×

ফিচার

সংসার টেকানো একা নারীর দায় নয়

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০১ অক্টোবর ২০১৮, ০২:৪৮ পিএম

সংসার টেকানো একা নারীর দায় নয়
জানিস তোর রাকিব ভাই যা পায়েস খেতে পছন্দ করে। আমি এজন্য সবসময় পায়েস বানিয়ে ফ্রিজে রাখি। হাসতে হাসতে গড়িয়ে পরে সুমী। কপট রাগ দেখায় ছন্দা। তুই যদি আরেকবার রাকিব রাকিব করিস আমাদের এই আড্ডা থেকে তোকে বের করে দেব। আসার পর থেকে রাকিব এ পছন্দ করে রাকিব ও পছন্দ করে। রাকিব এ খায় রাকিব সে খায়। আল্লারে তুই কি খেতে পছন্দ করিস তা বল বাবা। তা না। সারাক্ষণ বরের গল্প। সুমী হাত তোলে, আর একটা কথা বলবো রাকিব নিয়ে। সব ওর ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। থাম। আর না। অনেক হয়েছে। সবার হাসিতে ঝমঝম করে রুম। সবার ওপর ছাপিয়ে যায় সুমীর হাসি। অনেকদিন পর ওরা পাঁচ বন্ধু আড্ডা দিতে বসেছে ছন্দার বাসায়। আড্ডা শেষে যে যার বাড়ি ফিরে যায়। সবার চোখে ভাসে সুমীর ঝলমলে মুখ। কদিন পর ছন্দা ফোন দেয় তানিয়াকে। একটু আসতে পারবি সুমীর বাসায়। তানিয়া যায় সুমীর বাসায়। যেয়ে অবাক। এক সপ্তাহে শুকিয়ে অর্ধেক সুমী। চোখের নিচে কালি। ওদের দেখে কেঁদে ফেলে সুমী। রাকিব পরকীয়া করছে। মানে আকাশ ভেঙে পড়ে যেন ওর মাথায়। সুমীর রাকিব? কিভাবে সম্ভব? সুমী জানায়, ক’দিন আগে হঠাৎ জানতে পারি অফিসের এক কলিগের সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েছে রাকিব। মেয়েটা ওর জুনিয়র। বিবাহিত। একটা মেয়েও আছে। আমাকে বলেছে মেয়েটাকে বিয়ে করতে চায় সে। হাইমাউ করে কাঁদে সুমী। আমি কি বোকা মেয়ে বল। কিছুই বুঝতে পারিনি। সারাদিন ওর মন পাওয়ার জন্য কত কি করতাম। ভাবতাম ও আমাকে অনেক ভালবাসে। আর আজ দেখ। ওরা তিন জন চুপ করে বসে থাকে। যে মেয়ের মুখে সারাক্ষণ বরের গল্প। সেই মেয়ে আজ প্রতারিত! সময় যেন থমকে যায়। ওদের মনের মধ্যে ঝড় ওঠে। একদিন সব ফেলে মেয়েদের হোস্টেলে যেয়ে ওঠে সুমী। চাকরিটা ভাগ্যিস ছিলো ওর। তাই বেরিয়ে যেতে পেরেছে। পাঠক, ওপরে ঘটনাটা গল্প নয়। সত্যি। শুধু নামগুলো বদলে ফেলা হয়েছে। বেশ কিছুদিন আগে কুষ্টিয়া থেকে এক পরিচিত ভদ্রলোকের স্ত্রী এক রাতে ফোন দিয়ে বলেন, আমাকে বাঁচান। তার স্বামী সবুজ (ছদ্মনাম) পরকীয়া করে। তিনি বাধা দেয়ায় তাকে ছেলেসহ রাস্তায় বের করে দিয়েছে। এই শীতের রাতে তিনি একা দাঁড়িয়ে আছেন রাস্তায়। তার যাওয়ার কোনো জায়গা নেই। বাবা মা মারা গেছেন। ভাই জায়গা দেবে না। তিনি বলেন, কই যাবো আপা আমি এখন? আপনি তাকে বলেন ও মেয়েটাকে বিয়ে করুক। আমি কিছু বলবো না। ওই ঘরের এক কোণে পড়ে থাকব। তার আর্তনাদ করা কথাগুলো এ নো কানে বাজে। তিনি নানা অপমান সয়ে এখনো আছেন সেই ঘরে। স্বামী শুধু বাচ্চার খরচ দেন। কেমন করে এ বোকা মেয়েটার দিন কাটে সেই জানে। কত ঘরে কত নির্যাতন চলছে। কোনোটা শারীরিক কোনোটা বা মানসিক নির্যাতন। কেউ প্রকাশ করে, কেউ বা সারাজীবন মুখ বুঁজে সয়ে যায়। বোকা মেয়েরা তার জীবন নয়, সংসারটাকেই প্রাণ ভেবে এখানে জীবন কাটিয়ে দেয়। প্রতিদিন খবরের কাগজে উঠে আসে স্বামীর হাতে স্ত্রী খুন। দেখে দেখে চোখ সয়ে যায় আমাদের। প্রতিদিন মন মরে যায় হাজারো মেয়ের। দিনদিন তাদের বিশ্বাস উঠে যায় বিশ^ সংসার থেকে। মানুষ থেকে। এ প্রসঙ্গে নারীবাদী কর্মী লায়লা করিম বলেন; যদি দুজন মানুষের মধ্যে মিল না হয়, তাদের যদি একসঙ্গে বাস করতে ইচ্ছে না করে তবে আলোচনা করে দুজনের সরে যাওয়া উচিত! কোনোভাবেই প্রতারণা বা মিথ্যার আশ্রয় নেয়া উচিত নয়। দুজন আপোসে গেলে সংসারে হত্যা, গুম, নির্যাতন এসব অনেকটাই কমবে। তার মতে মেয়েদের নিজের পায়ে দাঁড়ানো শিখতে হবে। জেন্ডার স্পেশালিস্ট আয়শা আকতার কণা বলেন; সামাজিকীকরণের পরিবর্তনটা অনেক জরুরি। একটা মেয়ের ওপেন জায়গায় কাজের অভিজ্ঞতা একটা ছেলের থেকে অনেক পরে হয়। আমার ভাই ছয় বছর বয়স থেকে মানুষের সঙ্গে কথা বলা আর মেশা শুরু করে, আমি করি তার বিশ বছর পর থেকে। ফলে দেখা যায়, ছেলেরা এগিয়ে থাকে। সম্পর্কের ক্ষেত্রে মেয়েটি মনে করে এটি বন্ধুত্ব, আর পুরুষটি জানে এটি খেলা, অথবা টাইম পাস। ফলে মেয়েটি প্রতারণার শিকার হয়। সমাজের পক্ষপাতিত্বতো আছে পুরুষের প্রতি। পুরুষটি জানে সে ঠাঁই পাবে, আর মেয়েটি পাবে না। মেয়েটিও এ কথা জানে। এমন অন্যায় পক্ষপাতিত্বে মেয়েরা আবারো পিছিয়ে পড়ে। এ বিষয়ে সচেতনতা বাড়াতে হবে। সমাজ গবেষক ড. খ ম রেজাউল করিম বলেন, বর্তমান প্রতিযোগিতার যুগে মানুষের মধ্যে ধৈর্য শক্তি কমে যাচ্ছে। জীবন হয়ে উঠছে অস্থির। ফলে যে কোনো সম্পর্ক টিকিয়ে রাখার জন্য যে পরিমাণ সময় দেয়া বা সহনশীলতা দরকার তা মানুষ দিতে পারছে না। ফলে ব্যক্তি ও সামাজিক সম্পর্কের মধ্যে অবনতি ঘটছে। এর প্রভাব পড়ছে সমাজে, রাষ্ট্রে। এ ছাড়া আকাশ সংস্কৃতির প্রভাব, কর্মক্ষেত্রে ব্যস্ততা, স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে বনিবনার অভাব, মাদকাসক্তি অনেকাংশে দায়ী বলে মনে করেন তিনি। এ ছাড়া ভার্চুয়াল জগত মানুষকে আজ অনেকটা একা আর স্বার্থপর করে দিচ্ছে বলে মনে করেন তিনি।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App