×

জাতীয়

বাড়ি নয়, যেন ভাস্কর্য কেন্দ্র

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৬ অক্টোবর ২০১৮, ০১:৩৯ পিএম

বাড়ি নয়, যেন ভাস্কর্য কেন্দ্র
বাড়ি নয়, যেন ভাস্কর্য কেন্দ্র
এক সময়কার পানাপুকুর আর জলাভূমি। কিন্তু তা দেখেই মাথায় ভ‚ত চেপে গেল চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে চারুকলা বিভাগের অধ্যাপক অলক রায়ের। ময়মনসিংহ শহরে নিজেদের বেশ বড় ও বনেদি বাড়ি পড়ে রয়েছে। কিন্তু তার মন আটকে গেল চৌধুরীহাটেই। সেটি ১৯৮০ সাল। চট্টগ্রাম শহর থেকে হাটহাজারী থানাধীন বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে আসা-যাওয়ার পথেই চৌধুরীহাট গ্রাম। বিস্তৃত সবুজ প্রান্তর, বেশকিছু পুকুর, খাল আর পাখিদের কলকাকলি দেখে আক্ষরিক অর্থেই ওই গ্রামের প্রেমে পড়ে যান ভাস্কর অলক রায়। প্রকৃতি প্রেম-ভাস্কর্য প্রেম-সৃষ্টিশীলতার এক ধরনের ক্ষ্যাপাটে প্রেমেই সেই পাড়াগাঁয়ে তিনি তৈরি করেন দেশের একমাত্র ভাস্কর্য বাড়ি। শুধু কি তাই? আপ্রাণ চেষ্টায় সেই বাড়িতেই তিনি গড়ে তুলেছেন ভাস্কর্য কেন্দ্র চট্টগ্রাম। বাড়িটিতে ঢুকতে গেলেই যে কারো মনে হবে তিনি কোনো ভাস্কর্য প্রদর্শনী কেন্দ্রে এসেছেন। কারণ বাড়ির এক ইঞ্চি জায়গাও নেই যেখানে এই স্বপ্নচারী ভাস্করের হাতের স্পর্শ লাগেনি। কিন্তু ভাস্কর্য বাড়ির স্বপ্ন পূরণের পথটা তত মসৃণ ছিল না। আশির দশকের শুরুতে চৌধুরীহাটের এক বাড়িতে অবস্থান করে শিল্পকর্মে মনোনিবেশ করেন অলক রায়। কিন্তু তার মাথার মধ্যে শুধু কিলবিল করছিল কিভাবে এখানে কাজের স্টুডিও বানাবেন? প্রকৃতির সঙ্গে নিজেকে বিলিয়ে দিয়ে নিজের সৃষ্টিশীলতাকে সমৃদ্ধ করবেন? নিজের মধ্যেকার প্রচেষ্টাকে তিনি প্রাথমিক রূপ দিতে সক্ষম হন ১৯৯৫ সালে। ৭ শতক জমি কিনে নেন সেই গন্ডগ্রামেই। তারপর নানা চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে বাড়িও তৈরি করেন সেখানে। এরই মাঝে চলতে থাকে নিজের শিল্প চর্চাও। পাশাপাশি গ্রামের মেঠোপথে ঘুরে ঘুরে মিশে যান প্রকৃতির সঙ্গে, মানুষের সঙ্গে। পরিবেশ বাঁচানোর আন্দোলনও গড়ে তোলেন। ২০১৬ সালে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অবসরে যান ভাস্কর অলক রায়। কিন্তু নান্দনিকতা-সৃষ্টিকর্ম থেমে থাকেনি, বরং তা যেন আরো বেড়েই চলেছে। দেশ-বিদেশে তার অনেক বিখ্যাত ভাস্কর্য সমাদৃত হয়েছে। প্রশংসা-পুরস্কারেও ভূষিত হয়েছেন। কিন্তু এই শিল্পীর সমস্ত প্রেম যেন এই বাড়িটিকে ঘিরে। এই যে তিলে তিলে গড়ে তুলেছেন ভাস্কর্য কেন্দ্র চট্টগ্রাম, সেখানেই ১০ ভাস্করের অংশগ্রহণে আয়োজন করা হয়েছে ১০ দিনব্যাপী ভাস্কর্য প্রদর্শনী ও সিরামিক সিম্পোজিয়াম। আজ শনিবার বিকেলে অলক রায়ের স্টুডিও প্রাঙ্গণে এ প্রদর্শনী ও ভাস্কর্য কেন্দ্র চট্টগ্রামের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হচ্ছে। আর এই শিল্পীর শিল্পকর্মের রস আস্বাদনসহ উদ্বোধনীতে থাকছেন আরেক বাচিক ও অভিনয় শিল্পী, সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর। অনুষ্ঠানে আরো অনেক শিল্পবোদ্ধারাও উপস্থিত থাকবেন। ১০ দিনের এই প্রদর্শনীতে অংশগ্রহণকারী ১০ ভাস্কর হলেন মুক্তি ভৌমিক, বেগম সালমা, রেহেনা শিলা, মো. আরমান হোসেন অনিক, শান্তুনু মন্ডল, শ্রী দেবা প্রসাদ, আনোয়ারুল হক লিটু, সারোয়ার জাহান ও মো. রুহুল কুদ্দুস। ভাস্কর অলক রায় ভোরের কাগজকে বলেন, সৃষ্টির শুরু থেকেই মানুষ তার জীবনকে সুন্দর ও অর্থবহ করার প্রয়াস চালিয়ে আসছে নানাভাবে। সৃষ্টিশীল মানুষের উদ্ভাসিত বহুবিধ দর্শন ও প্রযুক্তি পৃথিবীকে ক্রমাগত পাল্টে দিচ্ছে। সেই পরিবর্তনের ধারাবাহিকতায়, দৃশ্যকলার জগতে একদা যাকে ভাস্কর্য বলে অভিহিত করা হতো সেটিই আজ আখ্যায়িত হচ্ছে ত্রিমাত্রিক শিল্পকর্ম নামে। নানাবিধ রূপান্তর ও বিবর্তনের মধ্যেও এই অঞ্চলে মৃত্তিকা শিল্পের সৃজনশীল অগ্রযাত্রা চলমান রয়েছে। আমরা মনে করি, বর্তমানের এই আধুনিক যুগেও আমাদের নিজস্ব পোড়ামাটি বা সিরামিক মাধ্যমের প্রয়োজন একেবারে ফুরিয়ে যায়নি। সেই ভাবনা থেকেই নবগঠিত ভাস্কর্য কেন্দ্র চট্টগ্রাম দেশের ১০ জন প্রতিভাবান ভাস্করের অংশগ্রহণে ১০ দিনব্যাপী এই সিম্পোজিয়াম তথা প্রায়োগিক কর্মশিবিরের আয়োজন করেছে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App