‘স্বীকৃতি শিল্পীর কাজের ক্ষেত্রে প্রভাব ফেলে বলে মনে হয় না’
কাগজ প্রতিবেদক
প্রকাশ: ২৯ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ০৫:০৯ পিএম
বাংলাদেশের নাট্যাঙ্গনের তরুণ প্রতিভাবান নাট্যজন বাকার বকুল। সম্প্রতি থিয়েটার আর্ট ইউনিট প্রবর্তিত ‘এস এম সোলায়মান প্রণোদনা-২০১৮’ অর্জন করেছেন তিনি। এই প্রসঙ্গ নিয়ে আলাপাচারিতায় ভোরের কাগজের মুখোমুখি হয়েছিলেন এই সৃজনশীল নাট্য-তরুণ। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন শাহনাজ জাহান
থিয়েটার কেন করেন?
প্রথমত, আমার নিজের জন্য থিয়েটার আমার প্রয়োজন হয়। দ্বিতীয়ত, যেহেতু আমি রাজনীতিবিদ নই, কিন্তু আপাদমস্তক একজন রাজনৈতিক মানুষ সে জন্য থিয়েটার করি। কোথাও একটা দায়বদ্ধতা কাজ করে বৈকি।
আপনি কি মনে করেন থিয়েটারের মধ্য দিয়ে সমাজ পরিবর্তন সম্ভব?
জানি না। তবে মানুষের মন পরিবর্তন সম্ভব। সেখানে সমাজ পরিবর্তনের যোগসূত্র থাকতে পারে।
থিয়েটার কী জীবিকা নির্বাহের মাধ্যম হওয়া উচিত?
থিয়েটারপ্রেমী মানুষের জন্য অবশ্যই সেটা হওয়া উচিত। যার যে কাজ ভালো লাগে সেটাই তার জীবিকা নির্বাহের প্রধান ক্ষেত্র হওয়া উচিত বলে আমি মনে করি। না হলে জীবন অস্বস্তিকর, ভারী থেকে ভারী হয়ে উঠে। জীবনব্যাপী সে ভার বহন করা কঠিন। দুর্ভাগ্য যে, রাষ্ট্রকাঠামোতে আমাদের বেড়ে ওঠা সেখানে এমন ভাবনা অলিক। রাষ্ট্র এখানে সভ্য হয়ে ওঠেনি।
এই সময়ে বাংলাদেশের নাট্যচর্চার প্রধান সংকট কী বলে মনে করেন?
এই সময়ে যারা নাট্যচর্চা করেন এদের অধিকাংশই বিভ্রান্ত। এ দেশে নাট্যচর্চা অন্য কোনো লোভনীয় ক্ষেত্রকে সমৃদ্ধ করার কিংবা সেখানে পৌঁছানোর টুলস হিসেবে ব্যবহৃত হয়। স্বল্প সময়ে সফলতার শিখরে পৌঁছানোর এক অস্বাস্থ্যকর প্রতিযোগিতায় দৌড়ে হাঁপিয়ে ওঠা দুর্বল মানুষ নাট্যচর্চায় বেশিদিন থাকে না। চিন্তাশীল, সুসাস্থ্যকর মানসিকতার মানুষ নাট্যচর্চায় বড়ই অভাব। থিয়েটার একা করার শিল্প নয়, অনেকগুলো মানুষ মিলে করার যৌথ শিল্প মাধ্যম। এখানে প্রকৃত নাট্যশিল্পির সংকট রয়েছে। আর যে সমাজে আমরা বাস করি সেটাও সংস্কৃতিচর্চার জন্য খুব বেশি উপযোগী বলে আমার মনে হয় না।
বাংলাদেশের সামগ্রিক নাট্যচর্চা নিয়ে অল্প কথায় আপনার মূল্যায়ন শুনতে চাই?
নানা ধরনের নাটকের চর্চা এ দেশে হয়েছে। বিশেষ করে নাট্য আঙ্গিকের দিক থেকে। ক্লাসিক, দেশজ, পলিটিক্যাল, অ্যাবসার্ড কিংবা ফিউশানধর্মী বিভিন্ন নাটক। এগুলো আমাদের নাট্যচর্চাকে সমৃদ্ধ করেছে। বৈচিত্র্য আমার কাছে সব সময় সম্পদ বলে মনে হয়। সেটা আমাদের নাট্যচর্চায় দাপটের সঙ্গেই রয়েছে। একাডেমিকভাবে বেশ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে নাট্যকলা বিভাগ আছে। এটাকে আমি স্বাধিনতা পরবর্তী সময়ে নাট্যচর্চার অন্যতম বড় অর্জন বলেই মনে করি। দর্শনীর বিনিময়ে নাটক দেখার অভ্যাসও গড়ে উঠেছে দর্শকের মধ্যে, সেও কম কি। তবে থিয়েটারের ক্ষেত্রে রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতার দেন্যও এ যাবৎ চোখে পড়ার মতো। সঠিক পৃষ্ঠপোষকতা পেলে এতদিনে অ্যামেচার থিয়েটার চর্চা প্রফেশনালিজমের দিকে অগ্রসর হতে পারত। থিয়েটারের নীতিনির্ধারকরা সে বার্তা রাষ্ট্রের কানে সঠিকভাবে পৌঁছাতে পারেনি। যদি বার্তা পৌঁছে থেকেও থাকে আদায় করে নিতে তারা সক্ষম হয়নি। এতসবের পরও এ দেশের নাট্যচর্চা সমৃদ্ধির পথেই এগোচ্ছে বলেই আমি মনে করি।
সম্প্রতি ‘এস এম সোলায়মান প্রণোদনা-২০১৮’ গ্রহণ করেছেন। পদক বা স্বীকৃতি শিল্পীর কাজে কতটা অনুপ্রেরণা জোগায় বলে আপনি মনে করেন?
যে কোনো স্বীকৃতিই আনন্দদায়ক। আমার ক্ষেত্রেও এর ব্যতিক্রম ঘটেনি। আমার ভালো লেগেছে। আমি সম্মানিতবোধ করেছি। তবে এরকম স্বীকৃতি শিল্পীর কাজের ক্ষেত্রে প্রভাব ফেলে বলে আমার মনে হয় না। অন্যের কথাতো বলতে পারি না। আমার ক্ষেত্রে হয় না। হ্যাঁ তবে একটা অনুপ্রেরণা তো দেয়ই। এই যেমন বন্ধুবান্ধব-স্বজন কিংবা বাবা-মায়ের হাসিমুখ আমাকে আনন্দ দেয়। সেটা অবশ্যই আমার জন্য একধরনের অনুপ্রেরণা। তবে আমার কাজের রেখাটা এর থেকে অনেক দূরেই অবস্থান করে। স্বীকৃতি পেয়ে আমার কাজের গতি বেড়ে যাবে কিংবা কমে যাবে বিষয়টা আমার কাছে হাস্যকরও লাগে খানিকটা।
বাকার বকুল