×

মুক্তচিন্তা

নির্বাচন আসছে আসছে শীতের কুয়াশা

Icon

কাগজ অনলাইন প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৩ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ০৭:৪৯ পিএম

দেশে নির্বাচন আসছে। নির্বাচনের তফসিল ঘোষিত হবে মাসখানেকের মধ্যে। বিভিন্ন কারণে নির্বাচন হওয়া না হওয়া নিয়ে কারো কারো মনে কিছু সংশয় থাকলেও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অত্যন্ত জোর দিয়েই বলেছেন, নির্বাচন নির্দিষ্ট সময়েই হবে। নির্বাচন বন্ধ করার শক্তি কারো নেই। আপাতত আমরা প্রধানমন্ত্রীর কথায় আস্থা রাখতে চাই। কারণ তিনি যা বলেন, তা-ই করেন। সাধারণত তিনি নিছক বলার জন্য কোনো কথা বলেন না।

দেশে নির্বাচন আসছে। নির্বাচনের তফসিল ঘোষিত হবে মাসখানেকের মধ্যে। বিভিন্ন কারণে নির্বাচন হওয়া না হওয়া নিয়ে কারো কারো মনে কিছু সংশয় থাকলেও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অত্যন্ত জোর দিয়েই বলেছেন, নির্বাচন নির্দিষ্ট সময়েই হবে। নির্বাচন বন্ধ করার শক্তি কারো নেই। আপাতত আমরা প্রধানমন্ত্রীর কথায় আস্থা রাখতে চাই। কারণ তিনি যা বলেন, তা-ই করেন। সাধারণত তিনি নিছক বলার জন্য কোনো কথা বলেন না।

নির্বাচন ঘনিয়ে এলে তার সঙ্গে নানা ধরনের রাজনৈতিক কথাবার্তা, তর্কবিতর্কও সামনে আসবে, বলা যায় আসতে শুরু করছে। কলহপ্রিয় জাতি হিসেবে কোনো কিছুই আমরা বিনা বাক্যব্যয়ে মেনে নেই না, নেব না। আমাদের কবি বলেছেন, বিনা যুদ্ধে নাহি দেবো সূচ্যগ্র মেদিনী-

এটা ভালো লক্ষণ। সব কিছু নিয়ে আলোচনা করা, তর্ক করা ভালো। এতে সিদ্ধান্ত নির্ভুল হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তবে কাজের আগে বেশি কথা অনেক সময় অকাজকেই সাহায্য করে। অনেকে আছেন আলোচনার পর আলোচনা করেন, সিদ্ধান্ত আর নিতে পারেন না। কাজটাও আর করা হয়ে ওঠে না। এমন লোকদের বিরুদ্ধে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানও তার ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনীতে লিখেছেন। নির্ভুল সিদ্ধান্ত ভালো, কিন্তু তার জন্য কালক্ষেপণ ভালো না। বঙ্গবন্ধু লিখছেন : ‘আমি অনেকের মধ্যে একটা জিনিস দেখেছি, কোনো কাজ করতে গেলে শুধু চিন্তাই করে। চিন্তা করতে করতে সময় পার হয়ে যায়, কাজ আর হয়ে ওঠে না- আমি চিন্তাভাবনা করে যে কাজটা করব ঠিক করি, তা করেই ফেলি। যদি ভুল হয়, সংশোধন করে নেই’।

বঙ্গবন্ধু আরো লিখছেন, ‘আমি যদি কোনো ভুল বা অন্যায় করে ফেলি, এটা স্বীকার করতে আমার কোনোদিন কষ্ট হয়নি। ভুল হলে সংশোধন করে নেব, ভুল তো মানুষের হয়েই থাকে’। সেদিন একজন প্রবীণ ভারতীয় সাংবাদিক কথা প্রসঙ্গে বলছিলেন, আমি নির্ভুল সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য বসে থাকি না। আগে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করি তারপর সেটা নির্ভুল প্রমাণ করি।

যা হোক, সবার কর্ম পদ্ধতি, জীবন পদ্ধতি এক রকম হবে না। হওয়া উচিতও নয়। এক রকম ফুল দিয়ে মালা না গেঁথে নানা বর্ণের, গন্ধের ফুলের মালা নিশ্চয়ই বেশি আকর্ষণীয় হয়। কথা বলছিলাম নির্বাচন নিয়ে। এখন প্রশ্ন উঠছে, বিএনপি নির্বাচনে অংশ নেবে কি না? অথবা বিএনপিকে নির্বাচনে আনার জন্য সরকার বিশেষ কোনো ছাড় দেবে কি না?

নির্বাচনে আসা না-আসা বিএনপির রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের ব্যাপার। বিএনপিকে নির্বাচনে আনার জন্য সরকার যে কোনো বিশেষ উদ্যোগ নেবে না সেটা প্রধানমন্ত্রী এর মধ্যেই স্পষ্ট করে বলেছেন। কারো মান ভাঙানোর চেষ্টা তিনি করবেন না। বিএনপির কোনো বায়না সরকার পূরণ করবে না।

বিএনপি এখন রাজনীতির নামে এক ধরনের কৌশলের খেলায় নেমেছে। কী করলে বিএনপি বেশি লাভবান হবে সেটা তারা বুঝে উঠতে পারছে না। একবার বলছে, নির্বাচন চাই, আবার বলছে, খালেদা জিয়ার মুক্তি না হলে নির্বাচন নয়। এই দুই পয়েন্টে বিএনপি দৃঢ় থাকলে আগামী নির্বাচনে বিএনপির অংশগ্রহণের সম্ভাবনা কমে আসে। কারণ আগামী নির্বাচন শেখ হাসিনার অধীনেই হবে, নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন হওয়ার কোনোই সম্ভাবনা নেই। খালেদা জিয়ার মুক্তির বিষয়টিও সরকারের ইচ্ছাধীন নয়। সেটা নির্ভর করছে আদালতের ওপর।

বিএনপি সম্ভবত দলীয় নেত্রীকে নিয়ে এক ধরনের রাজনৈতিক বাজি খেলায় নেমেছে। রাজনৈতিক কৌশলে বিএনপি বারবার প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ প্রধান শেখ হাসিনার কাছে হেরেছে। তারা নানা ছক কষে, ব্যূহ রচনা করে কিন্তু শেখ হাসিনাকে কাবু করতে পারে না। এবার বিএনপি নেমেছে খালেদা জিয়ার শরীর স্বাস্থ্য নিয়ে। কারাবন্দি খালেদা জিয়ার চিকিৎসা কীভাবে হবে তাও বিএনপি ডিকটেট করছে। সরকার তার জন্য মেডিকেল বোর্ড গঠন করছে, স্বাস্থ্য পরীক্ষা করছে। বিএনপি বলছে, না, মানি না। চিকিৎসা বা পরীক্ষা হতে হবে তার ব্যক্তিগত চিকিৎসক দিয়ে। বিএনপির এই বায়না সরকার মানছে না।

বিএনপি প্রধান শারীরিকভাবে অসুস্থ এটা মেডিকেল বোর্ডও বলেছে। তবে বিএনপি যেভাবে বয়ান করছে এত ভয়াবহ বা গুরুতর অবস্থা তার নয়। তার যেসব রোগব্যাধি সেগুলো আগে থেকেই ছিল, জেলে গিয়ে নতুন কোনো সমস্যা দেখা দেয়নি। বিএনপি সেটা মানতে চায় না। তো, বিএনপি সরকারেরটা মানবে না, বিএনপিরটা সরকার মানবে কেন? সরকারের চেয়ে বিএনপির শক্তি বেশি সেটা যেহেতু বিএনপি এশবারো প্রমাণ করতে পারেনি, তাই বিএনপিকে তো সরকারের শর্তেই চলতে হবে।

খালেদা জিয়ার জনপ্রিয়তাকে পুঁজি করে বিএনপি তার অসুস্থতার কথা বেশি বেশি প্রচার করে দেশবাসীর মধ্যে সহানুভূতির জোয়ার তৈরি করে সব কিছু ভাসিয়ে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু মরা গাঙে যে বান ডাকার লক্ষণ নেই!

বিএনপির নেতারা বলছেন, আর কয়দিন পরই নাকি সরকারের ওপর কেয়ামত নাজিল হবে আর বিএনপির ওপর বর্ষিত হবে রহমত। আবহাওয়াবিদরা আবহাওয়ায় বড় ধরনের কোনো পরিবর্তনের পূর্বাভাস না দিলেও রাজনৈতিক জ্যোতিষীরা কিছু কিছু ভবিষ্যদ্বাণী করতে শুরু করেছেন। শেখ হাসিনার জন্য সময়টা শুভ না কিংবা খালেদা জিয়া হারানো গৌরব ফিরে পাচ্ছেন দ্রুত, এমন কোনো জ্যোতিষী বাণীও এখন পর্যন্ত আমার চোখে পড়েনি। রাজনীতির নিয়ন্ত্রণ এখনো আওয়ামী লীগের হাতেই আছে। নির্বাচনের আগে একটি সরকারবিরোধী সর্বদলীয় ঐক্য গড়ে তুলে আওয়ামী লীগকে দেখে নেয়ার যে পরিকল্পনা বিএনপি ও তার মিত্ররা করছে, তারা কি জানেন তাদের মোকাবেলার জন্য শেখ হাসিনার মাথায় কি মহাপরিকল্পনা আছে?

কয়দিন ধরে প্রচণ্ড গরম পড়েছে। মানুষ গরমে আইঢাই করছে। প্রকৃতির বিরূপতা রাজনৈতিক বিরূপতাকে হার মানিয়েছে। ওদিকে পঞ্চগড় জেলায় আবহাওয়ায় দেখা যাচ্ছে নতুন পরিবর্তন। দিনের বেলা কাঠফাটা রোদ। রাতে নামছে কুয়াশা। একটু শীতের ভাবও নাকি অনুভূত হচ্ছে। কুয়াশার ঘন চাদর এখনো প্রকৃতিকে ঢেকে দেয়নি। তবে নির্বাচন আসতে আসতে শুধু পঞ্চগড়ে নয়, সারা দেশেই হয়তো কুয়াশা ছড়িয়ে পড়বে। রাজনীতির কুয়াশাভেদে ব্যর্থ বিএনপি প্রকৃতির কুয়াশা মোকাবেলায় সক্ষমতা দেখাতে পারবে কি?

বিভুরঞ্জন সরকার : সাংবাদিক ও কলাম লেখক।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App