×

জাতীয়

দৌলতদিয়ায় যৌনপল্লীর প্রতিটি মৃত্যুই রহস্য ঘেরা

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৬ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ০২:৪৯ পিএম

দৌলতদিয়ায় যৌনপল্লীর প্রতিটি মৃত্যুই রহস্য ঘেরা
গোয়ালন্দ উপজেলায় অবস্থিত দেশের বৃহত্তম দৌলতদিয়া যৌনপল্লীতে অস্বাভাবিক মৃত্যুর সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। এ সব মৃত্যুকে আত্মহত্যা বলে চালানো হলেও প্রায় প্রতিটি মৃত্যুই রহস্যে ঘেরা। মৃতদের স্বজন না থাকায় কোনো মৃত্যুরই সঠিক কারণ উদ্ঘাটন হয় না বলে দাবি সংশ্লিষ্টদের। দৌলতদিয়া যৌনপল্লীতে শুক্রবার রাতে তানিয়া আক্তার সাথী (২২) নামের এক তরুণীর রহস্যজনক মৃত্যু হয়েছে। থানা পুলিশ তার ঘর থেকে ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করে। স্থানীয়দের ধারণা তাকে হত্যা করে লাশ ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে। যৌনকর্মী, এনজিওকর্মী ও পল্লী সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ভালোবাসার মানুষের সঙ্গে অভিমান, বাড়িওয়ালিদের অত্যাচার, মোটা অঙ্কের টাকার ঋণের বোঝা, নেশাগ্রস্তসহ নানা কারণে তাদের অনেকেই আত্মহত্যার পথ বেছে নিতে বাধ্য হয়। এ ছাড়াও দীর্ঘদিন ধরে সুবিধা নেয়া কথিত প্রেমিকদের হাতেও কোনো কোনো যৌনকর্মীর মৃত্যু ঘটনার অভিযোগ রয়েছে। ওইসব ঘটনায় প্রথমে অপমৃত্যুর মামলা হয়। ময়নাতদন্তের রিপোর্টের ভিত্তিতে পরবর্তী সময়ে হত্যা মামলা রুজু হওয়ার কথা বলা হলেও প্রকৃতপক্ষে অদ্যাবধি তা হতে দেখা যায়নি। এর পেছনে স্থানীয় প্রভাব ও অর্থ কাজ করে বলে অভিযোগ রয়েছে। যৌনপল্লীর কোনো কোনো চাঞ্চল্যকর মৃত্যুকে ময়নাতদন্ত পর্যন্ত কৌশলে হতে দেয়নি সন্দেহভাজন অপরাধীরা। যৌনকর্মীদের অধিকার নিয়ে কাজ করা বেসরকারি উন্নয়ন সংগঠন অবহেলিত মহিলা ও শিশু উন্নয়ন সংস্থার তথ্যমতে, গত দেড় বছরের বিভিন্ন সময়ে দৌলতদিয়া পতিতাপল্লীতে মোট ২০ জন নারী যৌনকর্মী ফাঁসিতে ঝুলে আত্মহত্যা করে। তারা হলো সাথী আক্তার, লতা আক্তার, সুমী আক্তার, লিপি বেগম, শারমীন আক্তার, লাবনী আক্তার, বৃষ্টি আক্তার, হালিমা বেগম, শিমলা বেগম, কাজলী আক্তার, প্রিয়া আক্তার, জয়গন বেগম, মিতু আক্তার, লিপি আক্তার, রাশিদা বেগম, সেতু আক্তার, নিলু বেগম, শরিফা বেগম, মনোয়ারা বেগম ও রহিমা আক্তার। এর বাইরেও দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে যৌনপল্লীতে খদ্দের হিসেবে আসা ব্যক্তির মৃত্যুর ঘটনা প্রায়ই ঘটে থাকে। এদের মৃত্যুর কারণও থেকে যায় রহস্যে ঘেরা। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই মৃত্যুর সঠিক কারণ উদ্ঘাটন হয় না। দৌলতদিয়া যৌনপল্লীর অবহেলিত মহিলা ও শিশু উন্নয়ন সংস্থার সভাপতি পারভিন সুলতানা বলেন, গত দেড় বছরের বিভিন্ন সময়ে এই পল্লীর ২০ জন নারী যৌনকর্মী ফাঁসিতে ঝুলে আত্মহত্যা করেন। তবে প্রশাসনিকভাবে পল্লীর বিভিন্ন অনিয়ম দূর করার পাশাপাশি নিয়মিত কাউন্সিলিংয়ের মাধ্যমে আত্মহত্যার প্রবণতা থেকে অবহেলিত যৌনকর্মীদের রক্ষা করা সম্ভব বলে তিনি জানান। এ ব্যাপারে গোয়ালন্দ ঘাট থানার ওসি মীর্জা এ কে আজাদ বলেন, আমার দায়িত্বকালীন সময়ে (প্রায় দুই বছর) এ পর্যন্ত যৌনপল্লীতে যতগুলো অপমৃত্যুর ঘটনা পেয়েছি ময়নাতদন্তের রিপোর্টে তার সবই আত্মহত্যা বলে প্রমাণিত হয়েছে। ময়নাতদন্ত রিপোর্টকে কোনোভাবেই প্রভাবিত করার সুযোগ নেই বলে তিনি দাবি করেন। তবে বিধি মোতাবেক মৃতব্যক্তির কোনো স্বজন যদি ময়নাতদন্ত ছাড়া লাশ প্রাপ্তির আবেদন করে, সে ক্ষেত্রে লাশের ময়নাতদন্ত ছাড়া লাশ হস্তান্তর করা হয়ে থাকে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App