×

জাতীয়

সন্ধ্যায় বিলীন বিস্তীর্ণ জনপদ

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২১ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ০২:৪২ পিএম

সন্ধ্যায় বিলীন বিস্তীর্ণ জনপদ
উপজেলার মাঝ দিয়ে বয়ে চলা সন্ধ্যা নদীতে বসত ভিটেসহ ফসলি জমি হারিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছেন শত শত পরিবার। প্রায় ২০টি গ্রামের বিস্তীর্ণ এলাকা ইতোমধ্যেই উপজেলার মানচিত্র থেকে হারিয়ে গেছে। একমাত্র সম্বল ভিটে মাটি ও ফসলি জমি হারিয়ে নিঃস্ব^ পড়েছে শতশত পরিবার। সবকিছু হারিয়ে অনেকেই এখন বেছে নিয়েছেন যাযাবর জীবন। বানারীপাড়ায় অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের ফলে সন্ধ্যা নদীর ভাঙন তীব্র রূপ ধারণ করেছে। বালু উত্তোলনের কারণে ভাঙছে নদী, পুড়ছে কপাল, কাঁদছে হাজারো মানুষ। আর আঙুল ফুলে কলাগাছ বনে গেছেন সুবিধাবাদী ও স্বার্থান্বেষী মহল। তাদের কপাল খুললেও বর্তমানে নদীর তীরবর্তী শতাধিক পরিবারের মধ্যে বসতভিটা ভাঙনের আতঙ্ক বিরাজ করছে। জানা গেছে সন্ধ্যা নদীতে মোট ৮টি বালুমহল ইজারার পয়েন্ট রয়েছে। নদীর ভাঙন রোধে বালু উত্তোলন বন্ধে উপজেলার ইলুহার গ্রামের সাবেক ইউপি সদস্য পরিমল জনস্বার্থে ২০১৬ সালের ডিসেম্বর মাসে হাইকোর্টে (উচ্চ অদালতে) একটি রিট পিটিশন দায়ের করলে জেলা প্রশাসক ও বানারীপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাসহ জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের সংশ্লিষ্টদের কাছে নদীর ভাঙন রোধে কেন বালুমহাল ইজারা দেয়া বন্ধ করা হবে না মর্মে জবাব চাওয়া হয়। হাইকোর্টের রিটের বিষয়ে নিষ্পত্তি না হওয়ায় গত দুই বছর ধরে বরিশালের অন্য উপজেলাগুলোর সন্ধ্যাসহ বিভিন্ন নদীতে বালুমহাল ইজারা দেয়া হলেও বানারীপাড়া উপজেলায় বালু মহাল ইজারা স্থগিত রাখা হয়। এতে বালুদস্যুদেরই লাভ বেশি হয়েছে। উচ্চ আদালতের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে সরকারকে রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে জেলা ও উপজেলা প্রশাসনকে মাসোয়ারার মাধ্যমে ম্যানেজ করে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন অব্যাহত রাখা হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। বালুদস্যুরা সন্ধ্যা নদীর বুক ক্ষতবিক্ষত করে রাতদিন ১০/১২টি অবৈধ ড্রেজার মেশিন দিয়ে বালু উত্তোলন করছে। আর এর সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করছেন আওয়ামী লীগের এক শীর্ষ নেতা। এদিকে অনিয়মতান্ত্রিকভাবে যত্রতত্রভাবে বালু উত্তোলন প্রসঙ্গে নদী শাসন বিষেজ্ঞরা জানান, যে স্থানে ভাঙন তীব্ররূপ ধারণ করছে সেই স্থান থেকে বালু উত্তোলন করলে নদীর গভীরতা আরো বৃদ্ধি পেয়ে নদীর তলদেশে ফাঁটলের সৃষ্টি হয়। ফলে আশপাশের এলাকাও ভাঙনের কবলে পতিত হয়। বালু দস্যুদের কারণে ইতোমধ্যে সন্ধ্যা নদীর তীরবর্তী উপজেলার উত্তর নাজিরপুর, দক্ষিণ নাজিরপুর, দান্ডয়াট, শিয়ালকাঠি, জম্বদ্বীপ, ব্রাহ্মণকাঠী, কাজলাহার, ডুমুরিয়া, ইলুহার, ধারালিয়া, বাসার, নলশ্রী, মসজিদবাড়ি, গোয়াইলবাড়ি, খোদাবখসা, কালির বাজার, চাউলাকাঠি, মীরেরহাট ও খেজুরবাড়ি গ্রামের কয়েকশ একর ফসলি জমি, অসংখ্য বসতবাড়ি, রাস্তা-ঘাট, ব্রিজ-কালভার্ট, স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা, মসজিদ ও মন্দিরসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। উপজেলার ইলুহার বিহারিলাল মাধ্যমিক বিদ্যালয়, মিরেরহাট ও জম্বদ্বীপ সাইক্লোন শেল্টার যে কোন সময় নদী গ্রাস করে ফেলতে পারে। হুমকির মুখে রয়েছে খেজুরবাড়ি আবাসন ও উত্তর নাজিরপুর গুচ্ছ গ্রাম। ভাঙনের কারণে বসতঘর, ভিটামাটি ও ফসলি জমিসহ সর্বস্ব হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে পড়েছে শত শত পরিবার। উল্লেখিত মানচিত্রে থাকলেও নদী গ্রাস করে ফেলায় গ্রামগুলো বাস্তবে নেই। চলতি বর্ষা মৌসুমে পুনরায় নতুন করে ভাঙনের কবলে পড়েছে প্রায় শতাধিক পরিবার ও শিক্ষাসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান। শুধু আওয়ামী লীগ সরকার আমলে নয় বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার আমলে বালুদস্যুরা ছিলেন আরো বেপরোয়া ওই সময়ই মূলত গ্রামগুলো নদী গ্রাস করে ফেলে। এর ধারাবাহিকতায় এখনো ভাঙন অব্যাহত রয়েছে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App