×

পুরনো খবর

আওয়ামী লীগ ও বিএনপি উভয় দলেই একাধিক সম্ভাব্য প্রার্থী

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৬ অক্টোবর ২০১৮, ১১:০৮ এএম

আওয়ামী লীগ ও বিএনপি উভয় দলেই একাধিক সম্ভাব্য প্রার্থী
একাদশ সংসদ নির্বাচনে চট্টগ্রাম-৬ (রাউজান) আসনে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি উভয় দলেই একাধিক সম্ভাব্য প্রার্থী মনোনয়ন দৌড়ে রয়েছেন। এ আসনে বর্তমান এমপি আওয়ামী লীগের এ বি এম ফজলে করিম চৌধুরী। ২০০১ সালের সংসদ নির্বাচনে সারা দেশে যখন আওয়ামী লীগের ভরাডুবি হয় তখন যে কটি আসনে দলটি জয়লাভ করেছিল তার মধ্যে ছিল চট্টগ্রাম-৬ আসন। সেই নির্বাচনের পর থেকে ফজলে করিম চৌধুরী তার বিজয় ধরে রাখতে সক্ষম হয়েছেন নিজের সাংগঠনিক দক্ষতা ও কর্মগুণে। তাই এখন পর্যন্ত ফজলে করিম চৌধুরীর বিকল্প নেই রাউজানের জন্য। তিনি ২০০১ ও ২০০৮ সালের নির্বাচনে বিপুল ভোটে পরাজিত করেন যুদ্ধাপরাধের দায়ে ফাঁসি হওয়া বিএনপি নেতা সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর ছোট ভাই চট্টগ্রাম উত্তর জেলা বিএনপির সেসময়ের সভাপতি গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরীকে। দীর্ঘদিন ধরে স্থানীয় রাজনীতিতে সাকা পরিবারের বিশেষ প্রভাব থাকা রাউজানে অবস্থান গড়ে তুলতে অনেক কাঠখড় পোড়াতে হয় আওয়ামী লীগকে। ২য় সংসদ নির্বাচন থেকে ৮ম সংসদ নির্বাচনের আগ পর্যন্ত রাউজান আসনটি সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর পরিবারের দখলে ছিল। এ আসন থেকে কয়েক দফা সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন সালাউদ্দিন কাদের ও তার ছোট ভাই গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরী। রেলপথ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি হিসেবেও দায়িত্ব পালন করছেন এই সংসদ সদস্য। রাউজানে মোট ৮৪টি ভোট কেন্দ্র রয়েছে। এখানে নারী-পুরুষ মিলে মোট ভোটার রয়েছেন ২ লাখ ৭৬ হাজার ৪৮২ জন। আগামী সংসদ নির্বাচনে এ বি এম ফজলে করিমের পাশাপাশি এ আসন থেকে মনোনয়ন চান আওয়ামী লীগ ও যুবলীগ থেকে আরো কয়েক জন হেভিওয়েট প্রার্থী। এ তালিকায় রয়েছেন যুবলীগের চেয়ারম্যান ওমর ফারুক চৌধুরী বা তার স্ত্রী শেখ সুলতানা, কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও চট্টগ্রাম উত্তর জেলা কমিটির সদস্য মাহফুজুল হায়দার চৌধুরী রোটন, সাবেক গণপরিষদ সদস্য প্রয়াত আওয়ামী লীগ নেতা আবদুল্লাহ-আল হারুনের মেয়ে লুবনা হারুন। কিন্তু এই আসনে ফজলে করিমকেই আওয়ামী লীগের মনোনয়ন দেয়ার সম্ভাবনা বেশি বলে জানিয়েছেন স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও এলাকাবাসী। রাউজান উপজেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি কামাল উদ্দিন আহমেদ ভোরের কাগজকে বলেন, বতর্মান এমপি উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড ও সাংগঠনিক দক্ষতার যে প্রমাণ দিয়েছেন তাতে আগামী নির্বাচনে তার প্রতিদ্বদ্বী আর কেউ হতে পারেন না। তিনি (ফজলে করিম) সংসদ সদস্য হওয়ার পর থেকেই অনুন্নত রাউজানের দৃশ্যপট পাল্টে যেতে শুরু করে। তার অভ‚তপূর্ব উন্নয়ন এবং সন্ত্রাস নির্মূলে গৃহীত নানা পদক্ষেপের কারণে এলাকার মানুষের মধ্যে স্বস্তি এসেছে। অন্যদিকে তার সাংগঠনিক দক্ষতার কারণে উপজেলার ১৪ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান, পৌরসভার ৯ ওয়ার্ডের সাধারণ কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত তিন ওয়ার্ডের নারী কাউন্সিলর নির্বাচিত হয়েছেন দলের নেতাকর্মীরা। এ ছাড়া রাউজানের প্রতিটি ইউনিয়নে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগের কমিটি গঠিত হয়েছে। তিনি বলেন, ফজলে করিমের সঙ্গে মনোনয়ন দৌড়ে দলের আর কোনো নেতা টিকতে পারবেন না। কোনো সময় এলাকায় দেখা যায়নি নির্বাচনের সময় তারা এসে যদি মনোনয়ন নিতে চান তা কি এলাকার মানুষ মেনে নেবেন? একক প্রার্থী হিসেবে তিনি দিন-রাত নির্বাচনী এলাকা চষে বেড়াচ্ছেন। মাসের অধিকাংশ সময় দলের সভা-সমাবেশ ও বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকেন তিনি। তবে বর্তমান এমপির বিরুদ্ধে তার বিরোধীপক্ষের লোকজনের অভিযোগ, পরপর তিনবার এমপি নির্বাচিত হওয়ায় ফজলে করিম চৌধুরীর একাধিপত্য তৈরি হয়েছে। এদিকে আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে রাউজানের মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও চট্টগ্রাম উত্তর জেলা কমিটির সদস্য মাহফুজুল হায়দার চৌধুরী রোটন। তিনি বলেন, দীর্ঘদিন ধরে রাজনীতি করছি। স্কুল ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক থেকে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছি। তবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রাউজান থেকে নৌকা প্রতীকে যাকে মনোনয়ন দিবেন তার হয়েই কাজ করব। বর্তমান সংসদ সদস্য ফজলে করিম চৌধুরী ভোরের কাগজকে বলেন, দল থেকে কে মনোনয়ন পাবে, সেটি ঠিক করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। নেত্রীর সিদ্ধান্তই চ‚ড়ান্ত। তিনি যাকে মনোনয়ন দেবেন তার পক্ষেই কাজ করব। তিনি বলেন, ১৯৯৬ সাল থেকে আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে সক্রিয় হওয়ার পর দীর্ঘ এতগুলো বছর আমি রাউজানবাসীর উন্নয়নে কাজ করে গেছি। আমি এলাকাবাসীর কাছে ওয়াদা করেছিলাম রাউজানকে সন্ত্রাসমুক্ত করব এবং অবহেলিত রাউজানের উন্নয়ন করব। আমি আমার প্রতিটি ওয়াদা রক্ষা করেছি। বর্তমান সরকার আমলে ২৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করে এলাকায় লোডশেডিংমুক্ত করেছি। বর্তমান সরকারের আমলে সব মিলিয়ে আমি দেড় হাজার কোটি টাকার বেশি উন্নয়ন কাজ করেছি। এদিকে দলীয় কোন্দলে এবং নানা কারণে কোণঠাসা বিএনপির এ আসনে বেশ কয়েক জন সম্ভাব্য প্রার্থী মনোনয়ন দৌড়ে রয়েছেন। দলের একটি অংশ চাইছে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে মৃত্যুদণ্প্রাডপ্ত সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী (সাকা) পরিবারের সদস্যদের কারো ওপর ভরসা রাখতে। বিএনপি থেকে সাকা চৌধুরী পরিবারের যে কেউ প্রার্থী হতে পারেন এ আসনে। এ ক্ষেত্রে তার ভাই গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরী, তার স্ত্রী ফরহাত কাদের চৌধুরী ও তার ছেলে হুম্মাম কাদের চৌধুরীর নাম শোনা যাচ্ছে। সাকা পরিবারের সঙ্গে বর্তমান এমপি ফজলে করিমের পরিবারের আত্মীয়তা রয়েছে। তারা পরস্পর সম্পর্কে চাচাতো-জেঠাতো ভাই। তাই কাঁটা দিয়ে কাঁটা তুলতে সাকা পরিবারের কোনো সদস্যকে প্রার্থী করতে চায় দলের এ অংশটি। তবে ভিন্নমত রয়েছে বিএনপি নেতাকর্মীদের আরেকটি অংশের। তাদের মতে, রাউজানে যোগ্য প্রার্থী হতে পারেন সাবেক এমপি গোলাম আকবর খোন্দকারই। মনোনয়ন পেতে মাঠে সক্রিয় রয়েছেন দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা গোলাম আকবর খোন্দকার। তিনি বিএনপির প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। এক ধরনের স্বচ্ছ রাজনীতিবিদ হিসেবে ইমেজ আছে তার। গিয়াস কাদের ও গোলাম আকবর দুজনই সাবেক সংসদ সদস্য। তবে কেউই এখন এলাকায় থাকেন না। মাঝে মাঝে শহরভিত্তিক কিছু সভা, বিবৃতি সংবাদপত্রে দেখা গেলেও দুজনের কেউই এলাকায় সভা-সমাবেশ করতে পারেন না। সম্ভাব্য প্রার্থী গোলাম আকবর খোন্দকার বলেন, দল যদি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে তাহলে অবশ্যই আমাকে নির্বাচন করতে হবে। যদি অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ নির্বাচন হয় তাহলে ধানের শীষের বিজয় অনিবার্য। রাউজান থেকে আমি দলীয় মনোনয়ন নিয়ে নির্বাচন করব। তবে দল যাকে যোগ্য ও জনসমর্থিত বলে মনে করবে তাকেই মনোনয়ন দেবে। প্রসঙ্গত, ১৯৭০ সালের নির্বাচনে রাউজান আসন থেকে নির্বাচিত হয়েছিলেন আওয়ামী লীগ প্রার্থী দৈনিক আজাদী সম্পাদক অধ্যাপক মো. খালেদ। ১৯৭৩ সালের নির্বাচনে ভাসানী ন্যাপের প্রার্থী হিসেবে বর্তমান বিএনপি নেতা আবদুল্লাহ আল নোমানকে পরাজিত করে পুনরায় সাংসদ নির্বাচিত হন অধ্যাপক খালেদ। ১৯৭৯ সালের নির্বাচনে মুসলিম লীগ প্রার্থী বিএনপি নেতা সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী আওয়ামী লীগ প্রার্থী আবদুল্লাহ আল হারুনকে পরাজিত করে নির্বাচিত হন। ১৯৮৬ সালের নির্বাচনে সালাউদ্দিন কাদের জাতীয় পার্টি থেকে নির্বাচন করে আওয়ামী লীগ প্রার্থী চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের প্রয়াত সভাপতিও সাবেক মেয়র এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরীকে পরাজিত করে নির্বাচিত হন। ১৯৮৮ সালে সালাউদ্দিন কাদের জাতীয় পার্টি থেকে পদত্যাগ করলে দলটির প্রেসিডিয়াম সদস্য জিয়াউদ্দিন আহমদ বাবলু এ আসন থেকে নির্বাচন করে জয়ী হন। ১৯৯৬ সালের ‘বিতর্কিত’ নির্বাচনে অংশ নিয়ে বিনা প্রতিদ্ব›িদ্বতায় জয়ী হন বিএনপি নেতা গোলাম আকবর খোন্দকার। এরপর থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন এ বি এম ফজলে করিম।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App