে পরিণত হয়েছে। একই সঙ্গে ডিজিটাল জগৎ ও তার ওপর ভিত্তি করে গড়ে ওঠা অপরাধের জগৎও দৃষ্টি আকর্ষণ করতে থাকে। দেশে এতদিন পর্যন্ত ডিজিটাল জগতের অপরাধগুলো প্রধানত ব্যক্তিগত বিষয় ছিল। মাঝেমধ্যে রাষ্ট্রীয় বা সামাজিক সংস্থাগুলো ডিজিটাল অপরাধের সঙ্গে যুক্ত হলেও বিষয়টি সবচেয়ে বেশি আলোচিত হতে থাকে ২০১৩ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের পর থেকে। প্রথমে ২০১২ সালের ১৪ ডিসেম্বর সরকার ডিজিটাল অপরাধ বিষয়ক প্রথম মামলা করে। সেই মামলার আসামি হলেন আমার দেশ পত্রিকার ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক জনাব মাহমুদুর রহমান। পরে সেই বছরেরই এপ্রিল মাসে সরকার ৪ জন ব্লগারের বিরুদ্ধেও ডিজিটাল অপরাধের মামলা করে। সব ক’টি মামলাই আইসিটি এ্যাক্ট ২০০৬ (২০০৯ সালে সংশোধিত)-এর আওতায় করা হয়। আমাদের নিজেদের জন্য তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি নির্ভর একটি সমৃদ্ধ দেশ এবং সারা দুনিয়ার জন্য একটি জ্ঞানভিত্তিক সমাজ গড়ে তোলার প্রত্যয় এরই মাঝে আমরা প্রকাশ করেছি। একদিকে একে আমরা বলছি তথ্যের মহাসরণি, অন্যদিকে নীল আকাশের সঙ্গে আমাদের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিষয়ক কর্মকাণ্ডকে যুক্ত করছি। আমার নিজের কাছে বিষয়টিকে খুব সঙ্গত ও মনোমুগ্ধকর মনে হয়। নীল আকাশের সঙ্গে যদি আমরা ডিজিটাল জগৎটাকে তুলনা করি এবং আমাদের বিশ্বজুড়ে বিস্তৃত ইন্টারনেটকে যদি নীল আকাশের গ্রহ, নক্ষত্র, তারা মনে করি তবে একে নিরাপদ রাখা আমাদের জন্য এক অতি আবশ্যকীয় কাজ বলে করতে হবে। বিশ্বের কোটি কোটি মানুষ যেমন করে এই আকাশটাকে শেয়ার করি তেমনি ডিজিটাল আকাশটাকেও আমরা শেয়ার করি। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে আমাদের সেই আকাশটা কি নীল রংয়ে মুগ্ধ করার মতো অবস্থাতে আছে? নীল আকাশে কি শকুনের পাখার শব্দ আমরা শুনছি না? একটি পরিচ্ছন্ন, নিরাপদ, ভাসতে ভাসতে ভেলায় উড়ে বেড়ানোর মতো নীল ডিজিটাল আকাশ কি আমরা পাই? প্রতিদিন কি আমরা শকুনের থাবায় পড়ছি না। যাকে বলে ডিজিটার আকাশ তাতেই কি সাইবার অপরাধ আতঙ্ক সৃষ্টি করছে না? আমরা কি নিজের জন্য, নিজের সন্তানের জন্য, নিজের ব্যবসার জন্য, সমাজের জন্য বা রাষ্ট্রের জন্য শঙ্কিত নই? ইন্টারনেটের প্রসার : প্রেক্ষিতটা এ রকম। ১৯৬৯ সালের আরপানেট থেকে ১৯৯১ সালে ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ওয়েবের আবির্ভাব এবং দিনে দিনে এর প্রসার পুরো দুনিয়াকে একটি নতুন সভ্যতা উপহার দিয়েছে। কেউ কেউ এই সভ্যতাকে ইন্টারনেট সভ্যতা বলে থাকেন। বাংলাদেশে হঠাৎ করেই ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা ব্যাপকভাবে বেড়ে গেছে। জুলাই ২০১৮-এর হিসাব অনুসারে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা প্রায় ৯ কোটি। ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ইন্টারনেটের ব্যবহারকারী যা ছিল এখন সেটি তার চাইতে শতগুণ বেশি। এর পেছনে ইন্টারনেট ব্যান্ডউইদথের দাম কমা, ইন্টারনেটে প্রয়োজনীয় কনটেন্টস পাওয়া এবং ফেসবুকের মতো সামাজিক নেটওয়ার্ক ও ব্লগিংয়ের যথেষ্ট অবদান রয়েছে। যে কেউ এখন দেশের সব প্রান্তের বিপুল পরিমাণ মানুষকে ইন্টারনেটে সংযুক্ত হওয়া অবস্থায় দেখতে পাবেন। এক সময়ে যা কেবলমাত্র কিছুসংখ্যক মানুষের সাময়িক কার্যকলাপ হিসেবে গণ্য হতো এখন সেটি দেশের প্রায় সব এলাকার মানুষেরই প্রাত্যহিক ক্রিয়া-কর্মে পরিণত হয়েছে। বাংলাদেশের ডিজিটাল রূপান্তরের ক্ষেত্রে এটি একটি বড় ধরনের মাইলফলক অগ্রগতি। সরকার ২০০৬ সালে সাবমেরিন ক্যাবলের সঙ্গে দেশটিকে যুক্ত করে এর ব্যবহারকারীর সংখ্যা বাড়াতে ব্যর্থ হলেও সাম্প্রতিককালে সেই অবস্থার ব্যাপক পরিবর্তন আমাদের উৎসাহিত করছে। ২০০৮ সালে আমরা যেখানে মাত্র ৮ জিবিপিএস ব্যান্ডউইদথ ব্যবহার করতাম এখন সেটি প্রায় ৯০০ জিবিপিএস এ উন্নীত হয়েছে। কেবল ১৮ সালে এই প্রবৃদ্ধি প্রায় দ্বিগুণ। এ খাতে সরকারের পাশাপাশি সাধারণ মানুষের যুক্ত হওয়াটাও নিঃসন্দেহে একটি বড় ধরনের সফলতা। একই সঙ্গে বিগত কয়েক বছরে মোবাইলের সংযোগের সংখ্যা ব্যাপকভাবে বাড়ার বিষয়টিও ইতিবাচক। মোবাইলের সংযোগ বৃদ্ধি এবং মোবাইল ও ওয়াইম্যাক্স কোম্পানিগুলো অত্যন্ত আক্রমণাত্মকভাবে ইন্টারনেট কানেকশন বাজারজাত করার ফলেও ইন্টারনেট ব্যবহারের পরিমাণ বেড়েছে। আমরা প্রত্যাশা করতে পারি যে, এই প্রবৃদ্ধি আরো দ্রুত হবে এবং দেশে ইন্টারনেট ব্যবহারের পরিমাণ অনেকের ধারণার বাইরে চলে যাবে। এটি অবশ্যই একটি শুভ লক্ষণ। তবে আমি মনে করি ইন্টারনেটের প্রসারটি কেবল ব্যবহারকারীর সংখ্যাতে নয় বস্তুত এর মধ্যে থাকা কনটেন্টই হচ্ছে এর সবচেয়ে বড় শক্তি। অতীতে একটি দেশের অগ্রগতির মাপকাঠি হিসেবে টেলিফোন কানেকশনকে বিবেচনা করা হতো। বলা হতো টেলিঘনত্ব কেমন তার ওপরে একটি দেশের অগ্রগতির সূচক নির্ধারণ করা হয়। এখন সেটি ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেটের ব্যবহার দিয়ে বিবেচনা করা হয়। বিষয়টি এ রকম বিধায় আমরা বুঝতে পারছি যে, আমরা ইন্টারনেট ব্যবহারে এগিয়ে গেলেও কার্যত যাকে মাপকাঠি হিসেবে বিবেচনা করা হয় সেই ব্রডব্যান্ড ব্যবহারের ক্ষেত্রে আমাদের তেমন বড় অগ্রগতি নেই। মাত্র দুটি ওয়াইম্যাক্স কোম্পানি ও একটি মোবাইল অপারেটর সীমিত পর্যায়ের ব্রডব্যান্ড সংযোগ প্রদান করে। ১৮ সালে ফোরজির বিস্তার এবং ফাইভজির পরীক্ষামূলক ব্যবহার আমাদের ইন্টারনেটের যুগে ব্যাপকভাবে দৃশ্যমান করেছে। মোবাইল ফোন : মোবাইল ফোনের ইতিহাস অনেক দূরে বিস্তৃত। ১৯২১ সালে ডেট্রয়েট পুলিশের মোবাইল রেডিও স্থাপন থেকে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে এর ব্যবহার বা ১৯৪৬ সালের ১৭ জুন বেল ল্যাবের মোবাইল সেবা চালু ইত্যাদি নানা প্রসঙ্গ এর সঙ্গে যুক্ত। মোবাইল রেডিও, ওয়াকি টকি, পেজার এসব অনেক প্রযুক্তি অতিক্রম করে আমরা আজকের দিনের সেলফোন প্রযুক্তিতে এসেছি। বাংলাদেশে ১৯৮৯ সালে প্রথম সেলুলার ফোনের লাইসেন্স প্রদান করা হয়। তারা সিটি সেল মোবাইল সেবার প্রচলন করে। এরপর ৯৭ সালে গ্রামীণ ও অন্যরা আসার পর দেশে মোবাইল ফোনের বিপ্লবটা সংঘটিত হয়। দুনিয়ার অনেক দেশে জনসংখ্যার চাইতে মোবাইলের সংযোগ অনেক বেশি। জার্মানি, ইন্দোনেশিয়া, ব্রাজিল, রাশিয়া এসব দেশ এই তালিকায় আছে। বাংলাদেশে এখন ১৫ কোটি মোবাইল সংযোগ রয়েছে। (চলবে) মোস্তাফা জব্বার : তথ্যপ্রযুক্তিবিদ, কলাম লেখক, দেশের প্রথম ডিজিটাল নিউজ সার্ভিস আবাসের চেয়ারম্যান, সাংবাদিক, বিজয় কীবোর্ড ও সফটওয়্যারের জনক।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App