×

জাতীয়

কয়েক হাজার একর জমির ধান অপরিপক্ব, কৃষকের সর্বনাশ

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৬ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ০৩:৩৩ পিএম

কয়েক হাজার একর জমির ধান অপরিপক্ব, কৃষকের সর্বনাশ
বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশন (বিএডিসি) ও বীজ ধান বিক্রেতাদের প্রতারণায় চলতি মৌসুমে আমন চাষের সুফল পাচ্ছে না কৃষকরা। এতে আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েছে পটুয়াখালীর কলাপাড়া ও রাঙ্গাবালী উপজেলার প্রায় দুই শতাধিক কৃষক। কৃষি বিভাগের সঠিক তদারকি না থাকায় মুনাফালোভী ব্যবসায়ীরা পরিকল্পিতভাবে কৃষকদের এমন সর্বনাশ করে বলে ক্ষতিগ্রস্তদের দাবি। জানা গেছে, চলতি আমন মৌসুমে বীজ ধানের কৃত্রিম সংকট তৈরি করে ও বিএডিসির সঠিক বীজ না দিয়ে বোরো মৌসুমের নিম্নমানের বীজ সরবারহ করে পটুয়াখালীর কলাপাড়া ও রাঙ্গাবালীর প্রায় দুশতাধিক কৃষকের সর্বনাশ করা হয়। বিএডিসির পুরাতন ব্যাগে, ধানের জাত পরিবর্তন করে, মেয়াদোত্তীর্ণ এ সব বীজ প্রান্তিক কৃষকদের মাঝে বিক্রি করছে অনুমোদনহীন খুচরা ব্যবসায়ীরা। সাধারণ কৃষকরা না বুঝেই এ সব ধানের বীজ ক্রয় এবং চাষ করে বিপাকে পড়েছেন। ধানের চারা রোপণ করার ১৫-২০ দিনের মাথায় অপরিপক্ব ফলন হয় এ সব বীজে। ক্ষতি পুষিয়ে নিতে কিছু কৃষক ধারদেনা করে পুনরায় চাষ শুরু করছেন। কিন্তু অধিকাংশ দরিদ্র কৃষক পুঁজি সংকটে চলতি মৌসুমের চাষ থেকে বঞ্চিত হওয়ায় শঙ্কায় রয়েছেন। কৃষকরা জানান, ক্ষতিগ্রস্ত কৃষদের সরবারহ করা বীজের প্যাকেটের গায়ে কাটাছেঁড়া করে ব্রি-৪৯ ধান লেখা থাকলেও ভেতরে ছিল দুই ধরনের বীজ। একটি ছিল ব্রি-২৮ এবং অন্যটি ছিল ব্রি-২৮ ও ব্রি-৪৯ এর মিশ্রণ। এ সব বীজে খুব দ্রæত ফুল আসে। আমন মৌসুমের ফসল না হওয়ায় ২৫ ভাগ ফলন পেতে পারে কৃষক। আবার পুরোটাই ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। বড়বাইশদিয়ার ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা জানান, মনিপাড়ার সাইদুল ফরাজী ২ একর, ইছা ১ একর, বশির ফরাজী ১ একর, তুহিন তালুকদার ২.৫ একর, মিজানুর ১.২৫ একর, নিজাম ২.৫ একর, কাঞ্চন ১.২৫ একর, ছাতিয়া পাড়ার দুদা ২.৫ একর, হেলাল ৫ একর, নজরুল শিকদার ৫ একর, বাহাউদ্দিন ২ একর, তায়েব হাওলাদার ২ একর, টুঙ্গিবাড়িয়ার খোকন ৫ একর এবং গাইয়াপাড়ার আলাউদ্দিন গাজী ২.৫ একর জমিতে তক্তাবুনিয়া বাজারের বীজ বিক্রেতা সজীবের কাছ থেকে বীজ ক্রয় করেন। একইভাবে কলাপাড়ার মহিপুর, লতাচাপলী ও নীলগঞ্জ ইউনিয়নের প্রায় দেড়শ কৃষকের প্রায় দুই হাজার একর জমি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কৃষকরা আরো জানান, বিএডিসির বস্তায় এসব বীজ তাদের সরবারহ করা হয়েছে। প্যাকেটে ধানের জাতের নাম এবং মেয়াদ কাটাছেঁড়া করে লেখা ছিল। এ সব বিষয়ে সজীবকে জানালে তিনি বলেন, এটা অফিস করেছে। কৃষক লুৎফর জানান, বীজ বিক্রেতা সজীবের কোনো লাইসেন্স নেই। দীর্ঘদিন ধরে স্থানীয় কৃষি কর্মকর্তাকে ম্যানেজ করে ব্যবসা করে যাচ্ছেন। কৃষক ফারুক মিয়া জানান, এত সব ঘটনার পরও স্থানীয় উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা জাফরের দেখা মেলেনি। এলাকায় ঠিকমতো না আসার কারণে অনেক কৃষকের কাছেই তিনি অচেনা। এসব বীজ বিক্রেতাদের শাস্তিসহ ক্ষতিপূরণের দাবিতে ক্ষুব্ধ কৃষকরা শনিবার মানববন্ধন করে তক্তাবুনিয়া বাজারে। এদিকে আইনী ঝামেলা এড়াতে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের ম্যানেজ করে মাঠে নেমেছে বীজ বিক্রেতা সজীব। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ছাতিয়ানাপাড়ার কৃষক নজরুল ও খোকন। তারা জানান, ধারদেনা করে ৫ একর জমি চাষে তার এক লাখ টাকা ব্যয় হয়েছে। সর্বস্ব হারিয়ে এখন ধারদেনা পরিশোধসহ আগামী দিনগুলো কীভাবে পার করবেন সেই চিন্তায় ব্যাকুল হয়ে আছেন। এ বিষয়ে বড়বাইশদিয়া ইউয়িনের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা জাফর বলেন, কৃষক যদি বীজ বপন করে ক্ষতিগ্রস্ত হয়, এর দায় তাদের নয়। এ বিষয়ে তক্তাবুনিয়া বাজারের বীজ বিক্রেতা সজীব জানায়, বরগুনা জেলার তালতলী উপজেলার বিএডিসির ডিলার আবু মিয়া বিভিন্ন বাজারের খুচরা ব্যবসায়ীদের এসব বীজ সরবারহ করেন। তিনি কলাপাড়ার এক ব্যবসায়ীর কাছ থেকে এসব বীজ সংগ্রহ করে বিক্রি করেন। তবে তিনি কলাপাড়ার সেই বিক্রেতার নাম বলতে রাজি হননি। কলাপাড়া ও রাঙ্গাবালী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আবদুল মন্নান জানান, এসব বীজ সরবারহকারী মূল প্রতারক বরগুনা জেলার তালতলী উপজেলার বিএডিসির ডিলার আবু মিয়ার লাইসেন্স বাতিল করা হয়েছে। এ ঘটনায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। কৃষকদের ক্ষতিপূরণে সার্বিক সহযোগিতা করা হচ্ছে। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের তালিকা তৈরি করে প্রণোদনা দেয়া হবে। অগ্রাধিকার ভিত্তিতে এসব কৃষককে রবি মৌসুমে প্রদর্শনী প্লট বরাদ্দ দেয়া হবে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App