×

জাতীয়

অনিয়মে বেহাল দশায় কালীগঞ্জ স্বাস্থ্য বিভাগ

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৬ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ০৪:০৮ পিএম

অনিয়মে বেহাল দশায় কালীগঞ্জ স্বাস্থ্য বিভাগ
কালীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগের চরম বেহাল অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। কর্মস্থলে না থেকে বেতন ভাতা তুলছেন ৫ ডাক্তার ও ৩ নার্সসহ অনেকেই। বছরের পর বছর কর্মস্থলে অনুপস্থিত থাকায় উপজেলায় স্বাস্থ্য সেবার বিভাগ একেবারেই ভেঙে পড়েছে। কালীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য ও প. প. বিভাগসহ একাধিক সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার বলরামপুর উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ডা. সানজিদা ইয়াসমিন সম্পা যোগদানের পরদিন থেকে ৪ বছর নিরুদ্দেশ রয়েছেন। কিন্তু তার সরকারি চাকরি বহাল থাকায় ওই স্থানে নতুন কোনো নিয়োগ দেয়া সম্ভব হচ্ছে না। আর কাষ্টভাঙ্গা ইউনিয়ন উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ডাক্তার আতিকুর রহমান গত ২ বছর আগে যোগদানের কিছুদিন পরই চাকরি থেকে ইস্তফা দিয়েছেন। তাই সেখানেও নিয়মের বেড়াজালে পড়ে নতুন ডাক্তার যোগদান করতে পারছে না। এদিকে উপজেলার ১১টি ইউনিয়নে ১১ জন মেডিকেল অ্যাসিস্টেন্ট (সেকমো) এর মধ্যে প্রেষণের কাগজ করে ৪ জনই রয়েছেন অন্য জেলা শহরে। এদের মধ্যে জামাল ইউনিয়ন উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ডা. ইয়াসমিন আরা রয়েছেন কুষ্টিয়ার মিরপুরে, কোলা ইউনিয়ন উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ডা. জয়নাল আবেদিন রয়েছেন কুষ্টিয়ার দৌলতপুরে, সুন্দরপুর দুর্গাপুর ইউনিয়ন উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ডা. তাসলিমা খাতুন রয়েছেন কুষ্টিয়ার কুমারখালীতে ও সিমলা রোকনপুর উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ডা. মাহবুবুর রহমান রয়েছেন ঝিনাইদহের হরিণাকুন্ডুতে। এরাও কাজ না করে প্রতি মাসে বেতন ভাতা তুলে নিচ্ছেন। তবে কাজ না করেই বছরের পর বছর বেতন ভাতা তুলে নেবার পেছনে এদের সবারই রয়েছে ডেপুটেশন নামের এক তেলেসমাতি রক্ষাকবজ। একইভাবে কালীগঞ্জ হাসপাতালের ৩ জন নার্স শাহানাজ পারভীন, হালিমা খাতুন ও লক্ষ্মী রানী বিশ্বাস ডেপুটেশন নিয়ে দীর্ঘদিন বাইরে রয়েছেন। তারাও প্রতি মাসে এসে বেতন ভাতা তুলে নিয়ে যান। ডেপুটেশন বা প্রেষণে উপসহকারী মেডিকেল অফিসারদের মধ্যে কুষ্টিয়ার দৌলতপুরে থাকা জয়নাল আবেদিন জানান, তার স্ত্রীও দৌলতপুরে একই চাকরি করেন। ছেলে-মেয়ে, বাবা-মাসহ পরিবারের দেখাশোনার জন্য তিনি ডেপুটেশন নিয়ে সেখানে আছেন। ঝিনাইদহের হরিণাকুন্ডুতে ডেপুটেশনে থাকা মাহবুবার রহমান জানান, ব্যক্তিগত অসুস্থতার কারণে তিনি নিজ জেলার কাছের উপজেলাতে প্রেষণে এসেছেন। আর কুষ্টিয়ার মিরপুরে থাকা ইয়াসমিন আরার ব্যক্তিগত মোবাইল ফোনটি বন্ধ থাকায় তার সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি। তবে এদের সবাই পারিবারিক সমস্যা দেখিয়ে ডেপুটেশন নিয়েছেন বলে জানা গেছে। এমন নানাবিধ সমস্যার বেড়াজালে আটকে কালীগঞ্জ উপজেলার স্বাস্থ্য সেবার হাল এখন বড়ই নাজুক অবস্থায় আছে। এ সব অনিয়মের খবরে গত ২ মাস আগে দুদকের ঢাকা প্রধান কার্যালয়ের একটি দল কালীগঞ্জ হাসপাতালে অভিযান চালায়। সরেজমিন তারা নানা অনিয়ম পেয়েছিল। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে বললেও সেটাও অদৃশ্য কারণে ফাইলে আটকে আছে। এ সব বিষয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. হুসায়েন শাফায়াত জানান, তিনি যোগদানের আগে থেকেই দেখছেন ওইসব ডাক্তার, নার্সরা ডেপুটেশন নিয়ে বাইরে থাকেন। এ নিয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য উন্নয়ন কমিটির একাধিক সভাতে কথা উঠায় সর্বশেষ তিনি সভার সিদ্ধান্তে ডেপুটেশন বাতিলের এক রেজুলেশন করেন। তিনি রেজুলেশন কপিটি জেলা সিভিল সার্জন ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে পাঠালেও অদ্যাবধি কোনো উত্তর আসেনি বলে জানান। ‘ডেপুটেশন’ কাগজ সংক্রান্ত বিষয়ে ঝিনাইদহ জেলা সিভিল সার্জন ডা. রাশেদা খাতুন বলেন, অনেক ইউনিয়নে ডাক্তারদের বসার জায়গা সংকট। এ ছাড়া ঢাকার ডিজি অফিস থেকে ডেপুটেশন অর্ডার কপির বিপক্ষে তার কিছুই করার নেই। ডাক্তারদের অনুপস্থিতিতে সেবাদান সমস্যার বিষয়টি তিনি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে অবহিত করেছেন। তবে নিরুদ্দেশ ডা. সম্পার চাকরিটি এখনো বহাল থাকার কথা স্বীকার করলেও ওই ডাক্তার সম্পা আর চাকরি ফিরে পাবে না বলে জানান। কালীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুবর্ণা রানী সাহা জানান, তিনি এ উপজেলাতে নতুন যোগদান করেছেন। আগামী সমন্বয় কমিটির সভাতে বিষয়টি আলোচনা করে পদক্ষেপ নিবেন বলে জানান। হাসপাতাল স্বাস্থ্য কমিটির প্রধান উপদেষ্টা সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজিম আনার জানান, তিনি ইতোমধ্যে হাসপাতালটির সব সমস্যা লিখিতভাবে অবহিত হয়েছেন এবং গত স্বাস্থ্য কমিটির মাসিক সভাতে আর কাউকে ডেপুটেশন দেয়া বন্ধসহ তাদের ফিরিয়ে আনতে সব ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন বলে জানিয়েছেন।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App