×

জাতীয়

এস কে সিনহার বিরুদ্ধে ডজনের বেশি অভিযোগ

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৪ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ০১:৪৪ পিএম

এস কে সিনহার বিরুদ্ধে ডজনের বেশি অভিযোগ
একটি স্বপ্নভঙ্গ এবং বাংলাদেশের বিচারব্যবস্থা নিয়ে বিতর্কিত বই লিখে আলোড়ন তোলা সাবেক প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার বিরুদ্ধে কমপক্ষে এক ডজন অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া গেছে। এসবের মধ্যে আছে দুর্নীতি ও ক্ষমতার অপব্যবহার, রাষ্ট্রবিরোধী কর্মকান্ডে জড়িয়ে যাওয়া ও রাষ্ট্রবিরোধী বক্তব্য, জ্ঞাত আয় বহিভর্‚ত বিপুল অর্থের মালিক বনে যাওয়া, নারী কেলেঙ্কারি, প্লটের মূল্য পরিশোধ না করা, বেনামে প্লট বরাদ্দ নেয়া, ১/১১ সরকারের সময় বাজেয়াপ্ত হওয়া বিভিন্ন ব্যক্তির অর্থ পুনরায় ফেরত দেয়ার বিনিময়ে মোটা উৎকোচ নেয়া, আমেরিকা-কানাডা-অস্ট্রেলিয়ায় হুন্ডির মাধ্যমে অর্থ পাচার, জজ নিয়োগে দুর্নীতি, আচরণবিধি লঙ্ঘন, দুদকের তদন্তকাজে বাধা দেয়া এবং বেআইনি প্রভাব বিস্তার করাসহ বিবিধ অভিযোগ। গোয়েন্দা ও সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়। জানা যায়, সাবেক প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহার বিরুদ্ধে সরকার নির্ধারিত মূল্য পরিশোধ না করে নিয়মবহিভর্‚তভাবে রাজউক প্লট বরাদ্দ নেয়া ও বাড়ি নির্মাণের অভিযোগ রয়েছে। ২০০৩ সালের ৩ ডিসেম্বর উত্তরার ১৫ নম্বর সেক্টরে ১ নম্বর সড়কে তিন কাঠা আয়তনের ১৫ নম্বর প্লটটি তিনি বরাদ্দ পান। কিন্তু পরবর্তীকালে ব্যক্তিগত প্রভাব খাটিয়ে বরাদ্দ পাওয়া প্লটটি ২০০৪ সালের ১৩ এপ্রিল ১০ নম্বর সেক্টরে ১২ নম্বর সড়কের ৫১ নম্বর প্লটের সঙ্গে বদল করেন। উপরন্তু তিনি ব্যক্তিগত প্রভাব খাটিয়ে প্লটের আয়তন ৩ কাঠার বদলে ৫ কাঠায় পুনর্নির্ধারণ করিয়ে সেটি পুনরায় বরাদ্দ করান। যদিও অতিরিক্ত দুই কাঠা জমির মূল্যের জন্য রাজউক থেকে দুই দফা নোটিস দেয়ার পরও দাম পরিশোধ করেননি তিনি। ১/১১ সরকার বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে ১ হাজার ২৩১ কোটি ৯৫ লাখ ৬৪ হাজার ৯২৫ টাকা সরকারি কোষাগারে জমা করে। পরবর্তীকালে ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান টাকা ফেরত চেয়ে হাইকোর্টে পৃথক রিট আবেদন করে। রিটের রায়ে সরকারের আদায় করা অর্থের মধ্যে ৬১৫ কোটি ৫৫ লাখ টাকা ৯০ দিনের মধ্যে ফেরত দেয়ার আদেশের বিনিময়ে প্রায় ৬০ কোটি টাকা উৎকোচ নেন তিনি। এস কে সিনহা প্রধান বিচারপতি থাকাকালে জ্ঞাত আয়বহিভর্‚ত তিন কোটি ১৭ লাখ ৮৫ টাকা কানাডা ও অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী মেয়েদের কাছে পাচার করেন। সাবেক প্রধান বিচারপতির আয়কর বিবরণী, কানাডায় পাঠানো টাকার ব্যাংক কনফারমেশন এসএমএসের স্ক্রিনশট, কানাডায় অবস্থান করা প্রধান বিচারপতির মেয়ে আশা সিনহার অর্থ পাওয়ার স্বীকৃতির এসএমএস, অস্ট্রেলিয়ায় পাঠানো অর্থের কনফারমেশন ই-মেইল, ইন্দোনেশিয়ার পেনিন ব্যাংক থেকে অস্ট্রেলিয়ায় সূচনা সিনহার অ্যাকাউন্টে পাঠানো অর্থের ডিপোজিট ফর্ম থেকে এসব অর্থপাচার ও জ্ঞাত আয়বহিভর্‚ত সম্পদ অর্জনের তথ্য জানা যায়। সূত্র জানায়, সাবেক প্রধান বিচারপতি ভুয়া অ্যাকাউন্ট তৈরি করে তারই নিজস্ব লোক দিয়ে মামলার তদবির করিয়ে এসব অর্থ আয় করেন। তার নিকটজন ও বিশ^স্ত লোকের তালিকায় রয়েছেন বাংলাদেশি ব্যবসায়ী অনিরুদ্ধ কুমার রায়, সিঙ্গাপুর প্রবাসী বাংলাদেশি নাগরিক রণজিৎ ও কানাডা প্রবাসী অভিবাসন আইনজীবী মেজর (অব.) সুধীর সাহা। এদের মাধ্যমেই তিনি বিদেশে এসব টাকা পাঠান। আপিল বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি জয়নুল আবেদীনের বিরুদ্ধে দুদকের একটি গুরুতর অসদাচরণসংক্রান্ত অপরাধের তদন্তকাজে বাধার সৃষ্টি করেন। নিজে চিঠি দিয়ে তিনি দুদকের তদন্ত বন্ধ করার নির্দেশ দেন। প্রধান বিচারপতি থাকাকালে তিনি জাপানে একটি সেমিনারে গিয়ে বাংলাদেশে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা করা হবে বলে বক্তব্য দেন। এ ছাড়া তিনি বিগত সংসদে বিনা ভোটে নির্বাচিত ১৫৩ জন সংসদ সদস্যের সদস্যপদ বাতিলের পরিকল্পনা করেন। এ বিষয়ে একজন আইনজীবীকে দিয়ে রিট আবেদন করানোর পরিকল্পনা ছিল তার। এরপর সুপ্রিম কোর্টের সামনে থেকে মূর্তি অপসারণের বিষয়ে ইতোপূর্বে ইসলামি দলগুলো দাবি জানালেও ভাস্কর্য অপসারণের পর তা অ্যানেক্স ভবনের সামনে বসিয়ে এক অরাজক পরিস্থিতি তৈরির চেষ্টা করেন এস কে সিনহা। ক্ষমতাসীন সরকারই জাতীয় সংসদের ওপর আস্থা রাখতে পারছে না বলে বিতর্কিত মন্তব্য করেন। ২০১৭ সালের ২৩ মে উচ্চ আদালতের বিচারকদের অপসারণ ক্ষমতা সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল থেকে সংসদের হাতে প্রদান করে আনা সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বাতিলে হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের আপিল শুনানিতে তিনি এ মন্তব্য করেন। ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায় এবং এ বিষয়ক কিছু পর্যবেক্ষণের কারণে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের তোপের মুখে ২০১৭ সালের অক্টোবরের শুরুতে ছুটিতে যান সুরেন্দ্র কুমার সিনহা। তখন সরকারের পক্ষ থেকে তার ছুটির পেছনে অসুস্থতার কথা বলা হলেও ১৩ অক্টোবর বিদেশে যাওয়ার আগে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, তিনি আসলে অসুস্থ নন, ক্ষমতাসীনদের সমালোচনায় বিব্রত হয়েই তিনি বিদেশ যাচ্ছেন। পরবর্তী সময়ে ১১ নভেম্বর তার ছুটির মেয়াদ শেষ হলেও সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়, বিচারপতি সিনহা পদত্যাগপত্র পাঠিয়েছেন।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App