×

মুক্তচিন্তা

মাদক নিয়ন্ত্রণ আইনের খসড়া প্রয়োগে গুরুত্ব দিতে হবে

Icon

কাগজ অনলাইন প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৯ অক্টোবর ২০১৮, ০৭:২২ পিএম

তারুণ্যগ্রাসী ইয়াবার বিস্তার এখন জাতীয় সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত। ইয়াবার থাবা রুখতে হবে যে কোনো মূল্যে। সীমান্তবর্তী এলাকার মিয়ানমার অংশে ইয়াবা তৈরির কারখানাগুলো নিষ্ক্রিয় করা এবং এ দেশে ইয়াবা অনুপ্রবেশ রোধে বাংলাদেশ-মিয়ানমার আলোচনার মাধ্যমে কার্যকর সমঝোতায় উপনীত হওয়া জরুরি।

মরণ নেশা ইয়াবা দেশের তরুণ সমাজকে এখন সবচেয়ে বেশি আকৃষ্ট করছে। মুড়ি-মুড়কির মতো সর্বত্র ইয়াবা পাওয়া যাচ্ছে। ইয়াবাকে পুঁজি করে রমরমা ব্যবসা চলছে। ইয়াবাসহ অন্যান্য মাদকের ভয়াবহ আগ্রাসনের প্রেক্ষাপটে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণে কঠোর আইন প্রণয়ন করেছে সরকার। ৫ গ্রামের ওপর ইয়াবা পাওয়া গেলে বাহকের সর্বোচ্চ শাস্তি যাবজ্জীবন বা মৃত্যুদণ্ডের বিধান রেখে গত সোমবার মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন-২০১৮-এর খসড়ার নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিপরিষদ। মাদকের আগ্রাসন থামাতে নতুন আইনটি অত্যন্ত সময়োপযোগী।

প্রস্তাবিত আইন অনুযায়ী ইয়াবা বহন, মজুদ, বিপণনের পরিমাণ ৫ গ্রামের বেশি হলে সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড বা যাবজ্জীবন কারাদণ্ড অথবা উভয় দণ্ডের প্রস্তাব করা হয়েছে। এ ছাড়া হেরোইন, কোকেনের মতো মাদকদ্রব্যের পরিমাণ অনূর্ধ্ব ২৫ গ্রাম হলে কমপক্ষে দুই বছর এবং সর্বোচ্চ ১০ বছর কারাদণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে। আর পরিমাণ ২৫ গ্রামের বেশি হলে মৃত্যুদণ্ড বা যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হতে পারে। অন্যদিকে ডোপ টেস্ট বা মাদক পরীক্ষায় দেহে এর উপস্থিতি পাওয়া গেলে কমপক্ষে ছয় মাস ও সর্বোচ্চ পাঁচ বছর কারাদণ্ড দেয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন-২০১৮-র খসড়ায় ইয়াবাকে ‘ক’ শ্রেণির মাদক হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। আগের আইনটি ১৯৯০ সালে প্রণয়ন করা হয়েছিল। এটাকে আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপটে পুনর্বিন্যাস করা হয়েছে। বাংলাদেশ সিঙ্গেল কনভেনশন অন নারকোটিকস ড্রাগস-১৯৬১, ইউএন কনভেনশন অন সাইকো ট্রপিক সাবসটেন্সস ১৯৭১ এবং ইউএন কনভেনশন অন নারকোটিক ড্রাগস এন্ড সাইকো ট্রপিক সাবসটেন্সস ১৯১৮-এ সই করেছে। এগুলোর ভিত্তিতে আইনটি হালনাগাদ করা হয়েছে। এখন দেখার বিষয় আইনটি পাস করার পর কার্যকারিতা কতটুকু হয়। মনে রাখতে হবে, আইন প্রণয়নের চেয়ে আইনের যথাযথ প্রয়োগের বিষয়টি বেশি গুরুত্বপূর্ণ। সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগকে এ দিকটিতে জোরালো দৃষ্টি দিতে হবে। দেখা যাচ্ছে, সাম্প্রতিক বছরগুলোয় মাদক হিসেবে ইয়াবার আগ্রাসন অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠেছে। সরকারি মাদকাসক্ত নিরাময় কেন্দ্রের পরিসংখ্যান অনুযায়ী বর্তমানে মাদকাসক্ত মুক্ত হতে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীর মধ্যে ৮০ শতাংশ ইয়াবায় আসক্ত। ইয়াবার বিরুদ্ধে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অভিযান চললেও এর আগ্রাসন থেমে নেই। শহর থেকে গ্রামাঞ্চল সর্বত্র যেভাবে ইয়াবার জাল ছড়িয়ে পড়েছে। দেশের বিরাট সংখ্যক তরুণশক্তি নিয়ে আমরা স্বপ্ন দেখছি, অথচ প্রতিনিয়ত ইয়াবার নেশায় ধ্বংস হচ্ছে তারুণ্য, জাতির ভবিষ্যৎ। তাই তারুণ্যগ্রাসী ইয়াবার বিস্তার এখন জাতীয় সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত। ইয়াবার থাবা রুখতে হবে যে কোনো মূল্যে। সীমান্তবর্তী এলাকার মিয়ানমার অংশে ইয়াবা তৈরির কারখানাগুলো নিষ্ক্রিয় করা এবং এ দেশে ইয়াবা অনুপ্রবেশ রোধে বাংলাদেশ-মিয়ানমার আলোচনার মাধ্যমে কার্যকর সমঝোতায় উপনীত হওয়া জরুরি। কক্সবাজার ও চট্টগ্রাম অঞ্চলে যেসব চিহ্নিত প্রভাবশালী ব্যক্তি রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় ইয়াবা ব্যবসায় জড়িত, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর যেসব সদস্য তাদের সহায়ক, সবার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হওয়া দরকার। প্রশাসনিক কঠোর অবস্থান, রাজনৈতিক সদিচ্ছা এবং জনসচেতনতাই পারবে ইয়াবার শিকড় উপরে ফেলে এর বিস্তার ঠেকাতে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App