একতারায় গান শুনিয়ে চলে সংসার
কাগজ প্রতিবেদক
প্রকাশ: ২০ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ০৩:২৯ পিএম
মাগুরা জেলার শ্রীপুর উপজেলার জোকা গ্রামের বাসিন্দা দরিদ্র হুজুর আলী সাঁই (৬০)। একতারা বাজিয়ে গান গেয়ে সংসার চালান। ভোর হলেই পেটের দায়ে হাতে একতারা নিয়ে বেরিয়ে পড়েন পথে। গ্রাম থেকে গ্রামে একতারা বাজিয়ে গান গেয়ে মানুষকে বিনোদিত করেন।
এই বয়সেও গান গাওয়াতে তার কোনো ক্লান্তি নেই। কেউ শুনতে চাইলেই হাতে একতারা তুলে নিয়ে গান গাইতে শুরু করে দেন। প্রায় ৪০ বছর ধরে বিবাগী এ মানুষটি গান গেয়ে চলেছেন। প্রথম জীবনে খঞ্জনি বাজিয়ে গান করতেন। পরে এটি বাদ দিয়ে করতাল বাজিয়ে গ্রামগঞ্জের হাটবাজারে পুরোদমে গান গাওয়া শুরু করেন। দিন দিন জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি পেতে থাকলে একসময় তিনি লালন শাহের আখড়ায় গিয়ে একতারার প্রতি আকৃষ্ট হন। আর্থিক সঙ্গতি না থাকায় উন্নতমানের একতারা কিনতে না পারলেও থেমে থাকেনি তার জীবন। বেছে নেন পাকা লাউয়ের খোল, বাঁশ আর চিকন তার। এসব দিয়েই নিজ হাতে তৈরি করেন একতারা। এই একতারা বাজিয়েই গান গেয়ে মানুষের মনকে জয় করে চলেছেন হুজুর আলী। গান থেকে উপার্জিত অর্থেই চলে তার সংসার। স্ত্রী, দুই মেয়ে ও দুই পুত্রসহ ৬ সদস্যের পরিবার তার। গান শুনে মানুষ খুশি হয়ে যা দেন তা-ই তিনি গ্রহণ করেন। অর্থ-বিত্তের প্রতি কোনো লোভ নেই। শুধুমাত্র দুবেলা দুমুঠো ভাত খেয়ে বেঁচে থাকার আকুতি তার। বয়সের ভারে অন্য কোনো কাজ করে উপার্জন করা সামর্থ্য নেই। গানের সুরই সাদামাটা মানুষটির জীবনকে ধন্য করেছে।
যৌবনে গ্রামীণ তাঁতকলে কাপড় বুননের কাজ করে সংসার চালাতেন। কাজের ফাঁকে ফাঁকে বিভিন্ন পালা গানের দলে জুরি ও করতাল বাজাতেন। একসময় গানের প্রতি আসক্ত হয়ে কাপড় বুননের কাজ ছেড়ে গানে মত্ত হয়ে যান। আত্মশুদ্ধির পথ খুঁজে নেন গানের মাঝেই। গান গাইতে গিয়ে লালনের ছেউড়িয়া থেকে শুরু করে দেশের বিভিন্ন স্থানের অসংখ্য বাউল সাধকের সঙ্গে তার সাক্ষাৎ হয়েছে। ভোর হলেই জীবিকার সন্ধানে হুজুর আলী সাঁই বেরিয়ে পড়েন একতারা হাতে। পথ থেকে পথে ঘুরে বেড়ান অচিন মানুষের সন্ধানে।