×

জাতীয়

চৌগাছায় আশ্রয়ন প্রকল্পে অনিয়মের অভিযোগ

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৭ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ০১:৪৮ পিএম

চৌগাছায় আশ্রয়ন প্রকল্পে অনিয়মের অভিযোগ
চৌগাছায় আশ্রয়ন প্রকল্পের অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া গেছে। প্রকল্পের আওতায় নারায়ণপুর ইউনিয়নের হাসিনা বেগমের নির্মিত বাড়ি ভেঙে নেয়ার অভিযোগ উঠেছে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) ইবাদত হোসেনের বিরুদ্ধে। ভুক্তভোগী নারায়ণপুর ইউনিয়নের বাহাদুরপুর (বাদেখানপুর) গ্রামের শওকত আলীর অভিযোগ, ইউএনও গত কুরবানি ঈদের পর আশ্রয়ন প্রকল্পের আওতায় নির্মাণাধীন তার বাড়ি ভেঙে নেন। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, আশ্রয়ন প্রকল্পে যার জমি আছে ঘর নেই তার নিজ জমিতে গৃহনির্মাণ উপপ্রকল্পের আওতায় উপজেলার ১১টি ইউনিয়নে ৫৫১টি ঘর নির্মাণ সমাপ্ত হয়। ইতোমধ্যে যশোরের জেলা প্রশাসক ফুলসারা ইউনিয়নের সৈয়দপুর গ্রামে সুবিধাভোগীদের মধ্যে ঘরের চাবি হস্তান্তর করেন। সূত্র জানায়, উপজেলার নারায়ণপুর ইউনিয়নে ৩৪ ব্যক্তি ঘর পেয়েছে। ৩৪ জনের একজন ছিলেন ইউনিয়নের বাহাদুরপুর (বাদেখাঁনপুর) গ্রামের মৃত আনছার আলীর ছেলে ভ্যানচালক শওকত আলী। তার নামেও একটি বাড়ি বরাদ্দ হয়। সে অনুযায়ী বাড়ি নির্মাণের জন্য সব প্রকার মালামাল নিয়ে যাওয়া হয়। শুরু হয় সরকারি বাড়ি নির্মাণের কাজ। ঘরের ভিত নির্মাণসহ অনেক কাজই শেষ হয়। এমন সময় ইউপি মেম্বার বাবুল আক্তার ওই বাড়িতে গিয়ে বলেন, বাড়ি নির্মাণ বন্ধ। আপনাকে বাড়ি দেয়া যাবে না নিষেধ আছে। এই বলে তিনি মিস্ত্রিদের দিয়ে নির্মাণাধীন বাড়ি ভেঙে নিয়ে যান। সরেজমিন পরিদর্শনে দেখা গেছে, আশ্রয়ন প্রকল্পের ঘর নিয়ে যাওয়ার পর দুই ছেলেমেয়ে নিয়ে চার সদস্যের পরিবার জরাজীর্ণ একটি ঘরে থাকছেন। শওকত আলীর স্ত্রী হাসিনা বেগম বলেন, আমার চাচাতো বোনের ছেলে কুষ্টিয়ার অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট হাসান হাবিব তৌহিদ আমাদের একটি বাড়ির ব্যবস্থা করে দেয়ার প্রতিশ্রুতি দেয়। সে মোতাবেক পরে স্থানীয় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আশ্রয়ন প্রকল্পে ‘যার জমি আছে, ঘর নেই তার নিজ জমিতে গৃহ নির্মাণ’ উপপ্রকল্পের আওতায় আমার স্বামী শওকত আলীর নামে একটি বাড়ি বরাদ্দ দেন। তিনি বলেন, গত রোজার ঈদের দুদিন পর বাড়ি তৈরির কাজ শুরু হয়। এর কিছুদিন পর আমার ভাইপো নূর নবীর পাঁচ শতক জমি কিনতে চায় হাসান হাবিব তৌহিদ। সে দাম বলেছিল ১৫ হাজার টাকা শতক। কিন্তু ১৭ হাজার টাকা শতকে অন্য ভাইপোরা ওই জমি কিনে নেয়। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে সে বলে, তোমাকে বাড়ি দেয়া হবে না। ফিরিয়ে নেয়ার ব্যবস্থা করছি। হাসিনা বেগম বলেন, এরপর গত কুরবানির ঈদের ৩-৪ দিন পর মিস্ত্রি পাঠিয়ে বলা হয় ইউএনও স্যার বাড়ি করতে নিষেধ করেছেন। মিস্ত্রিরা এসে বাড়ি ভেঙে নিয়ে যায়। একদিনেই বাড়ি ভেঙে নিয়ে গেছে। অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে চৌগাছা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইবাদত হোসেন বলেন, ঘর কেন ভেঙে নেয়া হয়েছে তা চেয়ারম্যান-মেম্বাররা বলতে পারবেন। আমি কারো দ্বারা প্রভাবিত হইনি। ওই বাড়িটি উদ্বোধন করেছিলাম কিনা মনে নেই। ওই ইউনিয়নের আশ্রয়ন প্রকল্পের তালিকার ১৪ নম্বরে আছে শওকত আলীর নাম। তার বাড়ি ভেঙে নেয়া হলো। অথচ ৬নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য বাবুল আক্তার বাড়ি বরাদ্দ পেয়েছেন কীভাবে এ বিষয়ে ইউএনও বলেন, জনপ্রতিনিধি গরিব হলে তো বাড়ি পাবেন। এতে আইনগত কোনো নিষেধ নেই। এদিকে বাড়ি ভেঙে নেয়ার বিষয়ে কুষ্টিয়ার অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট হাসান হাবিব তৌহিদ বলেন, এটা কীভাবে সম্ভব! আমার কথায় কি বাড়ি বরাদ্দ হয়। আমার কথায় যদি বাড়ি বরাদ্দ হয়, তাহলে তো চাকরি ছেড়ে রাজনীতিতে নামতে হবে। আমি কিছুই জানি না। আর চৌগাছা ইউএনওর সঙ্গে এ বিষয়ে কোনো কথাও হয়নি। তিনি দাবি করেন, শওকত আলীর ২০ শতকের বেশি জমি আছে বলে জানি। তাহলে তো তার আশ্রয়ন প্রকল্পের ঘর পাওয়ার কথা নয়। তবে স্থানীয়ভাবে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শওকত আলীর নামে ১২ শতক ও তার স্ত্রীর নামে ৩ শতক মোট ১৫ শতক জমি রয়েছে। এ সব বিষয়ে ইউপি মেম্বার বাবুল আক্তার বলেন, শওকত আলীর বাড়ি নির্মাণকাজ শুরু হয়েছিল। পরে সেটি ভেঙে নেয়া হয়েছে। তবে কী কারণে, কার নির্দেশে ভেঙে নেয়া হয়েছে জানি না। ইউএনও স্যার ভালো বলতে পারবেন।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App