×

পুরনো খবর

জয়ের ধারা অব্যাহত চায় আ.লীগ পুনরুদ্ধারে মরিয়া বিএনপি

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৩ অক্টোবর ২০১৮, ০২:২২ পিএম

জয়ের ধারা অব্যাহত চায় আ.লীগ পুনরুদ্ধারে মরিয়া বিএনপি
আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩ (সদর) আসনে জোরেশোরে চলছে প্রচার-প্রচারণা। প্রধান রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপির বাইরে সরব রয়েছে জামায়াতসহ কয়েকটি দল। এ আসনে জয়ের ধারা অব্যাহত রাখতে চায় আওয়ামী লীগ। অন্যদিকে আসনটি পুনরুদ্ধারে মরিয়া হয়ে উঠেছে বিএনপি। অন্যদিকে এ আসনে জামায়াতকে নিয়ে বিপাকে রয়েছে বিএনপি। এখানে জামায়াতের রয়েছে বিশাল ভোটব্যাংক। বিগত ১৯৮৬ ও ১৯৯১ সালের নির্বাচনে জামায়াত মনোনীত প্রার্থী বিজয়ী হন। আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে জামায়াত নবাবগঞ্জ সরকারি কলেজের সাবেক ভিপি নুরুল ইসলাম বুলবুলকে প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা দিয়েছে। এ অবস্থা বজায় থাকলে বিএনপির প্রার্থীর ভরাডুবির সম্ভাবনা বেশি। ২০০৯ সালের আগে এ আসনটি ছিল বিএনপির দখলে। সর্বশেষ দুটি নির্বাচনে আসনগুলো চলে যায় আওয়ামী লীগের কব্জায়। আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও এ আসনে জয়ের ধারা অব্যাহত রাখতে চায় আওয়ামী লীগ। দলটি গত ১০ বছরে চরাঞ্চলসহ সর্বত্র ব্যাপক উন্নয়ন করেছে। আর তা করে সাধারণ ভোটারদের মন অনেকটাই আওয়ামী লীগ জয় করেছে বলে নেতাকর্মীরা জানান। তাদের আশা, আগামী নির্বাচনেও তাদের জয় সুনিশ্চিত। অন্যদিকে এক সময়ের দুর্গ বলে পরিচিত এ আসনটি পুনরুদ্ধারে মরিয়া হয়ে উঠেছে বিএনপি। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকেও প্রচার-প্রচারণা চালাচ্ছেন মনোনয়ন প্রত্যাশী ও তাদের সমর্থকরা। জেলার সদর উপজেলার ১৪টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভা নিয়ে গঠিত চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩ আসন। ১৯৯০ সালের পটপরিবর্তনের পর এ আসনটি দীর্ঘদিন ছিল বিএনপি ও জামায়াতের দখলে। ২০০৮ সালের নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী হারুনুর রশিদকে বিপুল ভোটে হারিয়ে নির্বাচিত হন আওয়ামী লীগের প্রার্থী আবদুল ওদুদ। অবশ্য এই নির্বাচনে জামায়াতের আলাদা প্রার্থী ছিলেন। ওই নির্বাচনে দেশের সব আসনে বিএনপি ও জামায়াতের মধ্যে সমঝোতা হলেও এ আসনে তা হয়নি। ওই নির্বাচনে বিএনপি ও জামায়াত প্রার্থীরা আলাদাভাবে নির্বাচনে অংশ নেন। এবারো চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩ আসনে বিএনপিকে ছাড় না দেয়ার কথা বলছেন জামায়াত নেতারা। ফলে এই দুই দলের মধ্যে সমঝোতা না হলে এবারো এ আসনে বিএনপির প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে আওয়ামী লীগ ও জামায়াতের সঙ্গে। সর্বশেষ দশম সংসদ নির্বাচনে (২০১৪) এ আসনে বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় এমপি নির্বাচিত হন আওয়ামী লীগের আবদদুল ওদুদ। চাঁপাইনবাবগঞ্জের এই একটি আসনেই আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জামায়াত তিন দলের প্রার্থীই সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। ফলে ভোটের রাজনীতিতে এখানে তিন দলেরই রয়েছে শক্ত অবস্থান। আওয়ামী লীগ থেকে এবার মনোনয়নের জন্য একাধিক প্রার্থী তৎপরতা চালাচ্ছেন। তারা হলেন বর্তমান সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবদুল ওদুদ, চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি রুহুল আমিন, রাজশাহী মহানগর ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির সাবেক সদস্য মাহফুজুর রহমান বেঞ্জু, সাবেক ছাত্রলীগ নেতা সামিউল হক লিটন ও চিকিৎসক ডা. গোলাম রাব্বানী। সংসদ সদস্য আবদুল ওদুদ বেশ কিছু দিন ধরেই পৌরসভা ও ইউনিয়নগুলোর বিভিন্ন ওয়ার্ড ঘুরে দলীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে গণসংযোগ, উঠান বৈঠক, মতবিনিময় ও সভা-সমাবেশ করছেন। তুলে ধরছেন গত ১০ বছরে তার উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের ফিরিস্তি। অন্য প্রার্থীরাও ফেস্টুন, ব্যানার, মতবিনিময় সভা ও উঠান বৈঠকের মাধ্যমে জনগণের কাছে যাওয়ার চেষ্টা করছেন। দলে অভ্যন্তরীণ দ্ব›দ্ব থাকার পরও এ আসনে আওয়ামী লীগের অবস্থান এখন অনেকটাই ভালো। ২০০৮ সালের আগে সংসদ ও স্থানীয় সরকার নির্বাচনগুলোতে ভোটের হিসেবে তৃতীয় অবস্থানে থাকা আওয়ামী লীগ এখন সমান তালে লড়াই করছে বিএনপি ও জামায়াতের সঙ্গে। ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনেও ১৪টির মধ্যে ১২ ইউপিতে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা। পৌরসভার নির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী হেরেছেন মাত্র ১ হাজার ভোটের ব্যবধানে। এদিক দিয়ে কিছুটা পিছিয়ে পড়েছে বিএনপি। সদর উপজেলা ও পৌরসভা নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থীরা তৃতীয় অবস্থানে ছিলেন। ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনেও খুব একটা সুবিধা করতে পারেনি বিএনপি। শুধুমাত্র ঝিলিম ইউনিয়নে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন বিএনপির প্রার্থী। তবে এ অবস্থা থেকে ঘুরে দাঁড়াতে নানামুখী তৎপরতা চালাচ্ছে দলটি। এ আসনে বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশী তিনবারের নির্বাচিত সংসদ সদস্য ও দলের যুগ্ম মহাসচিব হারুনুর রশিদ বেশ কিছু দিন ধরেই ওয়ার্ড থেকে ইউনিয়ন পর্যায়ে গণসংযোগ ও সমাবেশ করে ধানের শীষের পক্ষে ভোট চেয়ে বেড়াচ্ছেন। পাশাপাশি দলের সাংগঠনিক অবস্থা সুদৃঢ় করতেও নানামুখী তৎপরতা চালাচ্ছেন তিনি। তবে এ আসনে বিএনপিতে রয়েছে বিরোধ। ২০১৭ সালে সম্মেলন ছাড়াই রফিকুল ইসলাম টিপুকে সভাপতি এবং আমিনুল ইসলামকে সাধারণ সম্পাদক করে নতুন জেলা কমিটি ঘোষণা করে কেন্দ্রীয় বিএনপি। এই কমিটির বিষয়ে কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব হারুনুর রশিদের সমর্থকরা আপত্তি তুললে বিরোধ তুঙ্গে ওঠে। এরপর থেকেই উভয়পক্ষ পৃথকভাবে দলীয় কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে। আসন্ন নির্বাচনে এ আসনে আবারো দলের মনোনয়ন চাইবেন দলের যুগ্ম মহাসচিব ও সাবেক সংসদ সদস্য হারুনুর রশিদ। তবে এখানে বিএনপির গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে জামায়াত। জামায়াতের সঙ্গে বিএনপির বিরোধটাও অনেক পুরনো। ১৯৯১ সালের ৫ম সংসদ নির্বাচনে বিএনপি প্রার্থী এডভোকেট সুলতানুল ইসলাম মনিকে হারিয়ে এমপি নির্বাচিত হন জামায়াতের লতিফুর রহমান। ১৯৯৬ সালের ৭ম সংসদ নির্বাচনে জামায়াতের লতিফুর রহমানকে পরাজিত করে এমপি নির্বাচিত হন বিএনপির হারুনুর রশিদ। মূলত, তখন থেকেই দুদলের নেতাকর্মীদের মধ্যে দ্ব›দ্ব চলে আসছে। পরে কেন্দ্রীয়ভাবে দুদলের ঐক্য হলেও স্থানীয় রাজনীতিতে কখনোই সমঝোতা হয়নি নেতাকর্মীদের মধ্যে। এরপর ৮ম সংসদ নির্বাচনেও জামায়াত প্রার্থীকে হারিয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন বিএনপির প্রার্থী হারুন। এমনকি ওয়ান ইলেভেনের পর ২০০৮ সালের নবম সংসদ নির্বাচনে এ আসনে আলাদাভাবে নির্বাচন করে বিএনপি ও জামায়াত। এই নির্বাচনের ফলাফলে জামায়াতের অবস্থান ছিল তৃতীয়। এ ছাড়া চাঁপাইনবাবগঞ্জের স্থানীয় সরকার নির্বাচনগুলোতেও আলাদা আলাদা প্রার্থী দিয়ে নির্বাচনে অংশ নেয় দল দুটি। ওই নির্বাচনে সদর উপজেলার চেয়ারম্যান ও পৌরসভার মেয়র পদে নির্বাচিত হন জামায়াতের প্রার্থীরা। এবারো এই আসনে সক্রিয় রয়েছেন জামায়াত নেতাকর্মীরা। এরই মধ্যে ঢাকা মহানগর জামায়াতের সেক্রেটারি ও নবাবগঞ্জ সরকারি কলেজের সাবেক ভিপি নুরুল ইসলাম বুলবুলকে দলের প্রার্থী ঘোষণা করেছে জামায়াত। প্রার্থী চ‚ড়ান্তের পর থেকেই সংগঠনের নেতাকর্মীরা এত দিন গোপনেই নির্বাচনী প্রচারণা চালাচ্ছিলেন। কিন্তু গত তিন মাস ধরে মাঠে নামছেন জামায়াতের প্রার্থী নুরুল ইসলাম বুলবুল। তিনি পৌরসভা ও ইউনিয়নগুলোর বিভিন্ন স্থানে গণসংযোগ করে ভোট চেয়েছেন। পাশাপশি সদর উপজেলার বিভিন্ন স্থানে শোভা পাচ্ছে বুলবুলের ফেস্টুন। এ অবস্থায় দুদলের মধ্যে সমঝোতা না হলে শেষ পর্যন্ত এবারো এ আসনে বিএনপিকে প্রধান প্রতিপক্ষ আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াত প্রার্থীকেও মোকাবেলা করতে হবে বলে মনে করেন নেতাকর্মীরা।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App