×

মুক্তচিন্তা

দেশের অর্থনীতির জন্য অশনি সংকেত

Icon

কাগজ অনলাইন প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৩ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ০৭:১৮ পিএম

ব্যাংকিং খাতে শৃঙ্খলা ও সুশাসন প্রতিষ্ঠা করা না গেলে খেলাপি ঋণের পরিমাণ আরো বাড়বে। এ অবস্থা কাটিয়ে ওঠার জন্য ব্যাংকগুলোর ওপর তদারকি ও মনিটরিং বৃদ্ধির বিকল্প নেই। এ ব্যাপারে দ্রুত পদক্ষেপ না নিলে দেশের ব্যাংকিং খাতে বিপর্যয় সৃষ্টি হতে পারে। খেলাপি ঋণের বিস্তার রোধে এবং অনাদায়ী ঋণ আদায়ে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া হবে, এটাই আমাদের প্রত্যাশা।

দেশের ব্যাংকিং খাত খেলাপি ঋণের বৃত্ত থেকে বের হতে পারছে না। লাগাম টানা যাচ্ছে না এর উল্লম্ফন। গত বুধবার জাতীয় সংসদে দেশের শীর্ষ ১০০ ঋণখেলাপির তথ্য প্রকাশ করেছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। তিনি জানিয়েছেন, দেশে বর্তমানে ঋণখেলাপির সংখ্যা ২ লাখ ৩০ হাজার ৬৫৮ জন/প্রতিষ্ঠান। এ ঋণখেলাপিদের কাছে ৮৮টি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের অনাদায়ী অর্থের পরিমাণ ১ লাখ ৩১ হাজার ৬৬৬ কোটি ১৬ লাখ টাকা। পুরো পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করলে দেখা যাবে- দেশের ব্যাংকিং খাতে নাজুক পরিস্থিতি বিরাজ করছে। এ অবস্থা দেশের অর্থনীতির জন্য অশনি সংকেত। এ প্রসঙ্গে ব্যাংক কর্তৃপক্ষের বক্তব্য হলো- বর্তমানে স্থবির হয়ে আছে দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য। জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে উদ্যোক্তারা নতুন করে বিনিয়োগে আসতে সাহস পাচ্ছে না। এমন স্থবির পরিস্থিতিতে প্রতিযোগিতায় টিকতে না পেরে অনেকেই শিল্পকারখানা বন্ধ করে দিচ্ছেন। এমন পরিস্থিতিতে একদিকে যেমন ব্যাংকের নতুন ঋণ বিতরণ বাড়ছে না। অন্যদিকে আগে বিতরণ হওয়া ঋণের টাকাও ফেরত পাচ্ছে না ব্যাংক। ফলে ব্যাংকিং খাতের খেলাপি ঋণের পরিমাণ বেড়ে যাচ্ছে। তবে পর্যবেক্ষক মহল মনে করছেন, ব্যাংকগুলোতে অনিয়ম, দুর্নীতি, অব্যবস্থাপনা এবং সঠিক উদ্যোক্তাকে না দিয়ে নামসর্বস্ব প্রতিষ্ঠানে ঋণ দেয়ার কারণে খেলাপি ঋণের পরিমাণ বেড়ে যায়। ব্যাংক ঋণে সুদের হার বেশি হওয়ায় প্রতিযোগিতায় টিকতে না পেরে অনেক শিল্পকারখানা বন্ধ হয়ে গেছে। নতুন করে দেশে বিনিয়োগ হচ্ছে না। অন্যদিকে গ্যাস ও বিদ্যুৎ সংযোগের অভাবে শিল্পোদ্যোক্তারা ঋণ নিয়ে শিল্প স্থাপন করেও উৎপাদনে যেতে পারছেন না। আবার চাহিদা অনুযায়ী গ্যাস-বিদ্যুৎ না পাওয়ার কারণে উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। এসব কারণে খেলাপি ঋণ বাড়ছে।

সংসদে অর্থমন্ত্রীর দেয়া তথ্য অনুযায়ী, সবচেয়ে ঋণখেলাপি (অনাদায়ী) ব্যাংকগুলোর মধ্যে রয়েছে- সোনালী ব্যাংক লি. (১৮ হাজার ৬৬২ কোটি ৯৭ লাখ ৩০ হাজার), জনতা ব্যাংক লিমিটেড (১৪ হাজার ৮৪০ কোটি ২৭ লাখ টাকা), অগ্রণী ব্যাংক লিমিটেড (৯ হাজার ২৮৪ কোটি ৪২ লাখ), বেসিক ব্যাংক লি. (৮ হাজার ৫৭৬ কোটি ৮৫ লাখ ৭ হাজার টাকা), ইসলামী ব্যাংক লিমিটেড (৫ হাজার ৭৬ কোটি ৪৩ লাখ ৩ হাজার টাকা)। বলার অপেক্ষা রাখে না, খেলাপি ঋণ বিস্তারের অন্যতম কারণ অব্যবস্থাপনা ও ঝুঁকিপূর্ণ ঋণ বিতরণ। এভাবে খেলাপি ঋণ বাড়তে থাকলে ব্যাংকগুলোর পক্ষে সুদের হার কমানো সম্ভব নয়। সুদের হার না কমলে দেশে বিনিয়োগ বাড়বে না, যা অর্থনীতিতে বিপর্যয়ের সূত্রপাত ঘটাবে। কাজেই খেলাপি ঋণের বৃত্ত থেকে বেরিয়ে আসা এখন সময়ের দাবি। এ জন্য সবার আগে দরকার ব্যাংকিং খাতকে অনিয়ম ও দুর্নীতিমুুক্ত করার ওপর গুরুত্ব দেয়া। ব্যাংকিং খাতে শৃঙ্খলা ও সুশাসন প্রতিষ্ঠা করা না গেলে খেলাপি ঋণের পরিমাণ আরো বাড়বে। এ অবস্থা কাটিয়ে ওঠার জন্য ব্যাংকগুলোর ওপর তদারকি ও মনিটরিং বৃদ্ধির বিকল্প নেই। এ ব্যাপারে দ্রুত পদক্ষেপ না নিলে দেশের ব্যাংকিং খাতে বিপর্যয় সৃষ্টি হতে পারে। খেলাপি ঋণের বিস্তার রোধে এবং অনাদায়ী ঋণ আদায়ে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া হবে, এটাই আমাদের প্রত্যাশা।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App