×

মুক্তচিন্তা

জাতি আরেকটি দায় থেকে মুক্তি পাবে

Icon

কাগজ অনলাইন প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৯ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ০৭:৩১ পিএম

নারকীয় এ ঘটনার পরিকল্পনাকারী, হুকুমদাতা, ঘাতকদের বাঁচানোর ষড়যন্ত্রকারী কারা- এসব উদঘাটিত হওয়া খুবই জরুরি জাতীয় নিরাপত্তা ও ন্যায়বিচারের স্বার্থে। এর আগে যেমন বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচারকাজ সম্পন্ন হয়েছে, তেমনি গ্রেনেড হামলার বিচারও সম্পন্ন হবে, অপরাধীরা সর্বোচ্চ শাস্তি পাবে এ প্রত্যাশা সবার।

ইতিহাসের বর্বরোচিত একুশ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার রায় ঘোষণা করা হবে আগামী ১০ অক্টোবর। রাষ্ট্র ও আসামি পক্ষের আইনি পয়েন্টের ওপর যুক্তিতর্ক শেষে রায় ঘোষণার জন্য এ দিন নির্ধারণ করা হয়। জঘন্যতম এই নৃশংস গ্রেনেড হামলার ঘটনায় হত্যা ও বিস্ফোরক আইনের দুই মামলার যুক্তিতর্ক উপস্থাপন গত মঙ্গলবার শেষ হয়েছে। এ রায়ের মধ্য দিয়ে বহুল আলোচিত ১৪ বছরের অপেক্ষার পালা শেষ হচ্ছে। আর জাতি আরেকটি দায় থেকে মুক্তি পাবে।

২০০৪ সালের ২১ আগস্ট। এই দিন বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে আওয়ামী লীগ আয়োজিত সন্ত্রাসবিরোধী সমাবেশে উপর্যুপরি গ্রেনেড হামলায় প্রয়াত রাষ্ট্রপতি মো. জিল্লুর রহমানের সহধর্মিণী ও মহিলা আওয়ামী লীগ নেত্রী বেগম আইভি রহমানসহ ২৪ জন নিহত হন। আহত হন প্রায় ৪শ আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীসহ সাধারণ মানুষ। একটি রাজনৈতিক দলের নেতৃত্বকে নিশ্চিহ্ন করার এই নৃশংস তৎপরতা নজিরবিহীন। এটা স্পষ্ট যে, হত্যাকাণ্ডের মূল টার্গেট ছিলেন শেখ হাসিনা। এর আগে তিনি বহুবার হত্যা টার্গেট হয়েছিলেন। গণতন্ত্রকে রক্ষা, জঙ্গিবাদকে নির্মূল ও অসাম্প্রদয়িক বাংলাদেশ বিনির্মাণে শেখ হাসিনার নেতৃত্বের বিকল্প নেই ভেবেই হামলাকারীরা তার নেতৃত্বকে ধ্বংস করার জন্য বারবার আঘাত করেছে। ঘৃণ্য ওই গ্রেনেড হামলার পর তৎকালীন সরকার অপরাধীদের রক্ষায় যে তোড়জোড় শুরু করে তা সভ্য সমাজে কল্পনা করাও কঠিন। আক্রান্ত আওয়ামী লীগকেই এ হামলায় জড়িত প্রমাণের চেষ্টা তখনকার তদন্তকে পরিণত করে প্রহসনে। প্রকৃত ঘটনা ধামাচাপা দিতে, তদন্ত ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করতে ঘটনার আলামত নষ্টসহ হেন কোনো কাজ নেই যা করেনি বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার। জজ মিয়া নামক এক অপ্রকৃতিস্থ ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করে আসামি বানানো ছাড়াও শৈবাল সাহা পার্থসহ ২২ জনকে বিভিন্ন সময় গ্রেপ্তার করে সাজানো স্বীকারোক্তি আদায়ের জন্য নির্যাতন ও হয়রানি করা হয়। এরপর ২০০৭ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়ে ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার পুনঃতদন্ত শুরু হয়। তখন বেরিয়ে আসতে থাকে অনেক অজানা তথ্য। ২০০৮ সালের ১১ জুন সিআইডি কর্মকর্তা ফজলুল কবীর দুটি অভিযোগপত্র দাখিল করেন। এতে বিএনপি নেতা আবদুস সালাম পিন্টু, তার ভাই মাওলানা তাজউদ্দিন, হুজিবি নেতা মুফতি হান্নানসহ ২২ জনকে আসামি করা হয়। ওই বছরই মামলা দুটি দ্রুতবিচার আদালতে স্থানান্তর করা হয়। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে হামলার বিচার কার্যক্রম শুরু হয়। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনের পর অধিকতর তদন্তের নির্দেশ দেন আদালত। দুই বছর তদন্তের পর ২০১১ সালের ৩ জুলাই তারেক রহমানসহ ৩০ জনকে আসামি করে সম্পূরক চার্জশিট দাখিল করা হয়। এ নিয়ে এ মামলায় মোট আসামির সংখ্যা হয় ৫২ জন। অভিযোগ গঠনের মধ্য দিয়ে ২০১২ সালের ১৮ মার্চ আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয় বিচার প্রক্রিয়া। ১১৯ কার্য দিবস এ মামলার যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করা হয়। এতে রাষ্ট্রপক্ষ নিয়েছে ২৯ কার্য দিবস। বাকি ৯০ কার্য দিবস যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করে আসামি পক্ষ। ২১ আগস্ট হামলা বস্তুতপক্ষে স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের রাজনীতিকেই ধ্বংস করে দেয়ার অপচেষ্টা ছিল। এ হামলা ঘটার ক্ষেত্রে গোয়েন্দা সংস্থাসহ তৎকালীন সরকারের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ব্যর্থতা-নিষ্ক্রিয়তা, এ সংক্রান্ত মামলাকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার ন্যক্কারজনক তৎপরতা, বছরের পর বছর ধরে মামলার তদন্তকাজ অসম্পন্ন রাখা- এসবও অবশ্যই তদন্তের আওতাধীন হওয়া উচিত। নারকীয় এ ঘটনার পরিকল্পনাকারী, হুকুমদাতা, ঘাতকদের বাঁচানোর ষড়যন্ত্রকারী কারা- এসব উদঘাটিত হওয়া খুবই জরুরি জাতীয় নিরাপত্তা ও ন্যায়বিচারের স্বার্থে। এর আগে যেমন বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচারকাজ সম্পন্ন হয়েছে, তেমনি গ্রেনেড হামলার বিচারও সম্পন্ন হবে, অপরাধীরা সর্বোচ্চ শাস্তি পাবে এ প্রত্যাশা সবার।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App