×

পুরনো খবর

বিভিন্ন দলের সম্ভাব্য প্রার্থীরা প্রচারণা চালাচ্ছেন কৌশলে

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৯ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ০৩:৪৯ পিএম

বিভিন্ন দলের সম্ভাব্য প্রার্থীরা প্রচারণা চালাচ্ছেন কৌশলে
নাটোর-৩ সিংড়া আসনটি জুড়ে বইছে নির্বাচনী হাওয়া। বিভিন্ন দলের সম্ভাব্য প্রার্থীরা এলাকায় সরব হয়ে উঠেছেন। অনেকে প্রকাশ্যে মাঠে না থাকলেও কৌশলে প্রচারণা চালাচ্ছেন। বিশেষ করে বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে অনেকেই প্রার্থিতার জানান দিচ্ছেন। আবার অনেকে গণসংযোগের ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছেড়ে দিচ্ছেন। সম্ভাব্য প্রার্থীদের ছবি-সংবলিত পোস্টার, ব্যানার ও ফেস্টুন ঝুলছে গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে মোড়ে। চলছে সম্ভাব্য প্রার্থীদের নিয়ে আলোচনা, সমালোচনা ও ভালো-মন্দের বাছ-বিচার। এই আসনটি বরাবরই ছিল বিএনপির দখলে। বিশেষ করে নব্বইয়ের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর ১৯৯১ সালের নির্বাচন থেকে শুরু করে ২০০১ সালের নির্বাচন পর্যন্ত প্রতিটি নির্বাচনে জয়লাভ করেন বিএনপির প্রার্থীরা। ২০০৮ সালের নির্বাচনে বিএনপির দুর্গে প্রথম আঘাত হেনে দখলে নেন আওয়ামী লীগের উদীয়মান নেতা এডভোকেট জুনাইদ আহমেদ পলক। আর দায়িত্ব পান তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রীর। আগামী নির্বাচনেও জুনাইদ আহমেদ পলক এ আসনের শক্তিশালী প্রার্থী। তবে বিএনপিও ছাড় দিতে নারাজ। তারা তাদের হারানো দুর্গ ফিরে পেতে কৌশলে মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন। তবে আসনটিতে আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতাদের মূল্যায়ন না করা এবং প্রতিমন্ত্রী পলকের সঙ্গে সিংড়া পৌর আওয়ামী লীগ সভাপতি, উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান শফিকুল ইসলাম শফিকের নীতিগত মতবিরোধ তৈরি হওয়ায় আওয়ামী লীগ যেমন কিছুটা অস্বস্তিতে পড়েছে তেমনি সম্প্রতি বিএনপির সাবেক মেয়র ও ম্যাব মহাসচিব অধ্যাপক শামিম আল রাজির আকস্মিক মৃত্যুতে এ আসনে বড় ধরনের শূন্যতায় ভুগছে বিএনপি। তা ছাড়া বিএনপিতে প্রকাশ্যে কোনো কোন্দল না থাকলেও ভেতরে ভেতরে রয়েছে অন্তর্দ্বন্দ্ব। নাটোর-৩ আসনে ১৯৯১ সালের ভোটে বিজয়ী হন জেলা বিএনপির সিনিয়র সহসভাপতি অধ্যাপক কাজী গোলাম মোর্শেদ। পরের দফায় ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারির বিতর্কিত নির্বাচনে বিজয়ী হন বিএনপির প্রয়াত নেতা এডভোকেট আবুল কালাম আজাদ। ১৯৯৬ সালের ১২ জুনের নির্বাচনে ফের বিজয়ী হন কাজী গোলাম মোর্শেদ। ২০০১ সালের ভোটেও এমপি হন গোলাম মোর্শেদ। কিন্তু ২০০৮ সালের নির্বাচনে ভোটের হিসাব পাল্টে যায়। ঝড়োগতিতে এই আসনে আঘাত হেনে বিজয় ছিনিয়ে নেন আওয়ামী লীগের তরুণ নেতা এডভোকেট জুনাইদ আহমেদ পলক। সর্বশেষ ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনেও পলক বিজয়ী হন। বর্তমানে এ আসনে মোট ভোটার ২ লাখ ৭৬ হাজার ৪০০ জন। এ আসনে আগামী একাদশ সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন দৌড়ে এগিয়ে আছেন গত দশম সংসদে সরাসরি ভোটে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে বিজয়ী হওয়া সংসদ সদস্য এডভোকেট জুনাইদ আহমেদ পলক। তিনি জানান, দলীয় সভানেত্রী শেখ হাসিনা ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণের অংশ হিসেবে সিংড়ার মাটিতে ২২৪ কোটি টাকা ব্যয়ে অত্যাধুনিক প্রযুক্তির একটি ডিজিটাল হাব গড়ে তোলা হচ্ছে। আগামী তিন বছরে এর নির্মাণকাজ শেষ হলে সেখানে এই এলাকার প্রায় ২০ হাজার বেকার যুবকের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে। এ ছাড়াও তিনি চলনবিলের সিংড়া-বারুহাস-তাড়াশ ডুবন্ত সড়কসহ এলাকায় শত শত কোটি টাকা ব্যয়ে অসংখ্য ব্রিজ, কালভার্ট নির্মাণসহ শিক্ষা ও স্বাস্থ্য ব্যবস্থার ব্যাপক উন্নতি করেছেন। বর্তমানে প্রতিমন্ত্রী পলক মোটরসাইকেলে চড়ে প্রতিটি পাড়া-মহল্লা ঘুরে সমস্যা চিহ্নিত করে সমাধানও করছেন। আর এ আসন থেকে পরপর দুবার নির্বাচিত সংসদ সদস্য জুনাইদ আহমেদ পলকের বিরুদ্ধে উপজেলা আওয়ামী লীগ নেতাদের সঙ্গে আলোচনা না করে একক সিদ্ধান্ত নেয়ার অভিযোগ রয়েছে। সম্প্রতি সিংড়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি শফিকুল ইসলামের শোক দিবস উপলক্ষে সাঁটানো পোস্টার প্রকাশ্যে ছিঁড়ে ফেলায় মাঠপর্যায়ের নেতাকর্মী ও সাধারণ জনগণের মধ্যে সৃষ্টি হয়েছে চাপা ক্ষোভ। তাই আসনটিতে ইতোমধ্যে পলকের বিকল্প হিসেবে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান শফিকুল ইসলাম শফিককে নিয়ে ভাবছেন কোনো কোনো সিনিয়র নেতা। এ ছাড়া আ.লীগের মনোনয়ন দৌড়ে রয়েছেন সাবেক এমপি মরহুম আশরাফুল ইসলামের ছেলে নাটোর নবাব সিরাজ-উদ-দৌলা কলেজ ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও সিংড়া উপজেলা আ.লীগের সাবেক ১ নম্বর যুগ্ম সম্পাদক অধ্যাপক শহিদুল ইসলাম দুলু। তিনি বলেন, তার বাবা মরহুম আশরাফুল ইসলামের হাত ধরেই সিংড়ায় আ.লীগের জন্ম হয়। তার বাবা নাটোর জেলা আ.লীগের সভাপতি, সিংড়া উপজেলা আ.লীগের প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের একজন বিশ্বস্ত সহচর ছিলেন। এসব বিষয়ে উপজেলা আ.লীগের সভাপতি এডভোকেট ওহিদুর রহমান শেখ বলেন, এ আসনে আবারো প্রতিমন্ত্রী এডভোকেট জুনাইদ আহমেদ পলক একক প্রার্থী। তবে বড় দল হিসেবে নেতাদের মধ্যে কোনো বিষয় নিয়ে বিরোধ থাকতেই পারে, সেটা সাময়িক। আর এখানে বিএনপি চলছে একটি জোড়াতালি কমিটি দিয়ে। তাই এ আসন তাদের দখলেই থাকবে বলে তিনি জানান। অন্যদিকে বিএনপিতে প্রার্থী হতে হাফ ডজন প্রার্থী মাঠে নেমেছেন। দলীয় মনোনয়ন দৌড়ে রয়েছেন জেলা বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক ও বর্তমান সিনিয়র সহসভাপতি, বিএনপি জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য অধ্যাপক কাজী গোলাম মোর্শেদ, জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা প্রজন্ম দলের কেন্দ্রীয় সংসদের সাধারণ সম্পাদক, সিংড়া উপজেলা বিএনপির সহসভাপতি ও বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী এবং আন্তর্জাতিক বাণিজ্যিক সালিশ বিশেষজ্ঞ এডভোকেট এম ইউসুফ আলী, দীর্ঘ দুই যুগ ধরে থানা বিএনপির সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালনকারী বর্তমান সভাপতি ও জেলা জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের সিনিয়র সহসভাপতি এডভোকেট মজিবুর রহমান মন্টু, সিংড়া থানা বিএনপির সদস্য ও দমদমা পাইলট স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ আনোয়ারুল ইসলাম আনূ, সিংড়া থানা ছাত্রদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও বর্তমান পৌর বিএনপির সভাপতি দাউদার মাহমুদ, উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান ও উপজেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক শামীম হোসেন, নব্বইয়ের দশকে সিংড়ার মেধাবী তরুণ ছাত্রনেতা এম ইউসুফ আলী যিনি জার্মানি থেকে আন্তর্জাতিক আইন বিষয়ে উচ্চতর ডিগ্রি অর্জন করেছেন। নির্বাচনী ভাবনা নিয়ে কথা হয় বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশী মজিবুর রহমান মন্টুর সঙ্গে। তিনি বলেন, প্রয়াত নেতা আবুল কালাম আজাদ ও শামিম আল রাজির অবর্তমানে শক্ত হাতে সিংড়া বিএনপির হাল ধরেছেন। তিনি আরো বলেন, রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলুর নির্দেশে সিংড়া বিএনপি সংঘবদ্ধ। তবে কিছুটা অন্তর্দ্বন্দ্ব চলছে। এদিকে মহাজোটের শরিক ওয়ার্কার্স পার্টির জেলা সম্পাদক মন্ডলী ও কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য, জাতীয় কৃষক সমিতির নাটোর জেলার সভাপতি এবং সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান মিজান মাঠে রয়েছেন। তিনি বলেন, দীঘ ত্রিশ বছর ধরে কৃষক, শ্রমিক ও মেহনতি মানুষের সেবা করে যাচ্ছেন। মহাজোট সেসব বিবেচনা করে তাকেই মনোনয়ন দেবে। এ ছাড়াও মাঠে রয়েছেন ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলনের সিংড়া উপজেলার সাধারণ সম্পাদক শাহ মোস্তফা ওলিউল্লাহ, উপজেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি প্রকৌশলী আনিসুর রহমান।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App