×

জাতীয়

ধর্ষিতাকে ফেলা হয়েছিল নদীতে

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৭ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ০১:৩২ পিএম

ধর্ষিতাকে ফেলা হয়েছিল নদীতে
নরসিংদীতে চতুর্থ শ্রেণির এক ছাত্রীকে গণধর্ষণের ঘটনা ৫ লাখ টাকায় দফারফা করার অভিযোগ উঠেছে পুলিশ ও এলাকার প্রভাবশালীদের বিরুদ্ধে। গণধর্ষণের শিকার বাবাহারা প্রবাসী মায়ের এতিম মেয়েটি পুলিশ ও প্রভাবশালীদের চাপে বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েছে। ভয়ে তটস্থ পুরো পরিবার। পুলিশের সহায়তায় ধর্ষণের ঘটনা ধামাচাপা দেয়ার খবর গ্রামে ছড়িয়ে পড়লে চরাঞ্চলজুড়ে সমালোচনার ঝড় ওঠে। তবে অর্থ নেয়ার বিষয়টি অস্বীকার করেন নরসিংদী সদর মডেল থানার ওসি সৈয়দুজ্জামান। এলাকাবাসী ও নির্যাতিতের পরিবারের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, নির্যাতিত মেয়েটির বাড়ি নরসিংদী সদর উপজেলার নজরপুর ইউনিয়নের চম্পকনগর গ্রামে। সে স্থানীয় আলিয়া মাদ্রাসার চতুর্থ শ্রেণির ছাত্রী। বাবার মৃত্যুর পর ওই এলাকার চম্পকনগরে মামার বাড়িতে থেকে পড়াশুনা করত। গত রবিবার সন্ধ্যায় সে পার্শ্ববর্তী এলাকায় কালাই গোবিন্দপুর বাজারে কসমেটিক্স কিনতে যায়। সেখান থেকে বাড়ি ফেরার পথে সন্ধ্যা সোয়া ৭টার দিকে কালাই গোবিন্দপুর নওয়াব আলী স্কুলের পাশ থেকে একই গ্রামের সাদ্দাম মিয়া (২৫), সজিব (২২) ও ফরহাদ (২৩) স্কুলছাত্রীকে অপহরণ করে নৌকায় তুলে মেঘনা নদীর মাঝখানে নিয়ে যায়। সেখানে নৌকায় তারা পালাক্রমে স্কুলছাত্রীকে ধর্ষণ করে। ধর্ষণের পর ধর্ষণকারীরা ধর্ষিতাকে বিবস্ত্র অবস্থায় নদীতে ফেলে দেয়। পরে সাঁতরিয়ে মেয়েটি কালাই গোবিন্দ্রপুরের ইমানের বাড়িতে গিয়ে আশ্রয় নেয়। খবর পেয়ে স্থানীয় ইউপি সদস্য মোস্তফা ও বাড়ির স্বজনরা গিয়ে মেয়েটিকে উদ্ধার করেন। এদিকে ধর্ষকরা স্থানীয়ভাবে প্রভাবশালী হওয়ায় ঘটনাটি ধামাচাপা দিতে উঠেপড়ে লাগেন স্থানীয় ইউপি সদস্য মোস্তফা মিয়া। তিনি সাবেক ইউপি সদস্য কামাল মেম্বার, আলী নূর ও ফজলুকে নিয়ে নির্যাতিত মেয়েটির পরিবার ও ধর্ষকদের মধ্যে সালিশের মাধ্যমে ঘটনাটি ধামাচাপা দেয়ার উদ্যোগ নেন। এরই পরিপ্রেক্ষিতে গ্রাম্য সালিশে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ধর্ষণের ঘটনা প্রমাণিত হওয়ায় প্রত্যেককে দেড় লাখ টাকা করে মোট সাড়ে ৪ লাখ টাকা জরিমানা ধার্য করা হয়। একই সঙ্গে এ ঘটনায় কোনো মামলা না করার জন্য নির্যাতিত স্কুলছাত্রীর পরিবারকে নির্দেশ দেয়া হয়। কিন্তু কথামতো জরিমানার টাকা না দেয়ায় গত বুধবার সকালে নরসিংদী সদর থানা পুলিশের দ্বারস্থ হয় নির্যাতিত স্কুলছাত্রীর পরিবার। কিন্তু পুলিশও অভিযোগ মামলা হিসেবে নথিভুক্ত না করে উল্টো ৫ লাখ টাকায় ঘটনাটি সমঝোতা করে দেয়ার জন্য নির্যাতিতের পরিবারকে আশ্বাস দেয় বলে পরিবারটি জানায়। এতে করে গণধর্ষণের মতো চাঞ্চল্যকর ঘটনা পুলিশের হস্তক্ষেপে ধামাচাপা দেয়ার খবরে এলাকায় বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়। কিন্তু ঘটনার বিষয়ে সমঝোতা হওয়ায় পুলিশ ও প্রভাবশালীদের ভয়ে এ ব্যাপারে মুখ খুলতে রাজি হয়নি নির্যাতিত স্কুলছাত্রী ও তার স্বজনরা। ওই সময় নির্যাতিত স্কুলছাত্রী সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলতে চাইলেও তাকে বাধা দেন ধর্ষিতার মামা ইয়াছিন। ইয়াছিন সাংবাদিকদের বলেন, যা হয়েছিল তা গ্রাম্য মাতব্বর ও পুলিশ সমাধান করে দেবেন। আমরা এ ব্যাপারে কোনো কথা বলতে চাই না। তবে টাকার বিনিময়ে ধর্ষণের ঘটনা ধামাচাপা দিচ্ছেন এমন অভিযোগ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে মামা ইয়াছিন এ ব্যাপারে কথা বলতে অপারগতা প্রকাশ করেন। এ ব্যাপারে গ্রাম্য সালিশের বিচারক ইউপি সদস্য মোস্তফা মিয়া সাংবাদিকদের বলেন, মেয়েটি আমাদের জানিয়েছে, একে একে ৩ জন তাকে ধর্ষণ করেছে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে আমরা অভিযুক্ত ৩ জনকে দেড় লাখ টাকা করে জরিমানা করেছিলাম। কিন্তু তারা জরিমানার টাকা না দেয়ায় মেয়েটির পরিবার থানায় যায়। সেখানে ওসি বিষয়টি সমাধান করে দেবেন বলে পরিবারটি আমাকে জানায়। তাই থানায় কোনো মামলা হয়নি। এদিকে এলাকাবাসী ও স্থানীয় সাংবাদিকরা এ ঘটনা জানার পর বেকায়দায় পড়ে পুলিশ। পরিস্থিতি বেগতিক দেখে তড়িঘড়ি করে গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেল আড়াইটার দিকে স্কুলছাত্রীর নানির দায়ের করা অভিযোগটি মামলা হিসেবে নথিভুক্ত করতে বাধ্য হয় তারা। এ ব্যাপারে নরসিংদী সদর মডেল থানার ওসি সৈয়দুজ্জামান বলেন, ঘটনাটি স্থানীয়ভাবে সমঝোতার চেষ্টা করা হয়েছে সত্য। কিন্তু পুলিশ সমঝোতা করেছে এটা সত্য নয়। অভিযোগ পেয়েই মামলা হিসেবে নথিভুক্ত করেছি। তা ছাড়া বিষয়টি ওসি (তদন্ত) সালাউদ্দিন তদন্ত করছেন। টাকা নেয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, টাকা নিলে থানায় মামলা হলো কীভাবে। এ ব্যাপারে পুলিশ সুপার সাইফুল্লাহ আল মামুন বলেন, ধর্ষণের ঘটনা কেউ ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা করলে সেটা যদি পুলিশও হয় তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। তবে থানায় মামলা হয়েছে এবং আসামিদের গ্রেপ্তারের জন্য নির্দেশ দেয়া হয়েছে। অচিরেই আসামিরা গ্রেপ্তার হবে বলে তিনি জানান।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App