×

মুক্তচিন্তা

মুক্ত সাংবাদিকতায় আইনটি খড়্গ

Icon

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ২০ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ০৭:৫০ পিএম

তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইনের বাতিল হওয়া ধারাগুলো নতুন আইনের বিভিন্ন ধারায় রয়ে গেছে, এমনকি কোথাও আইন অপব্যবহারের সুযোগ আরো বাড়বে। এই আইনটি স্বাধীন গবেষণার ক্ষেত্রে, মুক্ত সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে এক ভয়ঙ্কর বাধা হয়ে দাঁড়াবে। আইনটি পাস করার আগেই সম্পাদক পরিষদ ও নাগরিক সমাজের যে অভিমত নেয়া হয়েছিল, সেগুলোর প্রতি সম্মান দেখালে সরকারের গণতান্ত্রিক ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হতো।

সাংবাদিক ও মানবাধিকার সংগঠনসহ বিভিন্ন মহলের আপত্তি থাকলেও ৩২ ধারা বহাল রেখে জাতীয় সংসদে গত বুধবার ‘ডিজিটাল নিরাপত্তা বিল-২০১৮’ পাস হয়েছে। মুক্ত সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে এই আইনটি একটি খড়্গ। বাংলাদেশে সাইবার অপরাধ ব্যক্তি ও রাষ্ট্রীয় ক্ষেত্রে বড় নিরাপত্তা হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির মতো ঘটনাও ঘটেছে। প্রচলিত ব্যবস্থায় এসব অপরাধ যেমন রোধ করা যাচ্ছে না তেমনি প্রচলিত আইনেও এ সব অপরাধের বিচার করা সম্ভব হচ্ছে না। তাই সময়োপযোগী আইনের প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে। নতুন ‘ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন-২০১৮’-এ ডিজিটালের সংজ্ঞা, ডিজিটাল ফরেনসিক ল্যাব করা, ইমার্জেন্সি রেসপন্স টিম গঠন এবং প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে একটি ডিজিটাল নিরাপত্তা কাউন্সিল গঠনের কথা বলা হয়েছে, এগুলো খুবই সময়োপযোগী। আর গণমাধ্যম সংশ্লিষ্টদের কাছে আতঙ্কের বিষয় হয়ে দেখা দিয়েছে নতুন আইনের ৩২ ধারা। এই আইনের ৩২(১) ধারায় অফিশিয়াল সিক্রেসি অ্যাক্টের আওতাভুক্ত কিছু অপরাধ করলে বা করতে সহায়তা করলে অনধিক ১৪ বছরের কারাদণ্ড বা অনধিক ২৫ লাখ টাকা জরিমানা হবে। ২৫ ধারার (ক) উপধারায় বলা হয়, জেনেবুঝে মিথ্যা তথ্য প্রচার করলে অনধিক তিন বছরের কারাদণ্ড বা অনধিক তিন লাখ টাকা জরিমানা হবে। ২১ ধারায় বলা হয়, ডিজিটাল মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, জাতির পিতার বিরুদ্ধে কোনো ধরনের প্রপাগান্ডা চালালে বা চালাতে মদদ দিলে অনধিক ১০ বছরের কারাদণ্ড বা অনধিক তিন লাখ টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ডে বিধান রাখা হয়েছে। এই আইনে মানবাধিকার বিপন্ন হতে পারে, বিশেষ করে গণমাধ্যমের কণ্ঠরোধ হতে পারে, এ রকম কোনো ধারা নিশ্চয়ই থাকা সমীচীন নয়। গত ২৯ জানুয়ারি ‘ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন-২০১৮’-এর খসড়া চূড়ান্ত অনুমোদন দেয় মন্ত্রিসভা। ৯ মে সংসদে উত্থাপনের পর খসড়া আইনটি পরীক্ষা করে প্রতিবেদন দেয়ার জন্য সংসদীয় কমিটিতে পাঠানো হয়। খসড়া আইনটি মন্ত্রিসভার অনুমোদনের পর থেকে বিভিন্ন মহলের সমালোচনার মুখে পড়ে। সংসদীয় কমিটির বৈঠকে উপস্থিত হয়ে সংবাদপত্রগুলোর সম্পাদকদের সংগঠন এডিটরস কাউন্সিল, বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন (বিএফইউজে) এবং বেসরকারি টেলিভিশন মালিকদের সংগঠন-অ্যাটকোরসহ সংশ্লিষ্ট অনেকেই উপস্থিত হয়ে সুনির্দিষ্ট কিছু সংশোধনী প্রস্তাব দিলে সংসদীয় কমিটির চূড়ান্ত সুপারিশে তা রাখা হয়। পাস হওয়া বিলের কয়েকটি ধারায় কিছু পরিবর্তন আনা হলেও ৩২ ধারাসহ বেশির ভাগ ধারা বহাল রয়েছে। বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইনের বাতিল হওয়া ধারাগুলো নতুন আইনের বিভিন্ন ধারায় রয়ে গেছে, এমনকি কোথাও আইন অপব্যবহারের সুযোগ আরো বাড়বে। এই আইনটি স্বাধীন গবেষণার ক্ষেত্রে, মুক্ত সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে এক ভয়ঙ্কর বাধা হয়ে দাঁড়াবে। আইনটি পাস করার আগেই সম্পাদক পরিষদ ও নাগরিক সমাজের যে অভিমত নেয়া হয়েছিল, সেগুলোর প্রতি সম্মান দেখালে সরকারের গণতান্ত্রিক ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হতো।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App