×

আন্তর্জাতিক

সম্পত্তির লোভে মালিককে খুন করল পরিচারিকা-ড্রাইভার

Icon

কাগজ অনলাইন প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৬ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ১০:৫৫ পিএম

সম্পত্তির লোভে মালিককে খুন করল পরিচারিকা-ড্রাইভার
বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে শববাহী গাড়ি। পাড়ায় শববাহী গাড়ি ঢুকতে দেখে স্বাভাবিকভাবেই কৌতুহল হয় প্রতিবেশীদের। ঘর থেকে বেরিয়ে এসেছিলেন অনেকেই। পাড়ায় তো কারও মৃত্যু খবর কানে আসেনি তাদের! তাতেই সন্দেহ দানা বেঁধেছিল। আর আশঙ্কা সত্যি করেই কলকাতার সল্টলেকে গাঙ্গুলি পরিবার থেকে চাদর মোড়ানো অবস্থায় এক ব্যক্তিকে বের করে আনতে দেখা গিয়েছিল ওই বাড়ির গাড়িচালককে। সঙ্গে ছিলেন পরিচারিকা। কার মৃত্যু হয়েছে? প্রশ্ন করতেই তেড়ে আসেন পরিচারিকা, গাড়িচালক। প্রতিবেশীরাও চাপ দেন। পরে জানা যায়, বাড়ির মালিক প্রাক্তন কেএমডি কর্মী পৃথিবরণ গঙ্গোপাধ্যায়ের মৃত্যু হয়েছে। তারই দেহ সৎকারের জন্য নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। কিন্তু পাড়ার একজনের মৃত্যুর খবর কেন জানানো হলো না প্রতিবেশীদের? কেন রাতের অন্ধকারে গাড়ি করে শেষকৃত্যের জন্য নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল? কলকাতার সল্টলেকের ইই ব্লকে এক প্রৌঢ়ের মৃত্যুতে উঠে এল চাঞ্চল্যকর তথ্য। সল্টলেকের ইই ব্লকের একটি আবাসনের দোতলায় থাকতেন নগরোন্নয়ন দপ্তরের অবসরপ্রাপ্ত কর্মী পৃথ্বীবরণ গঙ্গোপাধ্যায়। স্ত্রী গত হয়েছেন কয়েক বছর আগেই।তারপর থেকে একাই থাকতেন তিনি। তাকে দেখাশোনা করতেন পুরনো পরিচারিকা জবা চক্রবর্তী। সেই পরিচারিকার দাবি, তার কাজে সন্তুষ্ট হয়ে ২০১৬ সালে ওই ফ্ল্যাটের একাংশ তার নামে লিখে দেন পৃথ্বীবরণ। এলাকাবাসিদের অভিযোগ, জবা পৃথ্বীবরণের বাড়িতে কাউকে প্রবেশ করতে দিতেন না। একই অভিযোগ মৃতের দুই ভাইয়ের। শনিবার সন্ধ্যায় পৃথিবরণ বাবুর বাড়ির সামনে শববাহী গাড়ি দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে সন্দেহ হয় প্রতিবেশীদের। এরপরেই পৃথিবরণের ঘরে গেলে তারা জানতে পারেন, মৃত্যু হয়েছে পৃথিবরণ বাবুর। দেখা যায়, চাদরে মুড়ে দোতলার ফ্ল্যাট থেকে একটি দেহ নামিয়ে আনছেন গাড়িচালক রঞ্জিত সাঁতরা। সেই সময় তাদের আটকে রেখে পরিবারকে খবর দেয় প্রতিবেশীরা। সন্দেহ হওয়ায় দেহ আটকে রাখেন প্রতিবেশীরা। ততক্ষণে চলে আসেন বৃদ্ধের ভাই দিব্যেন্দু গঙ্গোপাধ্যায়। তিনি অভিযোগ করেন, পরিবারের কেউ দেখা করতে গেলে ওই পরিচারিকা পৃথ্বীবাবুর শারীরিক অসুস্থতার অজুহাতে দেখা করতে দিতেন না। দিব্যেন্দু বলেন, ‘ওই পরিচারিকা এর আগে দাবি করেছিলেন,দাদা ফ্ল্যাটের একাংশ তাকে লিখে দিয়েছিলেন ২০১৬ সালে।’ ওই আবাসনের তিনতলার এক বাসিন্দা বলেন, ‘আমরা জিজ্ঞাসা করি কখন মৃত্যু হয়েছে? র়ঞ্জিত একেক বার একেক রকম উত্তর দেন। তাতে আমাদের সন্দেহ হয়। আমরা বৃদ্ধের ভাইকে ফোন করি। তিনি এই ব্লকেই থাকেন। ভাইয়ের মৃত্যুর ব্যাপারে তিনিও কিছু শোনেননি বলে আমাদের জানান।’ উত্তেজিত এলাকাবাসী চড়াও হন জবার ওপর। তাকে মারধর করা হয়। স্থানীয় বাসিন্দাদের প্রশ্নের মুখে জবা এবং তার সঙ্গী রঞ্জিত একটি মৃত্যু সনদ দেখান। সেটি কাদাপাড়া এলাকার এক চিকিৎসকের। জবা এবং রঞ্জিত দাবি করেন, স্থানীয় কোনও চিকিৎসক মৃত্যু সনদ দিতে অস্বীকার করায় তারা কাদাপাড়ার চিকিৎসকের কাছ থেকে মৃত্যু সনদ নিয়ে এসেছেন। তাতে আরও সন্দেহ হয় বৃদ্ধের পরিবারের। রাতেই বিধাননগর পূর্ব থানায় অভিযোগ দায়ের করেন বৃদ্ধের ভাই দিব্যেন্দু। অভিযোগে তিনি জানিয়েছেন, হুগলির পুরশুড়ার বাসিন্দা জবা এবং ফুলবাগানের বাসিন্দা রঞ্জিত ষড়যন্ত্র করে দীর্ঘদিন ধরে পৃথ্বীবরণকে অল্প অল্প করে বিষ খাইয়েছেন এবং তার অসুস্থতার সুযোগ নিয়ে সম্পত্তি হাতানোর পরিকল্পনা করেছিলেন। রাতেই অভিযুক্তদের আটক করা হয়।জি়জ্ঞাসাবাদের পর সকালে দু’জনকেই গ্রেপ্তার করা হয়। পুলিশ সূত্রে খবর, জেরায় রঞ্জিত জানিয়েছেন, কাদাপাড়ার ওই চিকিৎসক তার পূর্ব পরিচিত। পুলিশ সেই চিকিৎসককেও ডেকে পাঠিয়েছে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App