×

পুরনো খবর

আ.লীগে একাধিক সম্ভাব্য প্রার্থী, বিএনপির ভরসা জামায়াত

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৭ অক্টোবর ২০১৮, ০৪:৩৮ পিএম

আ.লীগে একাধিক সম্ভাব্য প্রার্থী, বিএনপির ভরসা জামায়াত
বাগেরহাট-৪ আসনে নির্বাচনী হাওয়া বইতে শুরু করেছে। মোরেলগঞ্জ ও শরণখোলা উপজেলা নিয়ে গঠিত এ আসনে স্বাধীনতার পর থেকে বেশির ভাগ সময় আওয়ামী লীগ প্রার্থীরা সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তবে এবার কোন্দল নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছে আওয়ামী লীগ। অপরদিকে নিজেদের অবস্থা দুর্বল হলেও জামায়াতের ভোটব্যাংকই বিএনপির ভরসা এ আসনে। স্বাধীনতার পর ১৯৭৩ সালে আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য শেখ আবদুল আজিজ সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়ে কৃষিমন্ত্রী হন। ১৯৭৯ সালে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন আওয়ামী লীগ নেতা আ. লতিফ খান। ১৯৮৬ সালের নির্বাচনে জাতীয় পার্টির এডভোকেট আলতাফ হোসেন, ১৯৮৮ সালে স্বতন্ত্র প্রার্থী ড. মিয়া আব্বাস উদ্দিন, ১৯৯১ সালে জামায়াতে ইসলামীর মুফতি মাওলানা আব্দুস সাত্তার আকন, ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রæয়ারির বিতর্কিত নির্বাচনে বিএনপির আরশাদুজ্জামান, ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগের ডা. মোজাম্মেল হোসেন ও ২০০১ সালে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন জামায়াতে ইসলামীর মুফতি মাওলানা আব্দুস সাত্তার আকন। ২০০৮ ও সর্বশেষ ২০১৪ সালের নির্বাচনে আবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি ডা. মোজাম্মেল হোসেন। ১৯৯৬ সালে নির্বাচিত হয়ে তিনি সমাজকল্যাণ, মহিলা ও শিশুবিষয়ক প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। আগামী নির্বাচনে এ আসনে তিনি ছাড়া আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সদস্য ও মোরেলগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি এডভোকেট আমিরুল আলম মিলন, বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি এইচ এম বদিউজ্জামান সোহাগ, সাবেক মোরেলগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান এডভোকেট প্রবীর হালদার, আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কমিটির সহসম্পাদক এইচ এম মিজানূর রহমান জনি সম্ভাব্য প্রার্থী। এরা সবাই দুই উপজেলায় গণসংযোগ করে সরকারের উন্নয়নের কথা ভোটারদের মাঝে তুলে ধরছেন। ২০০৮ সালে নির্বাচিত হওয়ার পর ডা. মোজাম্মেল হোসেনের অনুসারীদের সঙ্গে মোরেলগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি এডভোকেট আমিরুল আলম মিলন ও শরণখোলা আওয়ামী লীগ সভাপতি কামাল উদ্দিন আকনের অনুসারীদের কোন্দল শুরু হয়। এ বিরোধ এখনো বিদ্যমান। নির্বাচনের আগে কোন্দল নিরসন না হলে আর বিএনপি-জামায়াত নির্বাচনে এলে এ আসনে আওয়ামী লীগের ভরাডুবির আশঙ্কা করছেন নেতাকর্মীরা। বর্তমান সংসদ সদস্য ডা. মোজাম্মেল হোসেন বলেন, বিএনপি জোট সরকার এলাকার উন্নয়নে একটি রাস্তাও করেনি। এ সরকারের আমলে মোরেলগঞ্জ-শরণখোলায় ৫৫ কি.মি. আঞ্চলিক মহাসড়ক, ফায়ার সার্ভিস স্টেশন, রায়েন্দাখালে সেতু, অসংখ্য রাস্তা পাকাকরণ, ব্রিজ-কালভার্ট, স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসার শতাধিক ভবন ও বেড়িবাঁধ নির্মাণ, শরণখোলা ডিগ্রি কলেজ ও মোরেলগঞ্জ এস এম কলেজ জাতীয়করণ এবং সাবস্টেশন নির্মাণ করে ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ সংযোগসহ ব্যাপক উন্নয়ন করতে সক্ষম হয়েছি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সহযোগিতায়। এ ছাড়া প্রতিমন্ত্রী থাকাকালে বয়স্ক ভাতা, বিধবা ভাতা, প্রতিবন্ধী ভাতা ও মুক্তিযোদ্ধা ভাতা চালু করেছিলাম যার সুফল এখন দেশের মানুষ পাচ্ছে। তিনি বলেন, শরণখোলা ও মোরেলগঞ্জ উপজেলার নেতাকর্মীসহ সাধারণ মানুষ আমার সঙ্গে আছে, এবারো নেত্রী আমাকে মনোনয়ন দেবেন। আরেকবার এমপি হয়ে পানগুছি নদীর ওপর সেতু, সুন্দরবনসংলগ্ন শরণখোলায় পর্যটন কেন্দ্র, প্রস্তাবিত সেলিমাবাদ থানা প্রতিষ্ঠা করাসহ অসমাপ্ত কাজ শেষ করে যেতে চাই। আরেক মনোনয়ন প্রত্যাশী আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সদস্য এডভোকেট আমিরুল আলম মিলন বলেন, আওয়ামী লীগের সঙ্গে ৪৫ বছর ধরে আছি। আশির দশকে আমি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি ছিলাম। সেখান অধ্যয়নরত অবস্থায় আমিসহ ১১ জনকে এক শিবির কর্মী হত্যা মামলায় যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়া হয়। তখন ১৫ দলের নেত্রী বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সহায়তায় মামলা থেকে খালাস পাই। নাটোরে ছাত্রদলের হামলার সময় মানবঢাল দিয়ে নেত্রীকে রক্ষা করতে গিয়ে আমিসহ অর্ধশত আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী আহত হই। আমি এরশাদ সরকারে সময় ডিটেনশন খেটেছি। মোরেলগঞ্জ উপজেলা আ.লীগের ১৫ বছর সাধারণ সম্পাদক ও ২০০৩ সাল থেকে সভাপতি হিসেবে সততা ও স্বচ্ছতার সঙ্গে দলের কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছি। এলাকার মানুষের জন্য কাজ করে যাচ্ছি। আশা করি দলের মনোনয়ন পাব। তবে দল যাকে মনোনয়ন দেবে তার সঙ্গে কাজ করব। ছাত্রলীগের সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি এইচ এম বদিউজ্জামান সোহাগ বলেন, দীর্ঘদিন ধরে দল ও গণমানুষের জন্য কাজ করছি। নেত্রীর নির্দেশে সারা দেশে ছাত্রলীগকে সুসংগঠিত করেছি। ২০১৪ সালের নির্বাচনকালে বিএনপি-জামায়াত শিবীরের তাণ্ডব ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের নিয়ে প্রতিহত করেছি। আমি মোরেলগঞ্জ ও শরণখোলা উপজেলায় দীর্ঘদিন ধরে কাজ করে আসছি। দুই উপজেলার নেতাকর্মীসহ সাধারণ মানুষ আমাকে গ্রহণ করেছেন, তাদের ব্যাপক সাড়া পেয়েছি। তারা আমার সঙ্গে আছে। আমি মনোনয়ন পাওয়ার ব্যাপারে শতভাগ আশাবাদী। অপরদিকে ঘরোয়া পরিবেশে কেন্দ্রীয় কর্মসূচি পালন করা ছাড়া মাঠে বিএনপি নেতাকর্মীদের দেখা যায় না বললেই চলে। তবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তারা বেশ সক্রিয়। এ ছাড়া এলাকা তাদের পোস্টার ও ব্যানারে ছেয়ে গেছে। এ আসনে দলের মনোনয়ন প্রত্যাশীদের মধ্যে রয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির শিক্ষাবিষয়ক সম্পাদক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাদা দলের আহবায়ক ড. এ বি এম ওবায়দুল ইসলাম ও বাগেরহাট জেলা বিএনপির সহসভাপতি কাজী খায়রুজ্জামান শিপন। ড. এ বি এম ওবায়দুল ইসলাম বলেন, ১৯৯৬ সাল থেকে এ আসনে বিএনপির কেউ এমপি হতে পারেননি। আমার দল ক্ষমতায় না থাকা অবস্থায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির পর পর ২ বার সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছি। বর্তমানে আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাদা দলের আহবায়ক। দল যদি নির্বাচনে যায় এবং আমাকে যোগ্য মনে করে মনোনয়ন দেয় তবে আমি দলের সিদ্ধান্ত মেনে নির্বাচন করব। নির্বাচিত হলে মোরেলগঞ্জ-শরণখোলার অবহেলিত জনপদের মানুষের কল্যাণে কাজ করব। বিএনপির আরেক মনোনয়ন প্রত্যাশী খায়রুজ্জামান শিপন বলেন, ছাত্রদল ও যুবদলের নেতৃত্ব থেকে জেলা বিএনপির সহসভাপতি হয়েছি। ওয়ান-ইলেভেনের পর মোরেলগঞ্জ-শরণখোলায় মাঠ পর্যায়ে গত ১০ বছর ধরে আন্দোলন-সংগ্রামে নেতৃত্ব দিয়ে আসছি। দল যদি নির্বাচনে যায় তবে মনোনয়নের ক্ষেত্রে আমি শতভাগ আশাবাদী। এদিকে নিবন্ধন বাতিল হওয়া জামায়াতে ইসলামীর তেমন কোনো তৎপরতা না থাকলেও নির্বাচনী প্রস্তুতি রয়েছে দলের নেতাদের। মাঠ পর্যায়ে নিজস্ব কৌশলে তারা কেন্দ্রীয় কর্মসূচি বাস্তবায়ন করে থাকে। আগামী নির্বাচনে এ আসনে জামায়াত প্রার্থী তালিকায় বাগেরহাট কারিগরি কলেজের অধ্যক্ষ মো. আব্দুল আলীমকে রেখেছে। এ ছাড়া জাতীয় পার্টির (এরশাদ) কেন্দ্রীয় কমিটির সংখ্যালঘুবিষয়ক উপদেষ্টা সোমনাথ দে গণসংযোগ করছেন।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App