×

জাতীয়

ভাইরাসের ধরন বদলে বাড়ছে ডেঙ্গুর প্রকোপ

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৮ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ০১:০০ পিএম

ভাইরাসের ধরন বদলে বাড়ছে ডেঙ্গুর প্রকোপ
রাজধানীসহ সারা দেশেই এখন ডেঙ্গু আতঙ্ক। ভাইরাসের ধরন বদলে গিয়ে ক্রমেই বাড়ছে ডেঙ্গু জ¦রের প্রকোপ। আগস্ট মাসের তুলনায় চলতি মাসের ২৭ দিনে ডেঙ্গু রোগে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েছে সাত শতাধিক। এ ছাড়া গত চার মাসে মশাবাহিত এই রোগে ১৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে ৯ জনই শিশু। যারা দ্বিতীয়বার ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছে তাদের মৃত্যুঝুঁকি বেশি বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা। এ নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তারাও। সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, ১৬ জনের মধ্যে অধিকাংশই মারা গেছেন ‘হেমোরেজিক শক’-এর কারণে। এই পরিস্থিতিতে রক্তক্ষরণ হয়। তাই জ্বর হলে কোনো প্রকার অবহেলা না করে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। বছরের শুরুতে ডেঙ্গুর প্রকোপ কম থাকলেও জুন মাস থেকে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়তে থাকে। জুন মাস থেকেই রোগীর মৃত্যু শুরু হয়। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের তথ্য অনুযায়ী জুনে ৩ জন এবং জুলাইয়ে ৪ জন ডেঙ্গু রোগীর মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে তিনজনই শিশু। আগস্ট মাসে ৬ জন মারা গেছে। এদের মধ্যে ৪ জন শিশু। সেপ্টেম্বর মাসে (২৭ তারিখ পর্যন্ত) তিন জন মারা গেছে। এদের মধ্যে দুজন শিশু। ডেঙ্গুর প্রকোপ এবং মৃতের সংখ্যা বাড়ায় দেশব্যাপী মানুষের মনেও আতঙ্ক বাড়ছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশে ডেঙ্গু আক্রান্তদের দেহে এই রোগের ভাইরাসের চারটি স্ট্রেন বা প্রকার পাওয়া যায়। অর্থাৎ এডিস মশা থেকে চার ধরনের ভাইরাস মানুষের শরীরে আসতে পারে। স্ট্রেন এক-দুই-তিন ও চার। ২০০০ সালে স্ট্রেন-৩-এর প্রাদুর্ভাব বেশি ছিল। তাই মৃত্যুও বেশি ছিল। এ বছরও সেই স্ট্রেন-৩-এর প্রাদুর্ভাব বেশি পাওয়া যাচ্ছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (রোগ নিয়ন্ত্রণ) অধ্যাপক ডা. সানিয়া তাহমিনা ভোরের কাগজকে বলেন, বিষয়টি আমাদেরও ভাবিয়ে তুলেছে। যেসব শিশু ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে তারা খুবই গুরুতর অবস্থায় হাসপাতালে এসেছিল। এডিস মশার ভাইরাস চার ধরনের, যাকে সেরোটাইপ বলা হয়। তবে কোন সেরোটাইপে কে আক্রান্ত হলো, কোন সেরোটাইপের জটিলতা কেমন তা নিয়ে খুব বেশি গবেষণা না থাকায় ভাইরাসের ধরন কেন বদলে যাচ্ছে তা বোঝা যাচ্ছে না। এ ব্যাপারে গবেষণা হওয়া প্রয়োজন। রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ড. মাহমুদুর রহমান ভোরের কাগজকে বলেন, ডেঙ্গুর ভাইরাসের ধরন পাল্টেছে। আর আক্রান্ত রোগীদের হাসপাতালে আনতেও অনেক দেরি হয়ে যায়। গবেষণায় দেখা গেছে, যে টাইপের এডিস মশায় কামড়ানোর ফলে কারও একবার ডেঙ্গু হয় সেই একই টাইপের ভাইরাস থেকে একই ব্যক্তি দ্বিতীয়বার আক্রান্ত হবেন না। তবে এডিস মশার বাকি তিনটি টাইপের ভাইরাস থেকে তিনি আবারো আক্রান্ত হতে পারেন। প্রিভেন্টিভ মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা. লেলিন চৌধুরী বলেন, ডেঙ্গু একবার হলে আর হবে না এর কোনো নিশ্চয়তা নেই। বরং দ্বিতীয়বার হলে তার মাত্রা বেশি হয়। সে ক্ষেত্রে রোগটি জটিল হতে পারে। তবে একই টাইপের ভাইরাস থেকে সাধারণত দ্বিতীয়বার ডেঙ্গু হয় না। জানা যায়, ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে যারা মারা গেছে তাদের নমুনা সংগ্রহ করে একটি গবেষণা করছে আইইডিসিআর। শিগগিরই গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করা হবে। কন্ট্রোল রুমের তথ্য অনুযায়ী, দেশব্যাপী ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্তের সংখ্যা ৫ হাজার ৩২৫ জন। এর মধ্যে জানুয়ারি মাসে ২৬, ফেব্রুয়ারিতে ৭, মার্চে ৫, এপ্রিলে ১৪, মে ৩৫, জুনে ২৭৬, জুলাইয়ে ৮৮৭ ও আগস্ট মাসে এক হাজার ৬৬৬ জন ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন। সেপ্টেম্বর মাসে (২৭ তারিখ পর্যন্ত) আক্রান্তের সংখ্যা ছিল দুই হাজার ৪০৯ জন। গতকাল ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে নতুন করে ভর্তি হয়েছেন ৪৪ জন। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০০২ সালে সর্বোচ্চ ৬ হাজার ২৩২ জন ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়। তবে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে প্রথম মৃত্যু হয় ২০০০ সালে। ওই বছর ৯৩ জনের মৃত্যু হয়। ২০১৬ সালে হঠাৎ করে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা ৬ হাজার ৬০ জনে বৃদ্ধি পায়। সে বছর ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয় ১৪ জনের। ২০১৭ সালে আক্রান্তের সংখ্যা ২ হাজার ৭৬৯ জন ও মৃতের সংখ্যা ৮ জন।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App