×

জাতীয়

গোয়ালন্দে পদ্মার ভাঙন, ভিটেমাটি হারিয়ে তারা উদ্বাস্তু

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৫ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ০৪:৩০ পিএম

গোয়ালন্দে পদ্মার ভাঙন, ভিটেমাটি হারিয়ে তারা উদ্বাস্তু
‘চাইল পাইছি, তয় হেই চাইল নাইন্দা (রান্না) খাওয়োনের মতো কোনো আহা (চুলা) এহন আর আমাগো নাই। নাক্ষসি গাঙ্গ হগোলতা খাইয়া ফ্যালছে। এহন আমরা ফহির অইয়া গেছি। নাইনে খাড়াইয়া চাইড্ডা চাইল-ডাইল পাইছি। তয় তা নাইন্দা খাওনের উপায় পন্ত নাই।’ এভাবেই বলছিলেন সরকারি ত্রাণ পাওয়া গোয়ালন্দ উপজেলার দৌলতদিয়া ইউনিয়নের নুরু চেয়ারম্যানের গ্রামের আছিরন বিবি (৬৫)। তিনি জানান, স্বামী মারা যাওয়ার পর দুই বছর আগে মেয়ের জামাইয়ের বাড়ি নদীতে ভেঙে যায়। তারপর থেকে মেয়ে-জামাই দৌলতদিয়া ইউনিয়নের ঢল্লাপাড়া গ্রামের তাদের বাড়িতেই থাকত। জামাই দৌলতদিয়া ঘাটে ফেরি করে ঝালমুড়ি বিক্রি করে। এই রোজগারেই চলত তাদের খাওয়া-পরা। এক সপ্তাহ আগে তাদের সেই বাড়িটিও নদীতে বিলীন হয়ে যায়। নদীতে বিলীন হওয়ার আগে টিন, কাঠ, বাঁশসহ প্রয়োজনীয় কিছু জিনিসপত্র নিয়ে আশ্রয় নিয়েছেন নুরু মন্ডলের পাড়া গ্রামের রাস্তার উপর। সেখানে মানবেতর কাটছে তাদের দিন। তার মতো সামেলা বেগম (৩৫), রেহেনা বেগম (৩২), আমেনা বেগম (৩৬), হালিমুন নেছাসহ (৫৫) অনেকেই একই পরিস্থিতির শিকার। তারা জানান, নদীভাঙনে তারা ভিটেবাড়ি সবই হারিয়েছেন। কেউ আত্মীয় বাড়িতে আবার কেউ রাস্তার পাশে ছিন্নমূল হয়ে বসবাস করছেন। তাদের অবশিষ্ট কোনো জায়গা-জমি নেই। সবই হারিয়েছেন। এখন একটা কুঁড়েঘর তৈরি করে তার নিচে আশ্রয় নেবেন সে উপায়ও নেই। এ মুহূর্তে তাদের সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন মাথা গোঁজার ঠাঁই। তারা আরো জানান, সরকারি কোনো খাস জমি যদি তাদের জন্য বরাদ্দ দেয়া হতো তাহলে তারা একটু নিঃশ্বাস ফেলার উপায় খুঁজে পেতেন। জানা যায়, পদ্মার ভয়াবহ তান্ডবে গোয়ালন্দ উপজেলার দেবগ্রাম, দৌলতদিয়া ও ছোট ভাকলা ইউনিয়নের বিস্তীর্ণ এলাকা নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। ভাঙনে হুমকির মুখোমুখি হয়ে পড়ায় অনেকেই তাদের ঘরবাড়ি ভেঙে, গাছপালা কেটে পূর্ব পুরুষের ভিটামাটি ছেড়ে পরিবার-পরিজন নিয়ে বিভিন্ন স্থানে চলে যাচ্ছেন। ঘরবাড়ি হারানো লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ফসলি জমিসহ বসতভিটা হারিয়ে তারা এখন সর্বহারা। অনেকে বিভিন্ন এলাকায় আত্মীয়স্বজনের বাড়িতে গিয়ে আশ্রয় নিয়েছেন। আবার উপায় না পেয়ে অনেকে উপজেলা এলাকার বিভিন্ন সড়ক ও রেলপথের ঢালে আশ্রয় নিয়েছেন। সেখানে পলিথিন ও পাটখড়ি দিয়ে ছাউনি ঘর বানিয়ে পরিবার-পরিজন নিয়ে মানবেতর দিন কাটাচ্ছেন। ভাঙন এলাকা পরিদর্শনে এসে রাজবাড়ী জেলা প্রশাসক মো. শওকত আলী বলেন, খাস জমি বরাদ্দ একটি সময় সাপেক্ষ ব্যাপার। তবে বিষয়টি ভেবে দেখা হবে। এ মুহূর্তে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোকে খাদ্যসামগ্রী দিয়ে সহায়তা করা হচ্ছে। এ ছাড়া তাদের গৃহ নির্মাণের জন্য দ্রুত সময়ের মধ্যে ঢেউটিন বিতরণ করা হবে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App