×

মুক্তচিন্তা

বিচারপ্রার্থীদের দুর্ভোগের শেষ কোথায়?

Icon

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ১৫ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ০৬:৪৫ পিএম

মামলার ব্যয়, দীর্ঘসূত্রতা, নগরায়নসহ বিভিন্ন কারণে মামলার সংখ্যা বাড়ার ফলে মামলাজট সৃষ্টি হয়েছে। তা নিরসনে সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টা থাকতে হবে। দ্রুততম সময় ও সুলভে মামলা-মোকদ্দমা নিষ্পত্তি করা সম্ভব হলে বিচারবহিভর্‚ত বিরোধ নিষ্পত্তির প্রবণতা হ্রাস পাবে। বিচার ব্যবস্থার প্রতি জনগণের আস্থা বাড়বে।

দেশের আদালত বলা চলে মামলাজটে ন্যুব্জ দশায় উপনীত হয়েছে। প্রতি বছর মামলাজটে যোগ হচ্ছে নতুন ২ লাখ মামলা। শনিবারের ভোরের কাগজে এ সংক্রান্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশের আদালতে বিচারাধীন মামলার সংখ্যা ৩৪ লাখ ৫৩ হাজার ৩৫৩টি। বছর বছর বেড়েই চলেছে মামলাজট। এই জট নিরসনের বিভিন্ন উদ্যোগ নেয়া হলেও তা কোনো কাজে আসছে না। সংশ্লিষ্টরা মনে করেন, এত অল্পসংখ্যক বিচারক দিয়ে মামলার জট কমানো সম্ভব নয়। এ ছাড়া আইনজীবীদের ইচ্ছাকৃত সময়ক্ষেপণ, বেঞ্চের বিচারক পরিবর্তন, সময়মতো সাক্ষী হাজির করতে না পারাসহ বিভিন্ন কারণে মমলার জট সৃষ্টি হয়ে থাকে বলেও মনে করেন সংশ্লিষ্টরা। বলা হয়, ‘জাস্টিস ডিলেইড, জাস্টিস ডিনাইড’- বহু পুরনো একটি অতি সত্য কথা। অর্থাৎ বিচার কাজ যত বিলম্ব হবে, ন্যায়বিচার ততটাই ব্যাহত হবে। এ সত্য উপলব্ধি করে যথাযথ ব্যবস্থা নিশ্চিত করা প্রয়োজন। বছরের পর বছর, যুগের পর যুগ, পুরুষ পরম্পরায় মামলা প্রলম্বিত হচ্ছে। অনাকাক্সিক্ষত, অবাঞ্ছিত এই পদ্ধতি। জানা যায়, সুপ্রিম কোর্টের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, দেশের সর্বোচ্চ আদালত সুপ্রিম কোর্ট ও অধস্তন আদালতে (সব জেলা ও দায়রা জজ আদালত এবং অধস্তন আদালতসমূহ, ট্রাইব্যুনাল, সিএমএম ও সিজেএম আদালত এবং অধস্তন আদালতসমূহ) সব মিলিয়ে মোট ৩৪ লাখ ৫৩ হাজার ৩৫৩টি মামলা বিচারাধীন রয়েছে। সর্বশেষ পরিসংখ্যান অনুযায়ী, আপিল বিভাগ ও হাইকোর্ট বিভাগে মোট ৪ লাখ ৯৫ হাজার ৪১৫টি মামলা রয়েছে। বিচারিক আদালতে দেওয়ানি মামলা ১২ লাখ ৮৯ হাজার ৮৩৬টি। ফৌজদারি মামলা ১৬ লাখ ৪৮ হাজার ৬০৯টিসহ মোট সংখ্যা ২৯ লাখ ৩৮ হাজার ৪৪৫টি। মামলা সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মামলা নিষ্পত্তিতে দীর্ঘসূত্রতা ও অর্থ সংকটে দেশে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। তবে স্বীকার করতে হয়, সরকার ও বিচার বিভাগের বিভিন্ন উদ্যোগের ফলে গত দুই বছরে আদালতগুলোতে মামলা নিষ্পত্তিতে যথেষ্ট অগ্রগতি হয়েছে। তারপরও মামলাজট নিরসনে হিমশিম খেতে হচ্ছে বিচারকদের। অনেক জেলায় বিচারক সংশ্লিষ্ট সহায়ক জনবল সংকটের কারণে বিচারকাজে গতি আসছে না। মামলা অনুপাতে নতুন বিচারক ও সহায়ক কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগ না হওয়ায় বিচারাধীন মামলার সংখ্যা বাড়ছে। বিভিন্ন জেলায় প্রয়োজনীয় আদালত না থাকায় বিচারপ্রার্থীরা ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। আরেকটি কারণ হচ্ছে আদালতে সময়। জেলা শহরে বেলা এগারোটার আগে আদালত কাজ শুরু করে না। এর সঙ্গে রয়েছে মামলার শুনানি মুলতবিকরণের ক্রমাগত তৎপরতা। দিনের পর দিন শুনানি হয় না অনেক মামলার। সর্বোপরি, মামলার ব্যয়, দীর্ঘসূত্রতা, নগরায়নসহ বিভিন্ন কারণে মামলার সংখ্যা বাড়ার ফলে মামলাজট সৃষ্টি হয়েছে। তা নিরসনে সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টা থাকতে হবে। দ্রুততম সময় ও সুলভে মামলা-মোকদ্দমা নিষ্পত্তি করা সম্ভব হলে বিচারবহিভর্‚ত বিরোধ নিষ্পত্তির প্রবণতা হ্রাস পাবে। বিচার ব্যবস্থার প্রতি জনগণের আস্থা বাড়বে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App