×

পুরনো খবর

আ.লীগে অর্ধ ডজন সম্ভাব্য প্রার্থী, কোন্দলে অগোছালো বিএনপিও

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৩ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ০১:৩৩ পিএম

আ.লীগে অর্ধ ডজন সম্ভাব্য প্রার্থী, কোন্দলে অগোছালো বিএনপিও
আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন যতই ঘনিয়ে আসছে, মানিকগঞ্জের ৩টি নির্বাচনী আসনে নমিনেশনের জন্য সব দলের প্রার্থীদের দৌড়ঝাঁপ বেড়ে যাচ্ছে। এক সময়কার বিএনপির ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত মানিকগঞ্জ জেলার তিনটি আসনেই পর পর দুবার দখলে থাকায় তৃণমূল পর্যায়ে গোছানো আওয়ামী লীগ রয়েছে এখন ফুরফুরে মেজাজে। জেলাসহ ওয়ার্ড পর্যায়েও দলটির রয়েছে পূর্ণাঙ্গ কমিটি। তবে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রার্থিতা নিয়ে বড় ধরনের সংকট সৃষ্টি হতে পারে বলে মনে করছেন দলটির নেতাকর্মীরা। অপরদিকে নেতৃত্বের কোন্দলে এখনো অগোছালো জেলা বিএনপি। প্রায় চার বছর আগে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকসহ ১৬ সদস্যবিশিষ্ট কমিটি গঠন করা হলেও পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করতে পারেনি দলটি। সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের মধ্যে বিভাজন ছাড়াও আরো কয়েকটি উপদলীয় বিভক্তি রয়েছে। যে কারণে সভাপতি উপজেলা কমিটি গঠন করলেও অন্য পক্ষগুলো তা মেনে নেয়নি। ১৬ সদস্যবিশিষ্ট কমিটির সব সদস্যকে নিয়ে এ পর্যন্ত একটি মিটিংও করা সম্ভব হয়নি। যে কারণে মানিকগঞ্জ জেলা বিএনপি রয়েছে সাংগঠনিক সংকটে। আর নির্বাচনে মনোনয়ন নিয়ে এ সংকট আরো বাড়বে বলে মনে করছেন দলটির নেতকর্মীরা। বর্তমান সরকারের আমলে তিনটি আসনেই হয়েছে ব্যাপক উন্নয়ন। বর্তমান সরকারের দৃশ্যমান উন্নয়ন আর অগোছালো দলের কারণে বিএনপির প্রতি জনগণের আগের আস্থা নেই বলে দাবি ক্ষমতাসীন দলের। অপরদিকে বিএনপি নেতারা মনে করেন, মিথ্যা মামলা-মোকদ্দমা দিয়ে হয়রানি, পুলিশ দিয়ে রাজনৈতিক কর্মকান্ড বন্ধ করে দেয়া এবং প্রতিপক্ষকে মাঠে নামতে না দেয়ার কারণেই বরং জনগণ ক্ষিপ্ত হয়ে রয়েছে বিএনপিকে ভোট দিতে। সিংগাইর, হরিরামপুর ও মানিকগঞ্জ সদর উপজেলার তিনটি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত মনিকগঞ্জ-২ আসন। এ আসনটি দীর্ঘদিন বিএনপির দখলে ছিল। এখানকার এমপি ছিলেন সাবেক শিল্পমন্ত্রী বিএনপি নেতা শামছুল ইসলাম খান নয়া মিয়া। বিগত জোট সরকারের শেষ সময়ে তিনি মারা গেলে উপনির্বাচনে তার ছেলে বর্তমানে জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মাঈনুল ইসলাম খান শান্ত নির্বাচিত হন। ওয়ান ইলেভেন পরবর্তী নবম সংসদ নির্বাচনে তিনি আর দলীয় মনোনয়ন পাননি। তার স্থলে মনোনয়ন দেয়া হয় সাবেক মন্ত্রী মুন্নু মিয়ার মেয়ে বর্তমানে জেলা বিএনপির সভাপতি আফরোজা খান রীতাকে। নারী অগ্রগতির বিষয়ে তার মনোনয়ন ওই সময় চমক হিসেবে বিবেচিত হলেও নির্বাচনে তিনি হেরে যান। এ আসনে বর্তমান সংসদ সদস্য মমতাজ বেগম ছাড়াও আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশীদের মধ্যে রয়েছেন সাবেক সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা শামসুদ্দীন আহম্মেদ, কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সাবেক ক্রীড়া ও যুববিষয়ক সম্পাদক দেওয়ান শফিউল আরেফিন টুটুল, জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা ডা. আলী জিলকদ আহমেদ, জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ও হাটিপাড়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান গোলাম মনির হোসাইন, জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ও জেলা পরিষদের নির্বাচিত সদস্য আব্দুস সালাম চৌধুরী। তবে দৃশ্যমানভাবে মাঠে রয়েছেন মমতাজ বেগম ও দেওয়ান শফিউল আরেফিন টুটুল। মমতাজ বেগমের বিরুদ্ধে অভিযোগ, হঠাৎ করে আওয়ামী লীগের টিকেটে সংসদ সদস্য হয়ে পুরনো ও ত্যাগী নেতাদের তিনি যথাযথ মূল্যায়ন করেননি। নিজ বলয়ের লোকজনকে রেখে কমিটি করেছেন। তিনি নিজেই দলের সভাপতি হয়েছেন। এ জন্য ক্ষোভ রয়েছে দলের বড় একটি অংশের নেতাকর্মীদের মধ্যে। তিনি মনোনয়ন পেলে এ ক্ষোভকে প্রশমন করতে হবে বলে নেতাকর্মীদের অভিমত। যদিও গায়িকা মমতাজের অবস্থা মানিকগঞ্জের অন্য সংসদ সদস্যদের চেয়ে ভালো। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এরশাদের চালে তিনি নমিনেশন থেকে বাদও পড়তে পারেন। এরশাদ যদি ৭০ আসন থেকে নড়চড় না হন তবে মানিকগঞ্জ থেকে আওয়ামী লীগের একটা আসন হাতছাড়া হতে পারে। আর সেটা হবে মানিকগঞ্জ-২। তাই মমতাজের জন্য অস্বস্তির কারণ হতে পারেন ২০০৮ সালে এ আসনের সংসদ সদস্য জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য এস এম আব্দুল মান্নান। আব্দুল মান্নানও এ আসন থেকে মনোনয়ন পাওয়ার জন্য চেষ্টা করছেন। আব্দুল মান্নান বলেন, মহাজোটে থাকার কারণে দলের সিদ্ধান্তে গত নির্বাচনে সরে দাঁড়িয়েছিলেন। এবার জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের নির্দেশে তিনি নিজ এলাকায় প্রচার-প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। মহাজোট হয়ে নির্বাচন হলে এ আসনে তার মনোনয়ন নিশ্চিত বলে তিনি দাবি করেন। দেওয়ান শফিউল আরেফিন টুটুল নিয়মিত এলাকায় গণসংযোগ করে যাচ্ছেন। তিনি বলেন, জীবনে খেলাধুলা আর আওয়ামী লীগের রাজনীতি ছাড়া আর কিছুই করেননি। নেত্রী তার ত্যাগের পুরস্কার দেবেন বলে তিনি আশা করেন। কারণ যোগ্য নেতার মূল্যায়ন করা আওয়ামী লীগের একটি অন্যতম আদর্শ। এদিকে ১৯৮৬ সালের নির্বাচনে জাতীয় পার্টির মনোনয়নে নির্বাচিত সংসদ সদস্য গোলাম সারোয়ার মিলনও এবার নির্বাচন করবেন বলে নিশ্চিত করেছেন। বৃহৎ কোনো দলের টিকেট না পেলে স্বতন্ত্র প্রার্থী হবেন বলে জানান তিনি। বিএনপি থেকে এ আসনে নমিনেশন চাইবেন আফরোজা খান রীতা। তবে বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশীদের অন্যতম হলেন জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ও এ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মাঈনুল ইসলাম খান শান্ত। তিনিই হয়তো পেয়ে যাবেন নমিনেশন। এ আসনে বিএনপির আরেক সম্ভাব্য প্রার্থী সিংগাইর উপজেলা চেয়ারম্যান আবিদুর রহমানের নামও শোনা যাচ্ছে। এ আসনে প্রকাশ্যে বিএনপির কোনো কার্যক্রম না থাকলেও ভেতরে ভেতরে নেতাকর্মীরা সংগঠিত হচ্ছেন। এখানেও বিএনপি হবে খুবই শক্তিশালী প্রতিদ্বন্দ্বী।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App