×

জাতীয়

নির্বাচনে নাশকতার ছক জামায়াত-শিবিরের

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৬ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ১১:২৯ এএম

নির্বাচনে নাশকতার ছক জামায়াত-শিবিরের
নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সহিংস রাজনৈতিক কর্মসূচির মধ্য দিয়ে দেশে নাশকতার পরিকল্পনা করেছে জামায়াত-শিবির। দেশের অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা, হাসপাতালসহ সরকারি-বেসরকারি স্থাপনায় নাশকতার পরিকল্পনা রয়েছে তাদের। এ লক্ষ্যে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগসহ স্বাধীনতার পক্ষের কিছু সুবিধাবাদীর হাত ধরে বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক সংগঠনে অনুপ্রবেশ করে নিজেরা সংগঠিত হচ্ছে। পরিচয় গোপন করে জামায়াত-শিবিরের অনুসারীরা ছাত্রলীগ-যুবলীগে ঢুকে দ্বন্দ্ব-সংঘাত সৃষ্টি করে দলের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করছে। আগামী নির্বাচনে গলায় নৌকা প্রতীকের কার্ড ঝুলিয়ে তারা ভোটকেন্দ্রে সহিংসতার মাধ্যমে ভোটের ফল নিজেদের অনুকূলে নেয়ারও পরিকল্পনা করছে। সম্প্রতি জামায়াতের চট্টগ্রামের শীর্ষ নেতা ও সাবেক সাংসদ শাহজাহান চৌধুরীসহ কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ নেতা ও কর্মীকে গ্রেপ্তারের পর এসব তথ্য পেয়েছে চট্টগ্রাম নগর গোয়েন্দা পুলিশ এবং কোতোয়ালি, সদরঘাট, সাতকানিয়া থানা পুলিশ। গত ২৩ জুন শনিবার রাতে নগরীর স্টেশন রোডের পর্যটন করপোরেশনের মোটেল সৈকতে অভিযান চালিয়ে মহানগর জামায়াতে ইসলামীর আমির ও ইসলামী ছাত্র শিবির মহানগর দক্ষিণের সভাপতিসহ ২১০ নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। ‘পারাবার’ নামে একটি সাংস্কৃতিক সংগঠনের ব্যানারে ঈদ পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানের নাম দিয়ে তারা রাষ্ট্রবিরোধী কর্মকাণ্ডের পরিকল্পনা নিতে বৈঠকে জড়ো হয়েছিল। পরে পুলিশ তাদের ফেসবুক ও অন্যান্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ঘেঁটে দেখে, তাদের মধ্যে অন্তত ৭০ শতাংশ যুবকের ফেসবুকে বঙ্গবন্ধুর ছবি রাখা হয়েছে। বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠান কিংবা সভা সমাবেশে আওয়ামী লীগ নেতাদের সঙ্গে ছবি আছে। ফেসবুকে অনেকেই নিজেদের ছাত্রলীগ ও যুবলীগের সক্রিয় কর্মী হিসেবে দাবি করেছেন। গোয়েন্দা সূত্র জানায়, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে মুক্তি না দিলে নির্বাচনের আগে পুলিশের ওপর হামলা, অর্থনৈতিক অঞ্চলসহ সরকারি- বেসরকারি স্থাপনায় হামলা করে নাশকতা সৃষ্টির পরিকল্পনা নিয়ে এগুচ্ছে জামায়াত-শিবির। নির্বাচন ঠেকাতে পুলিশের মনোবল ভেঙে দেয়ার জন্য থানা-ফাঁড়িতে হামলা করবে তারা। এসব কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে নির্বাচন বানচালের চেষ্টা করবে তারা। এ পরিকল্পনায় ব্যর্থ হলে আওয়ামী লীগ ও তার সহযোগী সংগঠন ছাত্রলীগ ও যুবলীগের ব্যানারে নির্বাচনের দিন গলায় নৌকার কার্ড ঝুলিয়ে কেন্দ্রে শক্ত অবস্থান নেবে। ভোটকেন্দ্র পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে রেখে ফলাফল নিজেদের অনুক‚লে নেয়ার চেষ্টা করবে। সেটি সম্ভব না হলে কেন্দ্রে পুলিশ ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সঙ্গে রক্তক্ষয়ী সংঘাতে জড়াবে। দশম জাতীয় নির্বাচনের আগে-পরে এবং বিভিন্ন সময় দেশব্যাপী নাশকতা, পুলিশের ওপর হামলা, ভাঙচুর ও জ্বালাও- পোড়াওসহ বিভিন্ন মামলায় জামায়াত-শিবিরের নেতারা গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে থাকায় দলীয় কার্যক্রম অনেকটা স্থবির ছিল। কিন্তু গত কয়বছরে জামায়াত-শিবির সক্রিয় হয়ে নিজিদের সংগঠিত করেছে বলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে তথ্য রয়েছে। নিজেদের সংগঠিত করতে তাদের পরিচালিত আর্থিক ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি হোটেল-মোটেল ও বাসাবাড়িতে বৈঠক করছে। গোয়েন্দা তথ্য মতে, পুলিশের ওপর হামলা, গাড়ি পোড়ানো, পেট্রলবোমা হামলা, নাশকতাসহ ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ড চালানো জামায়াত-শিবির ২০১৫ সাল থেকে রাজপথের কর্মসূচি বাদ দিয়ে নানা কৌশলে নিজেদের শক্তি সঞ্চয়ের কাজ শুরু করে। সরকারি দলের বিভিন্ন সহযোগী সংগঠনে ঢুকে যাওয়ার পাশপাশি বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনের মধ্যেও নিজেদের সংগঠিত করতে থাকে। সূত্র জানায়, আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে জামায়াতে ইসলামের তরুণ কর্মী এবং ছাত্রশিবিরের সক্রিয় নেতাকর্মী মিলে অন্তত ২০ হাজার সদস্য নিজেদের প্রস্তুত করছে। সংঘর্ষ-সংঘাত, নাশকতার পাশাপাশি, তারা আওয়ামী লীগের ভেতরে থেকেই নির্বাচনকে প্রভাবিত করার চেষ্টা করবে। কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ মহসিন ভোরের কাগজকে বলেন, স্কুল-কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, সংস্কৃতি কর্মীদের মধ্যে বর্তমান ও সাবেক শিবিরের নেতাকর্মীদের একটি শক্ত বলয় গড়ে উঠেছে। চট্টগ্রাম নগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (অপরাধ ও অভিযান) আমেনা বেগম বলেন, ‘নির্বাচনকে সামনে রেখে জামায়াত-শিবিরের নাশকতার পরিকল্পনার বিষয়ে আমরা তথ্য পেয়েছি। এ বিষয়ে আমরা ব্যবস্থাও নিচ্ছি। ২০১৩-১৪ সালে কারা নাশকতা করেছে, মামলার আসামি হিসেবে কারা আছেন, তাদের মধ্যে জামিনে কারা আছে- সেসব বিষয়ও আমরা খতিয়ে দেখছি। নাশকতার চেষ্টা হলে সর্বাত্মকভাবে প্রতিরোধের সব প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App