×

ফিচার

সাইবার নিরাপত্তা ও নারীর হয়রানি

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৪ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ০৩:৪০ পিএম

সাইবার নিরাপত্তা ও নারীর হয়রানি
ফেসবুকের ম্যাসেঞ্জারের মাধ্যমে হয়রানির শিকার হয়নি এমন মেয়ে বোধহয় আমাদের দেশে খুব কমই আছে। অল্প পরিচিত কিংবা শুধু ফেসবুকের মাধ্যমেই পরিচিত এমন ব্যক্তির দ্বারা এই হয়রানির শিকার হলে আমরা সাধারণত তাকে বা তাদের ‘ব্লক’ করি। কিন্তু যারা নিজের খুব পরিচিত এবং তাদের খুব কাছের কেউ তারা যখন ওই একই কাজ করেন এ ক্ষেত্রে অস্বস্তি বোধ হয়। ব্লক করার পরও মানসিক ধকলের মাত্রা হয় কয়েকগুণ বেশি। এমন তিক্ত অভিজ্ঞতার ঘটনার মুখোমুখি হতে হয়েছে আমাকে দুবার। প্রথম ঘটনাটা প্রায় তিন বছর আগের। আমার খুব ঘনিষ্ট বান্ধবীর স্বামী তখন একটি বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলের চাকরি ছেড়ে একটি নতুন পত্রিকার সম্পাদক হিসেবে যোগ দিয়েছেন। তিনি তখন বিজ্ঞাপন এবং লেখা দেয়ার বিষয় নিয়ে আমার সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করেছিলেন। যিনি পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়েন। কথায় কথায় হারাম-হালাল উপার্জনের উদাহরণ টানেন তিনি যে কারো কাছে খুব সহজেই আস্থা অর্জন করতে পারেন। আমার ক্ষেত্রেও সেটি হয়েছে। আমার বান্ধবী তখন দ্বিতীয় সন্তানের মা হয়েছে। সেই সময় তার কিছু শারীরিক সমস্যা হয়। এ বিষয়টি আমি জানতাম। আস্থার সুযোগ নিয়ে বান্ধবীর স্বামী আমাকে একদিন কুরুচিপূর্ণ একটি প্রস্তাব দিয়ে বসলেন। তিনি খুব ধূর্ত। তার এহেন কাজ যে আমি মোটেও হজম করব না তা তিনি টের পেয়ে গিয়েছিলেন মুহ‚র্তের মধ্যেই। বুঝতে পেরেই তিনি আমাকে ব্লক করলেন। এরপর শুরু হলো তার আরেক নাটক। তিনি আমাকে ফোন করে কান্নাকাটি শুরু করলেন। আর অনুরোধ করতে লাগরেন যেন আমি আমার বান্ধবীকে এ বিষয়ে কিছু না বলি। এক পর্যায়ে কথা দেই বিষয়টি আমাদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে। কিন্তু আমার তখন আমার বান্ধবীর মুখটা মনে পড়ছিল। যে মেয়েটি তার স্বামীকে ফেরেস্তার মতো মানে সে এভাবেই হয়তো ঠকছে। বান্ধবীর সংসার এবং বিশ্বাসে চির ধরাতে পারিনি। অপমানটা হজম করেছিলাম। এবার বলছি দ্বিতীয় ঘটনাটি। ফেসবুক ইনবক্সে অনেক সময় শ্রদ্ধাভাজন ব্যক্তিরা বিভিন্ন লিঙ্ক পাঠান। আমাকেও অনেকে শিক্ষণীয় বিষয়ক বিভিন্ন লিঙ্ক পাঠান। তাদের সঙ্গে শ্রদ্ধার সম্পর্ক বলেই ভরসা নিয়ে লিঙ্কটা খুলি। কিন্তু লিঙ্ক খুললেই চোখ কপালে উঠে। দেখা যায় সেটি খুব আপত্তিকর কোনো লিঙ্ক। যা তার কাছ থেকে কখনো কল্পনা করিনি। অতি সম্প্রতি এমনই এক পরিস্থিতিতে পড়তে হয়েছে আমাকে। আমি ওই ব্যক্তিকে প্রশ্ন করি তিনি কেন এই আপত্তিকর লিঙ্কটি আমাকে পাঠিয়েছেন। তার জবাব শুনে আরো হতাশ হই। তিনি খুব সহজভাবেই উত্তর দিলেন যে, এই লিঙ্কটি তার কোনো বন্ধু তাকে পাঠিয়েছেন। তিনি সেই লিঙ্ক তার বন্ধুদের পাঠিয়েছেন। এটা পড়ে অন্য কেউতো কোনো আপত্তিকর বলে মনে করেনি তাহলে আমি কেন এতটা প্রতিক্রিয়াশীল হচ্ছি? এ ক্ষেত্রে তার ব্যাখ্যায় আমি আধুনিক মেয়ে না, আমার জ্ঞান খুবই নিচু পর্যায়ের এ কারণে তার পাঠানো এমন উচ্চ পর্যায়ের শৈল্পিক লিঙ্কের মূল্য আমি বুঝিনি। ইত্যাদি ইত্যাদি। হয়রানিকারী ব্যক্তির পরিচয় যদি কেবল সামাজিকভাবে পরিচিত হয় তবে এমন ধকল কেবল মানসিক পর্যায়ের ধকল হয়। তবে এ ক্ষেত্রে ব্যক্তিটি যদি একজন সহকর্মী হন, সে ক্ষেত্রে তা মানসিক ধকলের মাত্রা ছাড়িয়ে অনেক বেশি আতঙ্কের ও শত্রুতার পর্যায়ে পৌঁছায়। আমাদের দেশে সাইবার অপরাধ দমনের জন্য ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন আছে। তবে আইন মানেই হলো মামলা এবং অনেক জটিল সব ধাপ, এমন ধারণার কারণে একজন ভুক্তভোগী নারী ভয় পেয়ে আরো বেশি গুটিয়ে যান। সেকারণে বর্তমানে ফেসবুকসহ সাইবার ক্রাইমের জটিল সমস্যায় সেবা দিতে আছে কাউন্টার টেররিজম এন্ড ট্র্যান্স ন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিট নামের একটি বিভাগ। এ সহযোগিতাটি আমাদের দেশের জন্য এ সময়ে অত্যন্ত জরুরি একটি সেবা। একটা কথা নারীকে মনে রাখতে হবে। এ ধরনের ঘটনায় প্রতিবাদ করলে খুব কাছের মানুষ ছাড়া অন্যদের পাশে পাওয়া যায় না। কেউ পাশে থাক অথবা না থাক, সব অন্যায়ের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের জন্য নিজের মানসিক দৃঢ়তা থাকলে লড়াই জেতা খুব সহজ হয়। কারণ অপরাধের প্রমাণ থেকেই যায়।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App