×

অর্থনীতি

বিপর্যয় ঠেকাতে রাজনৈতিক অঙ্গীকার জরুরি

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৪ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ০১:২৪ পিএম

বিপর্যয় ঠেকাতে রাজনৈতিক অঙ্গীকার জরুরি
দেশে খেলাপি ঋণের পরিমাণ অস্বাভাবিক হারে বাড়ছে। বিশাল অঙ্কের খেলাপি ঋণ জাতীয় অর্থনীতিকে গ্রাস করে নিচ্ছে। এক মহাসংকটের মুখে দাঁড়িয়ে আছে ব্যাংকিং খাত। সংকট সামাল দিতে ব্যাংকগুলোও প্রদেয় ঋণের বিপরীতে সুদের হার বাড়াচ্ছে, ফলে সামনে আগাতে গিয়েও হোঁচট খাচ্ছেন ভালো উদ্যোক্তারা। খেলাপি ঋণের পরিণতিতে থমকে আছে নতুন বিনিয়োগ, স্থবির হয়ে আছে কর্মসংস্থান। পর্যবেক্ষকরা বলছেন, ব্যাংকারদের উদাসীনতার কারণেই বেড়ে যাচ্ছে খেলাপি ঋণ। ভবিষ্যতে যে সরকারই ক্ষমতায় আসুক, খেলাপি ঋণের সংকট কাটাতে সবার আগে তাদের রাজনৈতিক অঙ্গীকার থাকতে হবে। শীর্ষ খেলাপিদের আইনের আওতায় বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করাতে হবে। দেশে মাত্রাছাড়া খেলাপি ঋণের বিষয়টি বিশেষ উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে সরকারের শীর্ষ মহলের জন্য। গত বুধবার জাতীয় সংসদে দেশের শীর্ষ ১০০ ঋণখেলাপি প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তির নাম প্রকাশ করেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। তার হিসাবে বাংলাদেশ ব্যাংকের ঋণ তথ্য ব্যুরোর (সিআইবি) ডাটাবেজ রক্ষিত তথ্য অনুসারে স্বাধীনতার পর থেকে চলতি বছরের জুন মাস পর্যন্ত সারা দেশে মোট খেলাপি ঋণের পরিমাণ হলো ১ লাখ ৩১ হাজার ৬৬৬ কোটি টাকা, যা দেশে বিগত বছরের ঘোষিত বাজেটের এক চতুর্থাংশেরও বেশি। প্রসঙ্গত, খেলাপি ঋণ বাড়ার এ ভয়াবহতা আঁচ করতে পেরে ২০০১ সাল থেকে ব্যাংকগুলোর পাশাপাশি তৃতীয় পক্ষ হিসেবে বেসরকারি এজেন্টের মাধ্যমে খেলাপি ঋণ আদায়ের উদ্যোগ গ্রহণ করে সরকার। উদ্যোগটি প্রথমদিকে বেশ ফলপ্রসূ হলেও পরবর্তীকালে ব্যাংকের কিছু অসাধু কর্মকর্তার অসহযোগিতায় কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। তবে শিগগিরই উদ্যোগটি আবারো কার্যকর করতে যাচ্ছে অর্থ মন্ত্রণালয়। পাশাপাশি খেলাপি ঋণ আদায়ে স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘ এই তিন মেয়াদি পরিকল্পনা করে সমস্যা সমাধানে একটি সুপারিশও করেছে মন্ত্রণালয়। অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান সূত্রে জানা গেছে, ২০০৩ সালে তৎকালীন অর্থমন্ত্রীর সহযোগিতায় সোনালী ব্যাংকের সঙ্গে বেসরকারি প্রতিষ্ঠান পিপলস ডেভেলপমেন্ট সার্ভিসেস করপোরেশন (পিডিএসসি) লিমিটেড দ্বিপক্ষীয় চুক্তির ভিত্তিতে, শর্তসাপেক্ষে, খেলাপি ঋণ আদায় কার্যক্রম শুরু করে। পরবর্তীকালে সোনালী ব্যাংকসহ আরো কিছু সরকারি ও বেসরকারি ব্যাংকের সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষরের মাধ্যমে খেলাপি ঋণ আদায় কার্যক্রম আরো জোরদার করা হয়। সে সময় পিডিএসসি লিমিটেডের পাশাপাশি আরো তিন প্রতিষ্ঠান এ কার্যক্রম শুরু করে। কিন্তু পরবর্তীকালে ব্যাংকের কতিপয় অসাধু কর্মকর্তা ও প্যানেল আইনজীবীদের অসহযোগিতা ও দ্বিমুখী নীতি অনুসরণ করায় আর কাক্সিক্ষত সাফল্যের মুখ দেখতে পারেনি ওই কার্যক্রম। সিআইবির তথ্য অনুসারে, ২০১৭ সালের এপ্রিল মাস পর্যন্ত দেশে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ১ লাখ ১১ হাজার ৩৪৭ কোটি টাকা। সে হিসেবে বিগত এক বছরে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ইতিহাসের সর্বোচ্চ ২০ হাজার ৩১৯ কোটি টাকা। এ বৃদ্ধির কারণ সম্পর্কে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ জানান, ব্যাংকিং খাতে সুশাসনের অভাব রয়েছে। ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপিদের বিরুদ্ধে দৃশ্যত কোনো ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না। এর প্রভাব পড়েছে ঋণ ব্যবস্থাপনায়। বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর ও অর্থনীতিবিদ খোন্দকার ইব্রাহীম খালেদ বলেন, খেলাপি ঋণ নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে। সরকারি ব্যাংকে ব্যাপক ঋণ অনিয়মের পর এবার বেসরকারি ব্যাংকেও একই চিত্র দেখা যাচ্ছে। বেসরকারি ব্যাংক পরিচালকরা নিজেদের ব্যাংক থেকে ঋণ নিতে না পারায় অন্য ব্যাংক থেকে ঋণ নিচ্ছেন। জনগণের স্বার্থে চিহ্নিত প্রভাবশালী খেলাপিদের বিরুদ্ধে এখনই ব্যবস্থা নেয়া জরুরি। বিশিষ্ট এ অর্থনীতিবিদ আরো বলেন, খেলাপি ঋণ আদায়ে সরকারের রাজনৈতিক অঙ্গীকার থাকতে হবে। বাংলাদেশ ব্যাংককে পূর্ণ স্বাধীনতা দিতে হবে, তবেই ভবিষ্যতে খেলাপি ঋণের হাত থেকে মুক্তি পাবে দেশের অর্থনীতি। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক অর্থ উপদেষ্টা এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, যারা ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপি হচ্ছেন তাদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা না থাকলে খেলাপি সংস্কৃতি কমবে না। এদিকে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নাম জানাতে অনিচ্ছুক একটি সূত্র দাবি করে, যেসব ব্যাংকে খেলাপি ঋণের হার বেশি, তাদের ব্যাপারে বিশেষ নজরদারি করা হচ্ছে। আদায় বাড়িয়ে খেলাপি ঋণের হার কমাতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে যার ফলে আদায়ের হার আগের চেয়ে বেড়েছে। পাশাপাশি, বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক মো. সিরাজুল ইসলাম বলেন, ব্যাংকগুলো আদায় বাড়ালেই খেলাপি ঋণ কমে যাবে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App