×

জাতীয়

জাতীয় রাজনীতির দুর্বলতায় হচ্ছে না ছাত্র সংসদ নির্বাচন

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৭ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ১২:১৭ পিএম

জাতীয় রাজনীতির দুর্বলতায় হচ্ছে না ছাত্র সংসদ নির্বাচন
জাতীয় রাজনীতিতে সহাবস্থানের অভাব এবং রাজনৈতিক দলগুলোর সাংগঠনিক দুর্বলতার কারণে বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজগুলোর ছাত্র সংসদ নির্বাচন হচ্ছে না। ফলে মেধা ও প্রজ্ঞাসম্পন্ন কোনো জাতীয় নেতাও তৈরি হচ্ছে না। এ পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ নেতৃত্বে সংকটের আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, বাংলাদেশের উন্নয়নের স্বার্থেই ছাত্র সংসদ নির্বাচন হওয়া উচিত। বিশ্ববিদ্যালয়গুলো হচ্ছে জ্ঞান-বিজ্ঞান, শিল্প-সাহিত্য, মুক্তবুদ্ধি চর্চার বাতিঘর। পড়াশুনার পাশাপাশি দেশের যে কোনো ক্লান্তিলগ্নে সামনে থেকে নেতৃত্ব দেয় এ দেশের ছাত্রসমাজ। তাদের নেতৃত্ব তৈরির প্রাতিষ্ঠানিক প্লাটফরম হিসেবে কাজ করে ছাত্র সংসদ। ’৫২-এর ভাষা আন্দোলন, গণঅভ্যুত্থান, ৬ দফা আন্দোলন, স্বৈরাচার হঠাও আন্দোলনসহ প্রত্যেকটি আন্দোলনে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছে এ দেশের শিক্ষার্থীদের রাজনীতির প্লাটফরম ছাত্র সংসদগুলো। ছাত্র সংসদের নির্বাচনী নেতারাই পরবর্তী সময়ে জাতীয় রাজনীতিতে নেতৃত্ব দিয়েছেন এবং এখনো দিচ্ছেন। ছাত্র রাজনীতির ইতিহাসে দৃষ্টিপাত করলে দেখা যায়, ১৯২১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার কয়েক বছর পরই ছাত্র রাজনীতি প্রাতিষ্ঠানিক রূপ লাভ করে। ১৯২৪-২৫ সালে প্রথম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) ভিপি মনোনীত করা হয়। ১৯৫৩ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসে সাধারণ শিক্ষার্থীদের ভোটে প্রথম ডাকসু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ’৫২-এর ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে পরে ’৬২-এর শিক্ষা আন্দোলন, ’৬৯-এর গণঅভ্যুত্থান, ’৭১-এর স্বাধীন বাংলাদেশ নির্মাণের লক্ষ্যে রক্তক্ষয়ী জাতীয় মুক্তিসংগ্রাম এবং পরবর্তী সময়ে স্বাধীন বাংলাদেশে স্বৈরাচার ও সামরিকতন্ত্রের বিপরীতে দাঁড়িয়ে গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ গঠনে নেতৃত্ব দিয়েছে ডাকসু। সর্বশেষ ডাকসু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ১৯৯০ সালে। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদ (রাকসু) সর্বশেষ নির্বাচন হয়েছে ১৯৮৯ সালে। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদের শেষ নির্বাচন হয় ১৯৯০ সালে। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (জাকসু) সর্বশেষ নির্বাচন হয় ১৯৯২ সালে। ’৯০ দশক পর্যন্ত এদেশের প্রায় সব উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছাত্র সংসদ নির্বাচন হতো। এই সংসদের মাধ্যমে উঠে আসতো পরবর্তী যোগ্য জাতীয় নেতৃত্ব। ছাত্র সংসদ থেকে উঠে আসা রাশেদ খান মেনন, মতিয়া চৌধুরী, তোফায়েল আহমেদ, আ স ম আবদুর রব, মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম, মাহমুদুর রহমান মান্না, আখতারুজ্জামান, সুলতান মোহাম্মদ মনসুর, মুশতাক হোসেনের মতো বর্তমানে অনেকেই জাতীয় রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছেন। কিন্তু গত ২৮ বছর ধরে দেশের ছাত্র সংসদ নির্বাচন বন্ধ রয়েছে। ফলে জাতীয় নেতৃত্ব তৈরিতে এক ধরনের শূন্যতার সৃষ্টি হচ্ছে। মানসম্মত ও যোগ্যতম নেতৃত্বের অভাবে ব্যবসায়ী ও মাফিয়া সিন্ডিকেটের হাতে চলে যেতে পারে দেশের রাজনীতি। বর্তমানের জাতীয় নেতারাও বিষয়টি স্বীকার করলেও ছাত্র সংসদ নির্বাচনের কার্যকর কোনো উদ্যোগ নিচ্ছেন না তারা। ছাত্র সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানে সরকারের পক্ষ থেকেও দৃশ্যত কোনো বাধা নেই। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনও নির্বাচনের পক্ষে। এরপরও ছাত্র সংসদ নির্বাচন না হওয়ার কারণ সম্পর্কে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. মীজানুর রহমান বলেন, বাংলাদেশের বৃহৎ দুটি ছাত্র সংগঠনের মধ্যে সহাবস্থানের পরিবেশ নেই। ছাত্র সংসদের নির্বাচনের আয়োজন করলেও জাতীয় নির্বাচনের মতো এক পক্ষ কোনো অজুহাতে নির্বাচন বয়কট করবে, তখন ক্ষমতায় যারা আছে তাদের হাতেই নেতৃত্ব চলে যাবে। ছাত্র সংসদের জন্য আগে জাতীয় নির্বাচনে সহাবস্থানের ধারা বহাল থাকতে হবে। এ বিষয়ে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল জেএসডির সভাপতি আ স ম আবদুর রব বলেন, গত ২৮ বছরে দেশে ছাত্র সংসদ নির্বাচন না হওয়ায় ভবিষ্যৎ বাংলাদেশে উন্নতমানের যোগ্যতার এবং একুশ শতকের উপযোগী নেতৃত্ব বিকশিত হওয়ার সুযোগ এবং সামর্থ্য দুটোই নষ্ট হয়েছে। যারাই রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় গেছেন তারাই দলীয় ক্ষমতাকে সুসংহত রাখতে তারাই ছাত্র সংসদ নির্বাচনের পথে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেছে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App