×

মুক্তচিন্তা

বিপর্যয় মোকাবেলায় দীর্ঘমেয়াদি পদক্ষেপ প্রয়োজন

Icon

কাগজ অনলাইন প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৮ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ০৭:২১ পিএম

ক্ষতিগ্রস্তদের ঘুরে দাঁড়াতে সরকারের পক্ষ থেকে সব ধরনের সহায়তা দিতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দেন তিনি। আমরা আশা করছি প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ পালনে সংশ্লিষ্টরা উদ্যোগী হবেন। এই মুহূর্তের করণীয় হচ্ছে, ভাঙনের মুখে বিপর্যস্ত মানুষগুলোর পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা। যারা ঘরবাড়ি হারিয়েছে তাদের আশ্রয়ের ব্যবস্থা করা দরকার।

কীর্তিনাশা পদ্মার ভাঙনে বিলীন হতে চলেছে শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলা। ভাঙনে পদ্মার গর্ভে চলে যাচ্ছে গ্রামের পর গ্রাম। সংবাদপত্র ও সম্প্রচার মাধ্যমে প্রকাশিত খবরে ভাঙনের যে চিত্র পাওয়া যাচ্ছে, তা খুবই বেদনাদায়ক। নদী ভাঙনের ফলে এরই মধ্যে ভিটেমাটি, বাড়িঘর ও সহায়-সম্বল হারিয়ে অন্তত ৬ হাজারের বেশি পরিবার আশ্রয়হীন হয়ে পড়েছে। পদ্মার ভয়াল ভাঙনে আক্রান্ত নড়িয়াবাসীর পাশে দাঁড়ানোর জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও দায়িত্বশীলদের নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আমরা মনে করি, এই বিপর্যয় মোকাবেলায় দীর্ঘমেয়াদি পদক্ষেপ নেয়া প্রয়োজন।

পদ্মার ভাঙন আকস্মিক কোনো বিষয় নয়। পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি ভাঙনপ্রবণ নদী পদ্মার করাল গ্রাসে গত ৫১ বছরে বিলীন হয়েছে ৬৬০ বর্গকিলোমিটার এলাকা। ১৯৭৩ থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত পদ্মার ভাঙনের কারণে জমি, ফসল ও স্থাপনার যে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, তার আর্থিক মূল্য প্রায় ১৪ হাজার ১৪৮ কোটি টাকা। পদ্মার অপ্রতিরোধ্য ভাঙনের মুখে ব্যাপক বিপর্যয় সৃষ্টি হয়েছে নড়িয়ার ধনী-গরিব নির্বিশেষে বিপুলসংখ্যক মানুষের জীবনে। দু-তিনতলা পাকা বাড়ি, অনেক পুরনো ঘরবাড়ি ও প্রাচীন গাছপালা গ্রাস করে নিচ্ছে প্রলয়ঙ্করী পদ্মা। স্থানীয় প্রশাসনের তথ্যানুযায়ী, পদ্মার ভাঙনের শিকার হয়েছে ৫ হাজার ৮১টি পরিবার। ঝুঁকিতে রয়েছে আরো ৮ হাজার পরিবার। তবে স্থানীয়রা বলছেন ৬ হাজারেরও বেশি পরিবার ভাঙনের শিকার হয়েছে। প্রায় ২৫ হাজার মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এদের অধিকাংশই দরিদ্র। পাঁচশ একর জমি, প্রায় তিনশ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, তিনটি প্রাইভেট ক্লিনিক, ৫০ শয্যাবিশিষ্ট একটি হাসপাতালের অর্ধেকেরও বেশি নদীতে চলে গেছে। নদীভাঙন আবহমানকাল থেকে চলে আসা একটি প্রাকৃতিক প্রক্রিয়া। এক কূল ভাঙবে, আরেক কূল গড়বে- এটাই প্রকৃতির নিয়ম। কিন্তু তারও কিছু সীমা-পরিসীমা থাকে, প্রতিরোধেরও কিছু উপায় থাকে। এ বিষয়ে খোদ প্রধানমন্ত্রী স্থানীয় এমপি ও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রীদের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন। সোমবার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভার নিয়মিত বৈঠকে নড়িয়ায় পদ্মা ও উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন এলাকায় নদীভাঙনের কবলে পড়ে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির ঘটনা কেউ না জানানোয় ক্ষোভ প্রকাশ করেন। ক্ষতিগ্রস্তদের ঘুরে দাঁড়াতে সরকারের পক্ষ থেকে সব ধরনের সহায়তা দিতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দেন তিনি। আমরা আশা করছি প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ পালনে সংশ্লিষ্টরা উদ্যোগী হবেন। এই মুহূর্তের করণীয় হচ্ছে, ভাঙনের মুখে বিপর্যস্ত মানুষগুলোর পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা। যারা ঘরবাড়ি হারিয়েছে তাদের আশ্রয়ের ব্যবস্থা করা দরকার। জীবিকা হারিয়ে যাদের জীবনযাপন কষ্টকর হয়ে উঠেছে, তাদের আর্থিক সহযোগিতা বা সহজ শর্তে ঋণের ব্যবস্থা করা যায় কি না- তা বিবেচনা করা প্রয়োজন। কোথাও কারো কোনো গাফিলতি যেন না থাকে, তা নিশ্চিত করতে হবে। দুর্যোগকবলিত অসহায় মানুষ যাতে পর্যাপ্ত পরিমাণে খাদ্য, পানীয় ও আশ্রয় পায়- সেদিকে বিশেষ যত্নবান হওয়ার পাশাপাশি তাদের স্বাস্থ্যঝুঁকির বিষয়েও পূর্ণ প্রস্তুতি থাকা উচিত।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App