×

জাতীয়

চট্টগ্রাম মহানগর আ.লীগের নেতৃত্বে নতুন মেরুকরণ

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৮ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ১২:৪০ পিএম

চট্টগ্রাম মহানগর আ.লীগের নেতৃত্বে নতুন মেরুকরণ
দুই জন দুটি সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানের নেতৃত্বে। আবার দুজনেই চট্টগ্রাম নগর আওয়ামী লীগের শীর্ষ পদে রয়েছেন। একজন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র ও নগর আওযামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দিন। অপরজন চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ- চউকের চেয়ারম্যান এবং নগর আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষ আবদুচ ছালাম। দুজনেই নাগরিক সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান দুটোর শীর্ষ পদে থাকায় নাগরিকদের সুযোগ-সুবিধা দেখভাল করা ও চট্টগ্রামের উন্নয়নে তারা অঙ্গীকারাবদ্ধ। কিন্তু একই রাজনৈতিক দলের শীর্ষ পদে থাকা সত্তে¡ও দুজন চলেছেন ভিন্ন পথে দীর্ঘদিন থেকেই। আবার নগরীর উন্নয়ন, জলাবদ্ধতা নিরসনে একে অপরের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে এবং আকারে ইঙ্গিতে বিষোদ্গার করতেও ছাড়েননি। তবে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে দলের হাইকমান্ডসহ স্থানীয় নেতৃবৃন্দের উদ্যোগে অনেকটা নিজেদের স্বার্থেই সেই দূরত্ব- রেষারেষি ঘুচিয়ে নগরের উন্নয়ন ও সংসদ নির্বাচনে নৌকার প্রার্থীকে বিজয়ী করে আনার জন্য কাজ করার ঘোষণা দিলেন তারা। গতকাল সোমবার চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মিলনায়তনে এই দুই নেতা বসেছিলেন মিটিংয়ে। সঙ্গে অবশ্য নগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাহতাব উদ্দিন, সহসভাপতি খোরশেদ আলম সুজনসহ আরো বেশ কয়েকজন নেতা ছিলেন। নগর আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতা ভোরের কাগজকে জানিয়েছেন, মহানগরীর আওতায় জাতীয় সংসদের ৪টি সংসদীয় আসন আওয়ামী লীগের করায়ত্ত করতে এবং নগরীর সঠিক উন্নয়নে এই সমঝোতা বৈঠকের আয়োজন করা হয়। গতকাল সন্ধ্যায় নগর আওয়ামী লীগের নেতা খোরশেদ আলম সুজন এ প্রতিবেদককে বলেন, ‘নগর আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দের মধ্যে যে সামান্য ভুল বোঝাবুঝি ছিল বা রয়েছে তা নিরসনে আমরা যথাসাধ্য চেষ্টা করছি। শুধু তাই নয়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চট্টগ্রামের পরিকল্পিতভাবে উন্নয়নের জন্য যেসব প্রকল্প দিয়েছেন তা বাস্তবায়নের জন্য নিবিড় সমন্বয় প্রয়োজন। আশা করি, ‘এ দুটি সেবাপ্রদানকারী ও উন্নয়ন সংস্থার নেতৃত্বদানকারী কর্ণধারদের বৈঠকে সে দূরত্ব দূর হয়েছে। তারা উভয়েই সমন্বিতভাবে নগরীর পরিকল্পিত উন্নয়ন ও দলের প্রার্থীদের জিতিয়ে আনার জন্য ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করবেন বলে একমত পোষণ করেছেন।’ প্রসঙ্গত, খোরশেদ আলম সুজন চট্টগ্রাম-১১ আসন থেকে এবং আবদুচ ছালাম চট্টগ্রাম-৮ মনোননয়ন পাওয়ার জন্য কাজ করছেন। বছরখানেক আগেও আ জ ম নাছিরের সঙ্গে খোরশেদ আলম সুজনের দূরত্ব থাকলেও তা এখন বন্ধুত্বের সম্পর্কে দাঁড়িয়েছে। অপরদিকে চট্টগ্রাম-১১ আসনের বিতর্কিত সাংসদ এম এ লতিফের সঙ্গে আ জ ম নাছিরের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক থাকলেও তা সম্প্রতি বৈরিতায় চলে গেছে নানা কারণে। তাই নতুন মেরুকরণ হচ্ছে মহানগর আওয়ামী লীগের নেতৃত্বের মধ্যে। সে জায়গায় নাছির নতুন করে সুজনকে সমর্থন দিচ্ছেন। চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত এ সভায় সভাপতিত্ব করেন নগর আওয়ামী লীগের ভারটপ্রাপ্ত সভাপতি মাহতাব উদ্দিন চৌধুরী। সভা শেষে মেয়র ও সিডিএ চেয়ারম্যান হাত ধরাধরি করে সম্মেলন কক্ষ থেকে বেরিয়ে যান। প্রায় এক বছরেরও বেশি সময় ধরে মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিন বলে আসছিলেন, সিডিএ উন্নয়ন কর্মকান্ডে সিটি করপোরেশনের সঙ্গে সমন্বয় করছে না। এতে নগরীতে জনদুর্ভোগ হচ্ছে বলেও মত ছিল মেয়রের। সমন্বয়হীনতা নিয়ে গত ২১ জুন দলীয় সভায় নাছির ও ছালামের মধ্যে বাকবিতন্ডাও হয়। এরপর সিডিএ চেয়ারম্যান ২৪ জুন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের সমন্বয় সভায়ও অনুপস্থিত থাকেন। পরে আর কোনো সমন্বয় সভাতেও উপস্থিত ছিলেন না ছালাম। তবে গতকাল সামবারের সভায় মেয়র দাবি করেছেন, তাদের মধ্যে কোনো সমন্বয়হীনতা ছিল না। আর ছালামের দাবি, মহানগর আওয়ামী লীগের সঙ্গে তার কোন দূরত্বে নেই। সভায় নাছির বলেন, ‘সমন্বয়হীনতার কারণে জনদুর্ভোগ হচ্ছে এই বক্তব্য সঠিক নয়। তবে জনদুর্ভোগ হচ্ছে এটা অস্বীকার করার উপায় নেই। চউক চেয়ারম্যান ছালাম সাহেব মহানগর আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষ। চউক এই শহরে অনেক মেগাপ্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। আমরাও সিটি করপোরেশনের যতটুকু দায়িত্ব আছে তার আলোকে নগরবাসীকে সেবা দিয়ে যাচ্ছি।’ ‘কেউ কেউ ধারণা করতে পারেন, মেয়র এবং চউক চেয়ারম্যানের কর্মকান্ড যদি প্রশ্নবিদ্ধ করা যায়, কান টানলে মাথা আসে, তাহলে সরকারকেও প্রশ্নবিদ্ধ করা যাবে। তিনি বলেন, নির্বাচন সন্নিকটে। আমরা (মেয়র ও চউক চেয়ারম্যান) সরকারেও আছি। সুতরাং, সরকারের ধারাবাহিকতা যাতে বজায় থাকে, সেই লক্ষ্যে একসঙ্গে কাজ করা আমাদের নৈতিক দায়িত্ব। চট্টগ্রাম মহানগরীর প্রত্যেকটা আসন যাতে আমরা আওয়ামী লীগকে উপহার দিতে পারি, সেটাই আমাদের লক্ষ্য। সুতরাং, এখানে বিভ্রান্তির কোনো সুযোগ নেই। অপরদিকে সভায় নিজেকে চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের কর্মী উল্লেখ করে আবদুচ ছালাম বলেন, ‘আমি পরীক্ষায় পাস করে কিংবা বিসিএস পাস করে সিডিএ চেয়ারম্যান হইনি। আমার একমাত্র যোগ্যতা আমি একজন রাজনৈতিক কর্মী। মহানগর আওয়ামী লীগের আমি একজন ছোট্ট কর্মী। মহানগর আওয়ামী লীগের সঙ্গে দূরত্বেও কোনো সুযোগ নেই। এটা যদি আমি করি তাহলে তো বিশ্বাসঘাতকের তালিকায় আমার নাম উঠবে। মহানগর আওয়ামী লীগের কর্মী হিসেবেই আমি সিডিএ চেয়ারম্যান হয়েছি।’ ষড়যন্ত্রকারীদের সুযোগ দেবেন না উল্লেখ করে আবদুচ ছালাম বলেন, ‘যারা অপপ্রচার চালাচ্ছে, মানুষকে বিভ্রান্ত করছে তাদেও মেসেজ দেয়ার জন্য আজ আমরা মহানগর আওয়ামী লীগের নেতারা বসেছি। আমরা এই সভা থেকে ম্যাসেজ দিতে চাই, উই আর ইউনাইটেড।’ ‘চউক, সিটি করপোরেশন, রেলওয়ে, ওয়াসাসহ সব সরকারি সংস্থা নগরীতে যত উন্নয়ন কাজ করছে সবই মহানগর আওয়ামী লীগের ঝুড়িতে যেতে হবে। আমি শুরু থেকেই দলকে প্রাধান্য দিয়ে এসেছি। এখনো প্রাধান্য দিচ্ছি,।’ চউক চেয়ারম্যান বলেন, ‘চউক’র মাধ্যমে চট্টগ্রাম নগরীতে ২০ হাজার কোটি টাকার উন্নয়ন কাজ হচ্ছে। টানেলসহ বিভিন্ন সরকারি সংস্থার মাধ্যমে হচ্ছে ৫০ হাজার কোটি টাকার উন্নয়ন কাজ। এসব উন্নয়ন করতে গিয়ে জনদুর্ভোগ হচ্ছে, অস্বীকার করা যাবে না। কারণ আমরা বিকল্প কোনো শহর তৈরি করতে পারিনি যে, উন্নয়ন করলে বিদ্যমান শহরের মানুষের দুর্ভোগ হবে না। কি কি কাজ করলে জনগণের দুর্ভোগ লাঘব হবে, সেটা শোনার জন্যই আমি উঠান বৈঠক করি। জনগণের কথা শুনতে যাই।’ মহানগর আওয়ামী লীগের নেতাদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘জনগণের কথা শুনতে হলে আমার সঙ্গে উঠান বৈঠকে চলেন। দেখবেন সরকারের উন্নয়ন কর্মকান্ডে তারা কত আনন্দিত। আমার সঙ্গে গেলে তাদের কথা শুনতে পাবেন।’ খোরশেদ আলম সুজন জানান, আগামী ২০ সেপ্টেম্বর সিএমপি কমিশনার মো. মাহবুবর রহমান ও ওয়াসা চেয়ারম্যান প্রকৌশলী এ কে এম ফজলুল্লাহর সঙ্গে আওয়ামী লীগ নেতারা বৈঠকে বসবেন। সভায় আরো বক্তব্য রাখেন নগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাহতাব উদ্দিন চৌধুরী ও সহসভাপতি আলতাফ হোসেন চৌধুরী বাচ্চু। এ সময় নগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক নোমান আল মাহমুদ, হাসান মাহমুদ হাসনী, শফিক আদনান, সম্পাদকমন্ডলীর সদস্য চন্দন ধর ও মশিউর রহমান, দিদারুল আলমও ছিলেন।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App