×

পুরনো খবর

ত্রাণ নয়, ভূমি চায় ক্ষতিগ্রস্তরা

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৯ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ১১:২৬ এএম

ত্রাণ নয়, ভূমি চায় ক্ষতিগ্রস্তরা
ব্যাপক মাত্রায় নদীভাঙন শুরুর পর সরকারের পক্ষ থেকে পুনর্বাসনসহ বিভিন্ন আশ্বাস দেয়া হলেও সেগুলো আজও বাস্তবায়ন হয়নি। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারপ্রতি ছয় হাজার টাকা, দুই বান্ডেল টিন এবং ৩০ কেজি চাল বিলি করেই দায়িত্ব শেষ করেছে স্থানীয় প্রশাসন। গতকাল ভাঙন এলাকা পরিদর্শন করে ত্রাণমন্ত্রী মোফাজ্জাল হোসেন চৌধুরী মায়াও কিছু ত্রাণ বিতরণ করেছেন। কিন্তু সরকারের কাছে ত্রাণ বা খাস জমি নয়, নদীর গ্রাসে চলে যাওয়া ভূমি উদ্ধার চায় ভাঙনের শিকার শরীয়তপুরের নড়িয়াবাসী। মুলফৎগঞ্জ বাজারে পান দোকানদার পিঞ্জির আলী সোহেল (৫২) বলেন, নদীভাঙন দেখে আমরা বড় হইছি। কিন্তু গত দেড় বছরে নদী যে হারে ভাঙছে তা এই বয়সে দেখি নাই। ত্রাণ চাই না, আমাদের জমি আমাদের ফেরত দেয়া হোক। সাধুর বাজার দাসপাড়ার নিয়াশা মন্ডল (৫০) বলেন, ‘নদী আমাদের ঘরবাড়ি, জমি সব নিছে। এখন আমরা খোলা আকাশের নিচে থাকি। আমাগো ত্রাণের দরকার নাই। আমাগোর জমি উদ্ধার করে আমাগো ফেরত দিক।’ হাজি নেয়ামত উল্লাহ (৮০) বলেন, প্রতি বছরই নদী ভাঙে। বেড়িবাঁধ নির্মাণের দাবি আমাদের দীর্ঘদিনের। কিন্তু আজও সেই দাবি পূরণ হয়নি। বেড়িবাঁধ হলে এত মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হতো না। এদিকে স্থায়ীভাবে ভাঙন রোধে শরীয়তপুরের জাজিরা ও নড়িয়া উপজেলার প্রায় ৯ কিলোমিটারজুড়ে পদ্মার ডান তীর রক্ষা প্রকল্প নামে একটি প্রকল্প গত জানুয়ারি মাসে একনেক সভায় পাস হয়। পদ্মা সেতু থেকে ১৬ কিলোমিটার দূরে এ প্রকল্প বাস্তবায়নে ব্যয় ধরা হয়েছে এক হাজার ৯৭ কোটি টাকা। কিন্তু সাত মাস পেরিয়ে গেলেও সেই কাজের কোনো অগ্রগতি নেই। স্থানীয়দের অভিযোগ, শরীয়তপুরের নদীভাঙন সম্পর্কে প্রায় চার মাস আগেই পূর্বাভাস দেয়া হয়েছিল। কিন্তু কোনো উদ্যোগ নেয়া হয়নি। ক্ষোভ প্রকাশ করে এলাকাবাসী বলেন, নদী সবকিছু নেয়ার পর এখন তোড়জোড় শুরু হইছে। জিও ব্যাগ ফেলতেছে। ড্রেজিং মেশিন আনতেছে। এই উদ্যোগ আগে নিলে আমাগো ঘরবাড়িগুলো আজ পানির তলে থাকত না। কেদারপুর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান ইমাম হোসেন দেওয়ান বলেন, আমাদের গ্রামের কাছাকাছি নদীভাঙন শুরু হয় ২০০৯ সালে। গত বছর থেকে তীব্রভাবে নদীভাঙন শুরু হয়েছে। এ বছর প্রধানমন্ত্রী একটি বড় প্রকল্পের অনুমোদন দেন। কিন্তু কোনো কাজই হয়নি। আগে থেকে ব্যবস্থা নিলে এত ক্ষয়ক্ষতি হতো না। এত মানুষ নিঃস্ব হতো না। গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে পদ্মার নদীভাঙন এলাকা পরিদর্শন করেন ত্রাণমন্ত্রী মো. মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া। ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে তিনি ত্রাণ বিতরণ করেন। এর আগে সকালে নৌ-মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. আব্দুস সালাম ও বিআইডব্লিউটিএর চেয়ারম্যান মো. মোজাম্মেল ভাঙন এলাকা পরিদর্শন করেন। বাঁধ দিয়ে নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাওয়া জমি উদ্ধার করা সম্ভব কিনা এ প্রসঙ্গে নদী রক্ষা টাস্কফোর্সের প্রধান কাজী তোফায়েল হোসেন বলেন, স্থানীয়দের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে পদ্মার ডান তীরে ড্রেজিং করে ভেঙে পড়া ভূমি উদ্ধার করা সম্ভব। তবে এটি ব্যয়বহুল, সময়সাপেক্ষ। ঝুঁকির আশঙ্কাও রয়েছে। স্থায়ীভাবে বাঁধ নির্মাণের পর ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে যে জমি পাওয়া যাবে সেখানে তীর রক্ষায় আরো একটি বাঁধ নির্মাণ করতে হবে। তিনি জানান, বিআইডব্লিউটিএ এবং পানি উন্নয়ন বোর্ডের ১০ সদস্যবিশিষ্ট একটি দল জরিপকাজ পরিচালনার জন্য ইতোমধ্যে নদীভাঙন এলাকায় এসে পৌঁছেছে। জরিপের রিপোর্ট পাওয়ার পর ড্রেজিংয়ের কাজ শুরু হবে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App