×

জাতীয়

হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের পীঠস্থান মা ভবানী মন্দির

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৪ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ০২:১০ পিএম

হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের পীঠস্থান মা ভবানী মন্দির
মা ভবানীর মন্দির ঐতিহাসিক মন্দির হিসেবে পরিচিত। উপমহাদেশের হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের ৫১টি পীঠস্থানের মধ্যে এটি অন্যতম। প্রতি বছর দেশি-বিদেশি পুণ্যার্থী ও ভক্তকুলের আগমন ঘটে এখানে। বিশেষ করে মাঘী পূর্ণিমা ও রাম নবমী উৎসব ঘিরে পার্শ্ববর্তী দেশ নেপাল, ভুটান, ভারত, শ্রীলঙ্কা ও আফগানিস্তান থেকে লাখো পুণ্যার্থীর সমাগম ঘটে মা ভবানীর মন্দির প্রাঙ্গণে। দেশের এই দর্শনীয় স্থানটি শুধু সরকারি পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে ওঠেনি। কালিকাপুরাণ অনুসারে, দক্ষযজ্ঞে দেবী সতী স্বামীনিন্দা সহ্য করতে না পেরে দেহত্যাগ করেন। সতীর প্রাণহীন দেহ নিয়ে দেবাদিদেব মহাদেব প্রলয় নৃত্য শুরু করেন। ওই মহাপ্রলয় নৃত্য থেকে বিশ্ব ব্রহ্মা-রক্ষাকল্পে স্বয়ংম্ভু বিষ্ণু সুদর্শন চক্রের মাধ্যমে সতীর প্রাণহীন দেহ ৫১টি খন্ডে বিভক্ত করেন। সেসব দেহখন্ড বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে পতিত হলে পীঠস্থানের উদ্ভব হয়। ভবানী দেবীর বাম পাঁজরাস্থি মতান্তরে দক্ষিণ চক্ষু পতিত হয়েছিল। এই পীঠস্থানে দেবীর নাম অপর্ণা (ভবানী) এবং বামন ভৈরব। প্রাচীন এই মহাতীর্থ ক্ষেত্রের বর্তমান মন্দির অবকাঠামো নাটোরের মহীয়সী রানী ভবানী কর্তৃক অষ্টাদশ শতাব্দীতে নির্মিত হয়। জমিদারি প্রথা উচ্ছেদের আগ পর্যন্ত নাটোর এস্টেট থেকে মন্দিরের যাবতীয় ব্যয় বহন করত। জমিদারি প্রথা উচ্ছেদের পর সরকার নাটোরের ছোট তরফ এস্টেট অধিগ্রহণ করে। দেবোত্তর এই মন্দিরের ব্যয় বহনের জন্য অ্যানুয়িটি নির্ধারণ করেন। নাটোরের রানী ভবানী এস্টেট কর্তৃক দেবোত্তরের ১২ বিঘা জমির ওপর এই মন্দিরের অবকাঠামো নির্মিত। চারদিকে প্রাচীরবেষ্টিত মন্দির চত্বরে রয়েছে দক্ষিণমুখী মূল মন্দির। বামেশ ভৈরব শিবমন্দির, অপর তিনটি শিবমন্দির, ভোগ পাকশালা নাথ মন্দির, দুটি অতিথিশালা, বাসুদেব মন্দির, গোপাল মন্দির নর নারায়ণ সেবাঙ্গন, পাশেই শাঁখারি পুকুর, দুটি স্নানঘাট। প্রাচীর বেষ্টনীর বাইরে তিনটি শিবমন্দির এবং একটি পঞ্চমুন্ড আসন রয়েছে। মা ভবানী মন্দিরের পরিচালনা কমিটির সদস্য ও সাংবাদিক নিমাই ঘোষ জানান, মা ভবানী মন্দিরের নামে ব্রিটিশ আমলের সিএস রেকর্ডভুক্ত শত শত একর জমি বেদখল রয়েছে। নাটোরের রানী ভবানী ছোট তরফ এস্টেট এবং অন্যান্য জমিদারের পক্ষ থেকে এই মন্দিরে অনেক ভ‚সম্পত্তি দান করা হয়েছিল। এ ছাড়াও ১৯৫৪ সালে জমিদারি প্রথা উচ্ছেদের পর তৎকালীন সরকার শ্রী শ্রী ভবানীমাতা ঠাকুর রানী এবং অন্যান্য মন্দিরের নামে ১৮৬ একর জমি বরাদ্দ দেয়া হয়েছিল। এই সম্পত্তি দেখভালের দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল রাজশাহী বিভাগীয় রাজস্ব কর্মকর্তাকে। মন্দিরের এত ভূসম্পত্তি থাকলেও পরবর্তী সময়ে মন্দিরের নামে বরাদ্দ ভ‚সম্পত্তি ও জলমহাল ভুলবশত সরকারি খাস খতিয়ান হিসেবে রেকর্ডভুক্ত হয়। বর্তমানে এই জমি উদ্ধারে আদালতে মামলা বিচারাধীন রয়েছে। বগুড়া সদর থেকে প্রায় ৩৫ কিলোমিটার দূরে শেরপুর উপজেলার দক্ষিণ-পশ্চিমে ভবানীপুর ইউনিয়নের ভবানীপুর গ্রামে এই প্রাচীন মন্দিরটি অবস্থিত। যেতে হলে বগুড়া থেকে শেরপুর পৌর শহরের সিএনজি স্ট্যান্ডে আসতে হবে। সেখান থেকে সরাসরি ভবানী মন্দির পর্যন্ত সিএনজি পাওয়া যায়।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App