×

জাতীয়

প্রমত্তা পদ্মা গিলে খাচ্ছে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স!

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১০ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ১২:২২ পিএম

প্রমত্তা পদ্মা গিলে খাচ্ছে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স!
নড়িয়া উপজেলায় পদ্মার ভাঙন তীব্র আকার ধারণ করেছে। গতকাল রবিবার সকালে নড়িয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মূল ভবনে ফাটল ধরেছে। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ক্যাম্পাসে থাকা গ্যারেজ, মসজিদের একটি অংশ, সীমানাপ্রাচীর ও ফটক বিলীন হয়ে গেছে। গত শনিবারের ভাঙনে পূর্ব নড়িয়া ও উত্তর কেদারপুর গ্রামের দেড়শ পরিবার গৃহহীন হয়েছে। ভাঙনে উত্তর কেদারপুর গ্রামের রাম ঠাকুর সেবা মন্দির বিলীন হয়েছে। এ নিয়ে গত তিন মাসে পদ্মার ভাঙনে নড়িয়ায় ৪ হাজার ৬৫০ পরিবার গৃহহীন হলো। ভাঙনের কারণে ৫০ শয্যার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ১২টি ভবন ঝুঁকিতে রয়েছে। পদ্মা নদী হাসপাতালের সীমানায় চলে আসায় চিকিৎসকদের দোতলা একটি আবাসিক ভবন ৩৫ হাজার টাকায় নিলামে বিক্রি করা হয়েছে। আতঙ্কে ওই হাসপাতালের রোগীরা অন্যত্র চলে গেছেন। চিকিৎসক ও কর্মচারীদের পরিবারের সদস্যদের হাসপাতাল ক্যাম্পাস থেকে সরিয়ে নেয়া হয়েছে। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্র জানায়, ১৯৬৮ সালে নড়িয়া উপজেলা সদর থেকে চার কিলোমিটার দূরে মুলফৎগঞ্জ বাজারে ৩০ শয্যার এ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স নির্মাণ করা হয়। ২০১৪ সালে ওই হাসপাতালটি ৫০ শয্যায় উন্নীত করা হয়। হাসপাতাল ক্যাম্পাসে ১২টি পাকা ভবন রয়েছে। যার মধ্যে দুটি তিনতলা ভবনে হাসপাতালের জরুরি বিভাগ ও বহির্বিভাগ চালু ছিল। ভাঙনের ঝুঁকিতে পড়ার কারণে গত ৩ আগস্ট থেকে ক্যাম্পাসের পেছনের দিকের একটি আবাসিক ভবনে সীমিত পরিসরে ১০ শয্যার কার্যক্রম চালু রাখা হয়। ভাঙতে ভাঙতে পদ্মা হাসপাতালের সীমানায় চলে আসায় হাসপাতাল ক্যাম্পাসে থাকা কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। তাদের পরিবারের সদস্যদের নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেয়া হয়ছে। আতঙ্কে রোগীরা হাসপাতাল ছেড়ে চলে গেছে। হাসপাতাল ক্যাম্পাসের একটি আবাসিক ভবনে এখন জরুরি বিভাগ ও বহির্বিভাগ চালু রাখা হয়েছে। হাসপাতালে প্রবেশের সড়কটি বিলীন হয়ে যাওয়ায় ক্যাম্পাসের পেছন দিকের সীমানাপ্রাচীর ভেঙে রাস্তা বের করা হয়েছে। হাসপাতালের সামনের ২৫টি ওষুধের দোকান বিলীন হয়ে গেছে। এ কারণে হাসপাতালে কোনো রোগী আসছে না। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক হাসপাতালের এক নার্স বলেন, নদীর ভাঙন তীব্র আকার ধারণ করেছে। আতঙ্কে পরিবারের সদস্যদের সরিয়ে নিয়েছি। জরুরি চিকিৎসা দেয়ার জন্য আমাদের হাসপাতালে উপস্থিত থাকতে হচ্ছে। সময় কাটছে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার মধ্যে। হাসপাতালের সামনে পানি উন্নয়ন বোর্ড থেকে বালু ভর্তি জিও টেক্সটাইল ব্যাগ ফেলা হচ্ছে। উত্তর কেদারপুর গ্রামের রাম ঠাকুর সেবা মন্দির বিলীন হওয়ায় স্থানীয় হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষ কান্নাকাটি করছেন। পূর্ব নড়িয়া ও উত্তর কেদারপুর গ্রামের বাসিন্দারা তাদের বসতবাড়ির জিনিসপত্র সরিয়ে নিচ্ছেন। উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মুনীর আহমেদ বলেন, রবিবার সকাল থেকে হাসপাতালের স্থাপনা পদ্মায় বিলীন হওয়া শুরু হয়েছে। হাসপাতালের মূল ভবনে ফাটল ধরেছে। যে কোনো সময় ওটা নদীতে ধসে পড়তে পারে। পদ্মার ভাঙনে হাসপাতালের ১২টি ভবনই ঝুঁকিতে রয়েছে। চিকিৎসকদের একটি আবাসিক ভবন নিলামে বিক্রি করা হয়েছে। হাসপাতালের ১২টি ভবনের নির্মাণ ব্যয় ছিল প্রায় ১১ কোটি টাকা। এর মধ্যে একটি দোতলা ভবন বিক্রি করা হলো ৩৫ হাজার টাকায়। তিনি আরো বলেন, ভাঙনের আতঙ্কে রোগীরা হাসপাতাল ছেড়ে চলে গেছেন। এখন সীমিত পরিসরে জরুরি ও বহির্বিভাগের কার্যক্রম চালু রাখা হয়েছে। নড়িয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সানজিদা ইয়াছমিন বলেন, ভাঙনের ঝুঁকিতে থাকায় হাসপাতালের কার্যক্রম সীমিত পরিসরে চালু রাখা হয়েছে। হাসপাতালের যন্ত্রপাতি ও প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র ভোজেশ্বর, পন্ডিতসার ও নড়িয়া উপস্বাস্থ্যকেন্দ্র সরিয়ে নেয়া হয়েছে। গত শুক্রবার সন্ধ্যায় ভাঙন এলাকা পরিদর্শনে আসেন পানি উন্নয়ন বোর্ডের পশ্চিমাঞ্চলীয় (ফরিদপুর) প্রধান প্রকৌশলী এ কে এম ওয়াহেদ উদ্দিন চৌধুরী। তিনি রাতে বলেন, এ মুহূর্তে ভাঙনের তীব্রতা বেশ। নদীতে স্রোত বেশি থাকায় ভাঙছে। ভাঙনের গতি কমাতে বালুভর্তি বস্তা ফেলা হচ্ছে। নদীর পানি না কমলে স্থায়ী ব্যবস্থা নেয়া যাবে না।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App