×

মুক্তচিন্তা

রেলের উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে গতি আসুক

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৭ অক্টোবর ২০১৮, ০৮:২৮ পিএম

পরিকল্পনা অনুযায়ী সময়মতো প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন হলে সত্যিকার অর্থে রেল যোগাযোগে একটা বৈপ্লবিক পরিবর্তন ঘটবে। তার সুফল পড়বে দেশের সার্বিক অগ্রগতিতে। সব দিক বিবেচনায় নিয়েই প্রয়োজনে প্রকল্পগুলো তত্ত্বাবধানের দায়িত্ব পুনর্বিন্যাস করা যেতে পারে। আমরা চাই সব সীমাবদ্ধতা অতিক্রম করে রেল উন্নয়ন মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নে গতি আসুক।

পদ্মা সেতু ছাড়া অন্য সব বড় প্রকল্পের অগ্রগতি তেমন নেই। আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর ১০টি মেগা প্রকল্প বাস্তবায়নে বিশেষ গুরুত্ব দেয়। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে এসব প্রকল্পের ওপর বিশেষ তদারকির ব্যবস্থাও রাখা হয়। জানা যায়, অগ্রাধিকারভিত্তিক প্রকল্পগুলোর মধ্যে রেলওয়ের তিন প্রকল্পের অগ্রগতি খুবই শ্লথ। পদ্মা লিংক রেল সংযোগ প্রকল্পের অগ্রগতি ৯%, দোহাজারী-কক্সবাজার রেল প্রকল্পের অগ্রগতি ৩ দশমিক ৫%। আর বরিশাল হয়ে পায়রা বন্দরের রেল সংযোগ প্রকল্পের অগ্রগতি এখনো শূন্যের কোঠায়। ভূমি অধিগ্রহণ, বিদেশি দাতা সংস্থার ঋণ ছাড়ে বিলম্ব এবং টেন্ডারে বিলম্বসহ নানা জটিলতায় এ তিন প্রকল্পের এই অবস্থা হয়েছে বলে জানা যায়। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় সূত্র বলছে, বড় বড় প্রকল্পের দিকে বিশেষ নজর দেয়ার জন্য সরকার দশটি মেগা প্রকল্পকে ফাস্ট ট্র্যাকভুক্ত করে। এসব প্রকল্পে কোনো ধরনের সমস্যা তৈরি হলে সঙ্গে সঙ্গে যাতে তার সমাধান করা যায়, সে জন্য গঠন করা হয়েছে উচ্চপর্যায়ের কমিটি। দশটি প্রকল্পের মধ্যে বেশিরভাগ প্রকল্পই সঠিক পথে রয়েছে। তবে রেলওয়ের তিন প্রকল্প পিছিয়ে পড়া নিয়ে প্রশ্ন উঠছে বারবার। গতকালের ভোরের কাগজে প্রকাশিত এ সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, গত ২৭ এপ্রিল চায়না এক্সিম ব্যাংকের সঙ্গে পদ্মা সেতুর রেল সংযোগ প্রকল্পের মূল কাজ শুরুর চুক্তি সই হয়। এ প্রকল্পটির ভৌত অগ্রগতি হয়েছে মাত্র ৯ শতাংশ। এ ছাড়া আর্থিক অগ্রগতি ৬ দশমিক ২৭ শতাংশ। প্রকল্পটি জানুয়ারি ২০১৬ থেকে জুন ২০২৪ সালের মধ্যে বাস্তবায়িত হবে আশা করছেন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। দোহাজারী থেকে রামু হয়ে কক্সবাজার এবং রামু থেকে মিয়ানমার সীমান্ত সন্নিকট গুনদুম পর্যন্ত রেললাইন নির্মাণ প্রকল্পের ডিপিপি একনেকে অনুমোদন পায় গত ২০১০ সালের ৬ জুলাই। ২০১১ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কক্সবাজারবাসীর স্বপ্নের রেলপথের এই মেগা প্রকল্পের উদ্বোধন করেছিলেন। প্রকল্পটির ভৌত অগ্রগতি হয়েছে ৩ দশমিক ৫০ শতাংশ এবং আর্থিক অগ্রগতি হয়েছে ১৬ দশমিক ৩৭ শতাংশ। আর পায়রা সমুদ্রবন্দরকে রেল নেটওয়ার্কের মধ্যে আনার লক্ষ্যে ভাঙ্গা থেকে বরিশাল হয়ে পায়রা সমুদ্রবন্দর পর্যন্ত রেলপথ নির্মাণের সম্ভাব্যতা সমীক্ষার জন্য পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চলতি বছরের ১৯ জুন চুক্তি স্বাক্ষর করে বাংলাদেশ রেলওয়ে। পরামর্শক প্রতিষ্ঠান মাঠ পর্যায়ে সমীক্ষার কার্যক্রম চালাচ্ছে। দেশের যোগাযোগ ব্যবস্থার অন্যতম প্রধান মাধ্যম হলো রেলওয়ে। অথচ দীর্ঘ কয়েক দশক ধরে অবহেলার শিকার হয়ে আসছিল রেলওয়ে। আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার ক্ষমতাসীন হয়ে রেলের দিকে দৃষ্টি ফেরায়। স্বতন্ত্র মন্ত্রণালয় হয়েছে রেলওয়ে। যা দেশবাসীকে খুবই আশান্বিত করেছে, এ কথা বলতেই হয়। তবে এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নে শ্লথগতি, সংশ্লিষ্ট উন্নয়ন প্রকল্পগুলোর অগ্রগতি অনাকাক্সিক্ষত প্রতিবন্ধকতায় পড়ার খবর আমাদের স্বভাবতই হতাশ করে। আমরা বিশ্বাস করি, পরিকল্পনা অনুযায়ী সময়মতো প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন হলে সত্যিকার অর্থে রেল যোগাযোগে একটা বৈপ্লবিক পরিবর্তন ঘটবে। তার সুফল পড়বে দেশের সার্বিক অগ্রগতিতে। সব দিক বিবেচনায় নিয়েই প্রয়োজনে প্রকল্পগুলো তত্ত্বাবধানের দায়িত্ব পুনর্বিন্যাস করা যেতে পারে। আমরা চাই সব সীমাবদ্ধতা অতিক্রম করে রেল উন্নয়ন মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নে গতি আসুক।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App