×

জাতীয়

ফরিদপুরে প্রসূতির মৃত্যু; দুই লাখ ৭৫ হাজার টাকায় মীমাংসা!

Icon

কাগজ অনলাইন প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৫ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ০৮:৫৯ পিএম

ফরিদপুরে প্রসূতির মৃত্যু; দুই লাখ ৭৫ হাজার টাকায় মীমাংসা!
ফরিদপুরের বোয়ালমারী উপজেলা সদরের মোল্লা আহম্মেদ হোসেন মেমোরিয়াল ক্লিনিক নামে একটি বেসরকারি হাসপাতালে গতকাল সোমবার রাত সাড়ে নয়টার দিকে এক প্রসূতির মৃত্যু হয়েছে। একটি কন্যা সন্তানের জন্ম দিয়ে পৃথিবী থেকে বিদায় নেয় ওই মা। অপরদিকে প্রসূতির মৃত্যু ঘটনা নিয়ে দুই লাখ ৭৫ হাজার টাকার বাণিজ্য হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। ক্লিনিক ও রোগীর স্বজনদের সূত্রে জানা গেছে, আলফাডাঙ্গা উপজেলা পাঁচুড়িয়া ইউনিয়নের দেউলী গ্রামের মো. মামুন মোল্লার স্ত্রী সোহাগী বেগম (১৮) সন্তান সম্ভবা ছিলেন। গতকাল সোমবার সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টার দিকে স্বজনরা তাকে ওই ক্লিনিকে ভর্তি করেন। রাত সাড়ে নয়টার দিকে চিকিৎসক ডা. তাপস কুমার বিশ্বাস নামে এক চিকিৎসক তার সিজারিয়ান অপারেশন শুরু করেন। সিজারিয়ান অপারেশনের মাধ্যমে সোহাগী বেগম একটি কন্যা সন্তানের জন্ম দেন। কিন্তু সন্তান জন্ম দেওয়ার পর পরই সোহাগী বেগম মারা যায়। প্রসূতির মৃত্যুর খবরে তার স্বজনরা ক্লিনিক ঘেরাও করে। এ সময় ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ স্থানীয় লোকজন এবং পুলিশের সহায়তা নেয়। পরে সোহাগীর স্বজনদের সাথে ক্লিনিক কর্তৃপক্ষের দুই লাখ ৭৫ হাজার টাকায় আপোষ-মীমাংসা হয় বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ব্যাপারে মোল্লা আহম্মেদ হোসেন মেমোরিয়াল হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের জেনারেল ম্যানেজার (জিএম) রেজাউল করিম রাজা বলেন, প্রসূতি সোহাগীর স্বজনদের সাথে আড়াই লাখ টাকায় মীমাংসা হয়েছে। তারা কথাও কোনো অভিযোগ করবেন না। এতে থানা পুলিশ, সাংবাদিক আনোয়ার হোসেন, চতুল গ্রামের বাবলু শরীফ, উপজেলা কৃষকলীগের সাধারণ সম্পাদক আকরামুজ্জামান মৃধা রুকু বোয়ালমারী ক্লিনিক আ্যন্ড ল্যাব অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মো. মাসুদুর রহমানসহ গণ্যমান্য বক্তিদের উপস্থিতিতে এ মীমাংসা হয়। প্রসূতির স্বজনদের নগদ ৫০ হাজার টাকা এবং দুই লাখ টাকার চেক দেওয়া হয়েছে। বুধবার টাকা নিয়ে চেক ফেরৎ দেওয়ার কথা রয়েছে। সাংবাদিক এবং থানা পুলিশকে ম্যানেজ করার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে সংশ্লিষ্ট চিকিৎসককে। তিনি বলেন, এ রকম ঘটনা আগে কখনো ঘটেনি। হঠাৎ করেই এই মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। এটি নিছকই একটা দুর্ঘটনা। এদিকে অপারেশন করা ডা. তাপস বিশ্বাস বলেন, অপারেশন ঠিক মতই করা হয়েছিল। কোনো সমস্যা হয় নি। কিন্তু দুঃখের বিষয় প্রসূতি সোহাগী সাইলেন্ট হার্ট অ্যাটাকে মারা গেছে। স্বজনদের সাথে ক্লিনিক কর্তৃপক্ষের আলাপ-আলাচনার মাধ্যমে সমস্যার সমাধান করা হয়েছে। সাংবাদিকদের ম্যানেজ করতে সাংবাদিক মো. আনোয়ার হোসেন নামে এক ব্যক্তিকে ক্লিনিক ল্যাব অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মাসুদুর রহমানের সামনে ২৫ হাজার টাকা দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, থানা পুলিশের বিষয়টি এখনো সমাধান হয়নি। বোয়ালমারী থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. শহিদুল ইসলাম বলেন, মাদক মামলার আসামি ধরতে শুকতারা হোটেলের সামনে অভিযানে ছিলাম। ওই ক্লিনিকের সামনে লোকজনের জটলা ও হট্টগোল শুনে ক্লিনিকে গিয়ে প্রসূতির মৃত্যুর বিষয়টি জানতে পারি। পরিস্থিতি শান্ত হলে রোগীর স্বজনদের থানায় লিখিত অভিযোগ দেওয়ার পরামর্শ দিয়ে চলে আসি। এ পর্যন্ত কোনো অভিযোগ পাই নি। আপোষ-মীমাংসার কোনো বিষয় আমার জানা নেই। এদিকে সাংবাদিক মো. আনোয়ার হোসেন ২৫ হাজার টাকা নেওয়ার বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, ১৫ হাজার টাকা কয়েকজনকে দেওয়া হয়েছে। ১০ হাজার টাকা আমার কাছে আছে। এ ব্যাপারে প্রসূতির স্বামী মো. মামুন মোল্লার সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করেও না পাওয়ায় তার বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App