×

পুরনো খবর

মৌসুমি প্রার্থীদের ছড়াছড়ি দুদলেই

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৬ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ০৩:৩৫ পিএম

মৌসুমি প্রার্থীদের ছড়াছড়ি দুদলেই
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দিনাজপুর-৪ চিরিরবন্দর-খানসামা উপজেলার ১৮টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত এই সংসদীয় আসনটি। এর মধ্যে ১২টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত চিরিরবন্দর উপজেলা আর ৬টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত খানসামা উপজেলা। ফলে প্রার্থীর জয়-পরাজয় নির্ভর করে চিরিরবন্দর উপজেলার ভোটারদের ওপর। বর্তমান সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী এ আসনের সংসদ সদস্য হওয়ায় রাজনৈতিকভাবে এ আসনটি গুরুত্ব বহন করছে। তবে ভোটারদের সঙ্গে বর্তমান এমপির যোগাযোগ কম থাকায় এলাকার সাধারণ ভোটাররা নতুন মুখ দেখতে চাচ্ছেন বলে একাধিক দলীয় সূত্রে জানা যায়। সাবেক এমপি ও জাতীয় সংসদের সাবেক হুইপ মিজানুর রহমান মানু একজন পরিছন্ন মানুষ হিসেবে এলাকায় তার ব্যাপক পরিচিতি ও জনপ্রিয়তা রয়েছে। তিনি এমপি থাকাকালে তার নির্র্বাচনী এলাকার সর্বস্তরের মানুষের সঙ্গে সুসম্পর্ক থাকায় এখনো তিনি জনপ্রিয়তার শীর্ষে রয়েছেন। এ ছাড়াও ডাক্তারি করে প্রচুর টাকার পাহাড় বানিয়ে নির্বাচন করার খায়েস জমেছে ডা. আমজাদ হোসেনের। তিনি নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করার আশায় আওয়ামী লীগের নীতি-নির্ধারণী মহলে ব্যাপক দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছেন বলে জানা যায়। তিনি রাজনীতির সঙ্গে তেমন একটা জড়িত না থাকলেও ইদানীং নৌকা মার্কার টিকেট পাওয়ার আশায় এলাকার বিভিন্ন অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণসহ আর্থিক সহযোগিতাও করছেন। তবে এ আসনে আওয়ামী লীগের দুর্দিনের তৃণমূল নেতাকর্মীদের সঙ্গে ডাক্তার আমজাদের কোনো সম্পর্ক বা দলীয় কোনো পদ-পদবি নেই বলেও তারা জানান। তিনি এ আসনে এবার একজন মৌসুমি পাখি। এ আসনে বিএনপির আর একজন অতিথি পাখি শিল্পপতি লুসাকা গ্রুপের চেয়ারম্যান আলহাজ হাফিজুর রহমান। তিনি দীর্ঘদিন ধরে বিএনপির পক্ষে কিছু কার্যক্রম পরিচালনা করলেও বর্তমানে দলীয় কোনো কর্মকাণ্ড তাকে দেখা যায় না। স্থানীয়ভাবে দলে তার কোনো অবস্থান না থাকার কারণে হাইকমান্ড থেকেও তাকে গণনায় আনবে না বলে বিএনপির একাধিক নেতাকর্মী জানান। এ ছাড়াও স্থানীয় আওয়ামী লীগের পদ-পদবি শূন্য অনেক মৌসুমি নেতারাও মনোনয়ন পেতে ব্যাপক দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছেন। অপরদিকে জেলা বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক আক্তারুজ্জামান মিয়া পরপর দুবার এমপি নির্বাচিত হয়ে এলাকার ব্যাপক উন্নয়ন করায় জনপ্রিয়তার শীর্ষে রয়েছেন। এ ছাড়া দিনাজপুর-৪ (চিরিরবন্দর-খানসামা) উপজেলা জামায়াতের ঘাঁটি বলা হয়। ফলে জামায়াত নেতাকর্মীরা মনে করেন, সুষ্ঠু নির্বাচন হলে বর্তমান চিরিরবন্দর উপজেলা চেয়ারম্যান ও জামায়াতের সাবেক জেলা আমির আলহাজ আফতাব উদ্দিন মোল্লা মনোনয়ন পেলে বিপুল ভোটে জয়লাভ করবেন। জোটের অন্যতম শরিক জামায়াত ২০ দলীয় জোটের পক্ষ থেকে মনোনয়ন পেতে বিএনপির সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে চলেছেন। ভোটারদের মতে, আফতাব উদ্দিন মোল্লা জোটের পক্ষ থেকে মনোনয়ন পেলে তার জয়ের পথ অনেকটা সহজ হবে। আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্র্বাচন ঘনিয়ে আসায় এলাকার মানুষের জল্পনা-কল্পনারও শেষ নেই। এখন ওই এলাকার হাট-বাজার, হোটেল, চায়ের দোকানগুলোতে আলোচনার মূল বিষয় কে পাচ্ছেন মনোনয়ন? কে পরবেন জয়ের মালা। নির্বাচন ঘনিয়ে আসায় রাজনৈতিক দলের সম্ভাব্য প্রার্থীরা বিভিন্ন স্থাপনায় পোস্টার ও বিলবোর্ড লাগিয়ে দিয়েছেন। এ ছাড়াও রাস্তাঘাট, হাট-বাজার ও ভোটারদের বাসায় বাসায় গিয়ে শুভেচ্ছা বিনিময় ও বিভিন্ন রকমের আশ্বাস দিয়ে যাচ্ছেন। মূলত দলীয়ভাবে এই প্রার্থীরা ছাড়াও দুই বড় দল থেকে মনোনয়ন পাওয়ার আশায় অনেকেই বিলবোর্ডে প্রচারণা চালাচ্ছেন। তবে এ আসনটি বেশির ভাগ সময়ে আওয়ামী লীগের দখলে ছিল। স্বাধীনতার পর এই আসনটিতে আওয়ামী লীগ ৬বার, বিএনপি ২বার এবং জাতীয় পার্টি জয়লাভ করেছে একবার। নির্বাচনী জরিপ নিয়ে কাজ করা একটি বেসরকারি সূত্র জানায়, বিগত উপজেলা পরিষদ, ইউনিয়ন পরিষদ ও জাতীয় নির্বাচনের প্রাপ্ত ভোটের প্রায় ৮৫ হাজার রিজার্ভ ভোট আওয়ামী লীগের, বিএনপির রিজার্ভ ভোট ৮০ হাজার এবং জামায়াতের ৪০/৪৫ হাজার। নির্দলীয় এবং সাধারণ মানুষ যারা কোনো দল করে না তাদের ভোট রয়েছে প্রায় ৫০/৫৫ হাজার। এর মধ্যে ১৯৭৩ সালে আওয়ামী লীগের প্রার্থী এডভোকেট শাহ মাহতাব আহমেদ, ১৯৭৯ সালে আওয়ামী লীগের প্রার্থী এডভোকেট শাহ মাহতাব আহমেদ, ১৯৮৬ সালে আওয়ামী লীগের মিজানুর রহমান মানু, ১৯৮৮ সালে জাতীয় পার্টির প্রার্থী শাখাওয়াত হোসেন, ১৯৯১ সালে আওয়ামী লীগের মিজানুর রহমান মানু, ১৯৯৬ ও ২০০১ সালে বিএনপির প্রার্থী আখতারুজ্জামান মিয়া, ২০০৮ এবং ২০১৪ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের আবুল হাসান মাহমুদ আলী নৌকার প্রতীক নিয়ে জয়লাভ করেন। নির্বাচনে বিজয়ের ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে এবারো এই আসনটি পেতে চায় ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ। এদিকে বিএনপি-জামায়াতের সঙ্গ জোটভুক্ত নির্বাচন করলে জয় নিশ্চিত বলে মনে করেন বিএনপির আখতারুজ্জামান মিয়া। আওয়ামী লীগের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী মনোনয়ন পেলে নির্বাচনে তুমুল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে বলে মনে করেন এলাকাবাসী। তবে সাধারণ ভোটাররা এমন প্রার্থী চায়, যার কাছে যাওয়া যায় এবং এলাকার উন্নয়ন হয়। জেলা নির্বাচন অফিসের তথ্যমতে, দিনাজপুর-৪ (চিরিরবন্দর-খানসামা) আসনে মোট ভোটার সংখ্যা ৩ লাখ ৩৪ হাজার ৬৬৯। নারী ভোটার ১ লাখ ৬৬ হাজার ৬২ এবং পুরুষ ভোটার ১ লাখ ৬৮ হাজার ৬০৭ জন। এই নির্বাচনী এলাকার নেতাকর্মী ও ভোটাররা জানান, বর্তমান সরকারি দল আওয়ামী লীগের অবস্থান শক্ত থাকলেও সে অবস্থান ধরে রাখতে পারেনি বর্তমান পররাষ্টমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী এমপি। কেন্দ্রীয় পর্যায়ে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ ভালো থাকলেও স্থানীয় পর্যায়ে ব্যাপক ভাটা পড়েছে। এ অবস্থায় মাহমুদ আলীর পক্ষে নির্র্বাচনী বৈতরণী পার হওয়া বেশ কষ্টসাধ্য হবে বলে রাজনীতিক মহল মনে করেন। এ ক্ষেত্রে ২বারের সংসদ সদস্য সাবেক হুইপ মিজানুর রহমান মানু মনোনয়ন পেলে বিএনপি বা জামায়াত প্রার্থীর সঙ্গে তার হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবে বলে অনেকে মনে করেন।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App