×

জাতীয়

বিপদসীমার ওপরে বইছে ব্রহ্মপুত্র ও যমুনা

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৯ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ০৩:৫৮ পিএম

বিপদসীমার ওপরে বইছে ব্রহ্মপুত্র ও যমুনা
প্রবল বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে যমুনা নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সূত্রে জানা গেছে, গতকাল মঙ্গলবার সকাল ৬টায় যমুনার পানি বিপদসীমার ১৬ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। এ ছাড়া ব্রহ্মপুত্র নদের পানি বৃদ্ধিও অব্যাহত আছে। বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ভেঙে তলিয়ে গেছে কয়েকশ হেক্টর জমির ফসল। এদিকে পদ্মায় পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় কালুখালী উপজেলার ২৭টি গ্রাম বন্যাকবলিত হয়ে পড়েছে। সংকট দেখা দিয়েছে খাদ্য ও বিশুদ্ধ পানির। আমাদের বগুড়া প্রতিনিধি বাদল চৌধুরী জানান, সারিয়াকান্দিতে যমুনার পানি অপরিবর্তিত রয়েছে। যমুনার পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার চালুয়াবাড়ী, কাজলা, বোহাইল, হাটশেরপুর, কুতুবপুর ও সদর ইউনিয়নে বন্যায় ২ হাজার ৯৬৫ জন কৃষকের ৩৭০ হেক্টর রোপা আমন, ৫০ হেক্টর রোপা আমনের বীজতলা, ২০ হেক্টর আউশ, ১০০ হেক্টর মাষকালাই, ২৫ হেক্টর মরিচসহ ৫৭৫ হেক্টর জমির ফসল পানিতে তলিয়ে গেছে। এদিকে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে চালুয়াবাড়ী ইউনিয়নের হাটবাড়ি, ভাঙরগাছা চরে দুইশ বন্যার্তের মাঝে ১০ কেজি করে চাল বিতরণ করা হয়েছে। বন্যার পানিতে সারিয়াকান্দির চরাঞ্চলের ২২টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কম বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় পাঠদান বন্ধ রাখা হয়েছে। সোনাতলা উপজেলা এলাকার ৮টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ঢলের পানি প্রবেশ করায় সেখানেও পাঠদান বন্ধ রয়েছে। অপরদিকে যমুনা নদীসংলগ্ন ধুনট এলাকার ৪টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পানি ঢুকে পড়েছে। সারিয়াকান্দি উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার গোলাম সাদেক জানান, বন্যার কারণে উপজেলার নিজাম উদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয়, টেংরাকুড়া মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও আবু আব্দুল্লাহ দাখিল মাদ্রাসার ক্লাস অন্যত্র নেয়া হচ্ছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী হাসান মাহমুদ জানান, পানি বৃদ্ধি অব্যাহত আছে। আগামী ২০ সেপ্টেম্বর নাগাদ যমুনায় পানি আরো বাড়তে পারে। কোথাও ভাঙনের আশঙ্কা নেই। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাবিহা সুলতানা জানিয়েছেন, চর এলাকার কিছু নিচু এলাকায় ফসল নিমজ্জিতসহ কিছু ঘরবাড়িতেও ঢুকেছে। এসব পরিবারকে ত্রাণ দেয়া শুরু হয়েছে। ফুলছড়ি (গাইবান্ধা) প্রতিনিধি জানান, ব্রহ্মপুত্র নদের পানির চাপে গাইবান্ধার ফুলছড়িতে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বেড়িবাঁধ ভেঙে দুটি ইউনিয়নের পাঁচটি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এতে ৩৫০ হেক্টর জমির আমনসহ বিভিন্ন ফসল তলিয়ে গেছে। ব্রহ্মপুত্র নদের পানি গতকাল বৃদ্ধি না পাওয়ায় ফুলছড়ি উপজেলার সার্বিক বন্যা পস্থিতিতি অপরিবর্তিত রয়েছে। গতকাল বিকেল ৪টায় ব্রহ্মপুত্র নদের পানি ফুলছড়িঘাট পয়েন্টে বিপদসীমার ৭ সে.মি. ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। সকালে ফুলছড়ি উপজেলার কঞ্চিপাড়া-কাইয়ারহাট বন্যা নিয়ন্ত্রণ বেড়িবাঁধের পূর্ব কঞ্চিপাড়া এলাকায় ২০০ ফুট অংশ ভেঙে যায়। এতে কঞ্চিপাড়া ইউনিয়নের পূর্ব কঞ্চিপাড়া, কাইয়ারহাট ও পাশর্^বর্তী উড়িয়া ইউনিয়নের খলাইহারা, মশামারি ও মধ্য উড়িয়া গ্রামের নিম্নাঞ্চল তলিয়ে গেছে। এসব গ্রামের দুই শতাধিক মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। এ ছাড়া চলতি রোপা আমন ক্ষেত তলিয়ে গেছে। গ্রামের বসতবাড়িতে পানি উঠতে শুরু করেছে। মধ্য উড়িয়া গ্রামের আফছার আলী বলেন, বাঁধটি ভেঙে যাওয়ায় আমনের ক্ষেত তলিয়ে গেছে। বাড়িতেও বন্যার পানি উঠতে শুরু করেছে। বর্তমানে খুব অসুবিধার মধ্যে আছি। ফুলছড়ি উপজেলা কৃষি অফিসার মো. আসাদুজ্জামান বলেন, বেড়িবাঁধ ভেঙে কঞ্চিপাড়া ও উড়িয়া ইউনিয়নের ৩৫০ হেক্টর জমির আমন ক্ষেতসহ বিভিন্ন ফসল তলিয়ে গেছে। উড়িয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মহাতাব উদ্দিন বলেন, বেড়িবাঁধটি ভেঙে যাওয়ায় দুই শতাধিক শিক্ষার্থী ও প্রায় আড়াই হাজার মানুষকে ভোগান্তির শিকার হতে হচ্ছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা বালুর বস্তা ফেলে ভেঙে যাওয়া রাস্তার অংশটি মেরামত করে দেয়ার আশ্বাস দিয়েছেন। গাইবান্ধা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মাহবুবুর রহমান বলেন, নদ-নদীগুলোতে আরো পানি বাড়বে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। ভাঙন ও ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা চিহ্নিত করে জরুরি পদক্ষপে নেয়া হচ্ছে। ইসলামপুর (জামালপুর) প্রতিনিধি মোরাদুজ্জামান জানান, জামালপুর জেলার ইসলামপুরে যমুনা-বহ্মপুত্র নদের পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় যমুনার পানি বাহাদুরাবাদ ঘাট পয়েন্টে বিপদসীমার ১০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। উপজেলার কয়েকশ একর রোপা আমন পানির নিচে তলিয়ে গেছে এবং বেরকুশা, বেলগাছা, আজমবাদ, বামনা, ডেবরাইপেচ, দেওয়ানপাড়া, মন্নিয়া, বরুল ও সিন্দুরতলী গ্রামের শত শত মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। চিনাডুলী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুস সালাম জানান, তার ইউনিয়নের ১০টি গ্রামে বন্যার পানি ঢুকে পড়েছে। বেলগাছা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আ. মালেক জানান, এসব এলাকায় ব্যাপক নদীভাঙন অব্যাহত রয়েছে। উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ কর্মকর্তা মেহেদী হাসান টিটু জানান, বন্যার্তদের জন্য সব ধরনের সহযোগিতায় প্রস্তুত প্রশাসন। কালুখালী (রাজবাড়ী) প্রতিনিধি শহিদুল ইসলাম জানান, পদ্মার পানি বেড়ে যাওয়ায় রাজবাড়ীর কালুখালী উপজেলার ২৭ গ্রাম বন্যাকবলিত হয়ে পড়েছে। গ্রামগুলো হলো রতনদিয়া ইউনিয়নের লস্করদিয়া নারানপুর, সাভারেপাড়া, পশ্চিম হরিনবাড়ীয়া, লস্করদিয়া, কৃষ্ণনগর, ভবানীপুর, ভাগলপুর, হরিনাডাঙ্গা, চররাজপুর, বিজয়নগর, নারানপুর, আলোকদিয়া, কলসতলা, রামনগর, খাপুরে, কাসিনাথপুর, বহরের কালুখালী, কামিয়া ও বিশরশি। এ ছাড়া কালিকাপুর ইউপির উত্তর কালুখালী, মাঠকালুখালী, ঠাকুরপাড়া, পাড়াবেলগাছি, বল্লবপুর, পুরাতন কালুখালী ও নারায়রপুর। এসব এলাকার প্রায় ১০ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছে। বিশুদ্ধ পানি ও খাদ্যের চরম সংকট চলছে। লস্করদিয়া নারায়নপুরের হবিবর, বিল্লাল ও আকবর জানান, কয়েক দিন আগে নদীভাঙনে ভিটেবাড়ি বিলীন হয়ে গেছে। এরপর বন্যা দেখা দেয়ায় অতি কষ্টে দিনযাপন করছি। জানা গেছে, এসব মানুষের পুনর্বাসনের কোনো উদ্যোগ নেয়া হয়নি। তারা রিলিফ বা সরকারি কোনো সহায়তাও পাননি। কালিকাপুর ইউপির সদস্য বিল্লাল মন্ডল জানান, বন্যাকবলিতদের তালিকা তৈরি করে উপজেলায় পাঠানো হয়েছে। ত্রাণ হাতে পেলেই বিতরণ করা হবে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App