×

মুক্তচিন্তা

সুশীল নামের কাক ও কোকিল বিবেকেরা

Icon

কাগজ অনলাইন প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৬ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ০৭:৪৯ পিএম

সংস্কৃতি ধ্বংসের শেষ পেরেকটি ঠুকতে আমলাতন্ত্র ও সিন্ডিকেটের সঙ্গে রাজনীতি চলছে সমান তালে। আর সে কফিনে হাতুড়ি মারছে সুশীলরা। দেশে রাজনীতি মোকাবেলা করার জন্য রাজনীতি নেই। দল নেই। এমনকি সংস্কৃতিও এখন আধমরা। সুশীলরা সেদিকে মনোযোগ দিলেই ভালো করবেন। আওয়ামী লীগের দুর্ভাগ্য দেশে, দেশের বাইরে অজস্র সুশীল মেধাবী ও পরিণত মানুষের সমর্থন থাকার পরও তাকে স্তাবকরা ঘিরে থাকে।

আমাদের সময় যারা বুদ্ধিজীবী নামে পরিচিত ছিলেন তাদের নাম এখন সুশীল। এই নাম কেন কে জানে। বাংলা অভিধানে সুশীল শব্দের অর্থ দেখলেই বোঝা যাবে কত নিরীহ হওয়ার কথা এদের। অথচ এখন সুশীল মানে যাদের কাজ কম কথা বেশি তেমন কিছু মানুষ। যাদের আরেক নাম সমালোচক। আপনি ডান হাতে ভাত খেলে যারা ভাবে বাঁ হাতের অপমান করা হয় আর বাঁ হাতে খেলে বলে ডান হাত কি অচল? তারাই সুশীল। নিয়মের বাইরে কথা বলার অধিকার পাওয়া এদের কাণ্ড আমরা সব সময় দেখি। আজ দেখলাম মাহমুদুর রহমান বলেছেন খালেদা জিয়ার মুক্তির আন্দোলন নাকি দ্বিতীয় মুক্তিযুদ্ধের সূচনা। মহান মুক্তিযুদ্ধের এই অবমাননার নামও সুশীল কর্ম। কেন কি কারণে ইনি মুক্ত আমরা জানি না। তবে এটুকু জানি এই মুক্ততার দায় চুকাতেই হবে একদিন। আরো জানি সুশীলরা মুক্তিযুদ্ধ বলতেই ভাবেন বিতর্কিত কিছু। শফিক রেহমান থেকে ফরহাদ মযহার সবাই কোনো না কোনো সময় ছিলেন বিপ্লবী। সেই বিপ্লব কখন যে সুশীলের ছায়ায় অন্ধকার হয়ে ডান-বাম ভুলে একরোখা হয়ে গেছে তারা নিজেরাও টের পাননি। একটা মজার বিষয় এদের সব কাজের মূলে আছে আওয়ামী লীগ বিরোধিতা। আর মুক্তিযুদ্ধের প্রতি অসম্মান। শহীদের সংখ্যা থেকে ভারত, ভারত থেকে পাকিস্তান এসব মিলিয়ে সুশীলের ব্যবসা জমজমাট। এই ব্যবসায়ীরা রাতের আঁধারে সরকারের সুযোগ-সুবিধা নিলেও দিনের বেলায় সরকারবিরোধী।

আওয়ামী লীগের কাছে সবার এত চাওয়া কেন? যারা এর ঘোর বিরোধী, যাদের অন্তরে জামায়াত, ভোটে ধানের শীষ তারাও দেখি চায় আর চায়। দেশের নাগরিক হিসেবে চাওয়ার অধিকার আছে বৈকি। কিন্তু কতটা? আপনি সারাদিন সারারাত শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে কথা বলবেন, নৌকা ডোবানোর কাজ করবেন আর হাহুতাশ করবেন এই সরকারের কাছে চাওয়া ছিল, কিন্তু পেলাম না। এটা কি স্ববিরোধিতা নয়? প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বড় গুণ তিনি স্পষ্টভাষী। যা তার অন্তরে তাই তার মুখে। নব্য সুশীলরা এটা মানতে পারেন না। কেন? কারণ তারা নিজেরাই হিপোক্রেট। কেন জানি না এরা সমাজে পপুলার। ধারণা করি মধ্যবিত্তের দোদুল্যমান মন এদের দিকে ঝুঁকে থাকার কারণ ককটেল রাজনীতি। এরা মনে মনে পাকিদের ভালোবাসে। মুখে মুক্তিযুদ্ধের কথা বলে। ধ্যান ধারণায় আধুনিক দেখায় বা বলে। টাকা পয়সার ধান্ধায় জীবন কাটিয়ে কেউ বাম কেউবা ডান। এদের আমরা হাড়ে হাড়ে চিনলেও কেন জানি এড়াতে পারি না। আসিফ নজরুলের কথাই ধরুন জীবনভর আওয়ামী লীগের মাথা খাবার ধান্ধা আর মুখে বড় বড় কথা। এমন বুদ্ধিজীবীরাই আজ শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে। এদের কথা শুনলে দেশ কোনোদিনও এগুতে পারবে না।

সরকারি দলের সঙ্গে সুশীলদের মতবিরোধের খবর প্রায়ই চোখে পড়ে। দেশে দেখলাম সুশীলদের একাংশ নীরব। যারা নীরব তারাই আওয়ামী লীগের বুদ্ধিজীবী। এদের নীরবতার কারণ দুটো। এক. যারা বলতে চান বা বলার ব্যাপারে আগ্রহী তারা সম্মুখ সারিতে নেই। বাকিরা সরকারের নামে কামানোর কাজে ব্যস্ত। অন্যদিকে এই সুযোগে আর এক অংশ যারা এখন জনপ্রিয় কিংবা আলোচিত তারাই সরব। বলা হয় তারা মন খুলে কথা বলতে পারেন না। পারলে তাদের উধাও হয়ে যেতে হয়। যখন ফিরে আসেন তখন নাকি আর কথা বলেন না। হতে পারে। তবে প্রশ্ন আছে। যখন তারা মুখ খোলেন তখনই তারা আসলে সামান্য শিষ্টাচারও মানেন? জানি না কী কারণে আমাদের দেশে এখন কথার জয়জয়কার। এখন সবাই বলে। শোনার মানুষের সংখ্যা দিনদিন কমছে। আর এই চান্সে তারা সরকার বিরোধিতা আর রাষ্ট্র বিরোধিতা গুলিয়ে মহাআনন্দে রাজাকারী চেতনা ফেরি করেন। আপনি যদি ভালো করে হিসাব মিলিয়ে দেখেন রুটিন মাফিক কথা বলা ছাড়া এদের কোনো ভূমিকা নেই। শেখ হাসিনা যে বলেন তার কাজই তার দুশমন কথাটা আসলেই সত্য। এরা কাজের আলো নিতে না পারা প্যাঁচার মতো। রাত হলে বেরিয়ে আসে আর অশুভ ডাক দিয়ে সমাজকে আতঙ্কিত করে তোলে।

যেটা চোখে লাগে যিনি বা যারাই বলতে আসেন মনে হয় তেতে আছেন। রাতদুপুরে বা মধ্যরাতের কিছু আগে এই আয়োজনগুলোর ভেতর তৃতীয় মাত্রা বা এ জাতীয় কয়েকটি অনুষ্ঠান বাদে বাকিগুলোতে দেখি প্রায়ই ঝগড়াঝাটি লেগে আছে। এই কথা বলার রেওয়াজ এখন রাজনৈতিক নেতাদের বেলায় লাগাম ছাড়িয়ে গেছে। সরকারি দলের নেতারা যখন যা খুশি বলেন। একেবারে টপ লেভেলের মানুষ যখন লাগাম রেখে কথা বলেন না তখন বাকিরাও কাছকাছি যাবেন বৈকি। যে কথা বলছিলাম বিশেষ করে আওয়ামী লীগ সরকারে গেলেই বুদ্ধিজীবী বা সুশীলদের ভেতর এক ধরনের প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়। বিশেষত একদা চীনাপন্থি বাম বা আওয়ামীবিরোধী সব শক্তি চাঙ্গা হয়ে ওঠে। এদের বদ্ধমূল ধারণা দেশ বিক্রি হয়ে যাচ্ছে। কে কার কাছে কতবার বেচল তার হিসাব নিলে এরা আর মুখ দেখাতে পারবেন না। তবু এই ভাঙা রেকর্ড বাজছেই।

বাংলাদেশের রাজনীতিতে সুশীলরা এক সময় সমালোচনা আর আলোচনায় পজিটিভ ভ‚মিকা রাখতেন। এখন তাদের টার্গেট কেবলই শেখ হাসিনা। কৃপা পাওয়ার জন্য বা না পাওয়ার জন্য তার সমালোচনা আর নিন্দা এখন আর মানুষ খায় না। কারণ মানুষ মতিঝিল থেকে সরকারের দাপট দেখে এটা বুঝে গেছে। তার জীবনে শীলদের দরকার থাকলেও সুশীলের দরকার অতটা নেই। যদি এ দেশে আহমদ ছফা কিংবা সরদার ফজলুল করিমের মতো মানুষরা উঠে আসেন যারা কারো মুখের দিকে তাকিয়ে বলেন না বা লেখেন না তবেই হয়তো মানুষ আবার শ্রদ্ধাশীল হয়ে উঠবে।

সুশীলরা ভালোই বুঝেছেন দিনের আলোয় বিরোধিতা করে চোখে পড়লে রাতে আরামে থাকা যায়। সংস্কৃতি ধ্বংসের শেষ পেরেকটি ঠুকতে আমলাতন্ত্র ও সিন্ডিকেটের সঙ্গে রাজনীতি চলছে সমান তালে। আর সে কফিনে হাতুড়ি মারছে সুশীলরা। দেশে রাজনীতি মোকাবেলা করার জন্য রাজনীতি নেই। দল নেই। এমনকি সংস্কৃতিও এখন আধমরা। সুশীলরা সেদিকে মনোযোগ দিলেই ভালো করবেন। আওয়ামী লীগের দুর্ভাগ্য দেশে, দেশের বাইরে অজস্র সুশীল মেধাবী ও পরিণত মানুষের সমর্থন থাকার পরও তাকে স্তাবকরা ঘিরে থাকে। বিএনপির সৌভাগ্য ঘটে বিদ্যা বুদ্ধি না থাকার পর ও ম্যাডামের জন্য জান দিতে রাজি কথিত সুশীলের দল। সেটা আমরা সর্বাধিক প্রচারিত দৈনিকের সম্পাদককে দেখলেই বুঝি। একদা বাম কীভাবে ডিগবাজি খেয়ে সংয়ে পরিণত হতে পারেন। শেখ হাসিনা তেল ও পানির তফাৎ বোঝেন। তাই তার কাছে ভিড়তে না পারার বেদনাও অনেককে বিদ্রোহ করে তোলে বৈকি। একবার ভেবে দেখতে বলি, এই ভদ্রমহিলা বঙ্গবন্ধু কন্যা না থাকলে কোথায় কথা বলবেন? অথচ সেই খাম্বাবাজের দুর্নীতির বরপুত্রের জন্য সুশীলদের যত মায়াকান্না।

যারা চায় বাংলাদেশ এগিয়ে যাক, দেশ ও সমাজ মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বড় হোক, দেশ ও জাতি উন্নতির পথে থাক, তারা সুশীলদের কথায় কান না দিলেই ভালো করবেন। বাক স্বাধীনতা আর বাকযুদ্ধ, বাক মুক্ততা আর বাক সংযমের পার্থক্য বুঝেই তার সীমানা নির্ধারণ করা উচিত। সভ্য সমাজে সেটাই দেখি আমরা। আমাদের সুশীলরা এত বাকপটু তারা সকাল তো সকাল রাত দুপুরেও থামেন না। ফলে সংযম আর সীমানা পেরিয়ে মহাআনন্দে চলছে সুশীল ইজম। একমাত্র শেখ হাসিনাই তাদের পরোয়া করেন না দেখলাম। বঙ্গবন্ধুর কন্যা তো।

অজয় দাশগুপ্ত : কলাম লেখক।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App