×

জাতীয়

পুলিশে জনবল বাড়ে, বাড়ে না ভূমি

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৪ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ১২:০০ পিএম

পুলিশে জনবল বাড়ে, বাড়ে না ভূমি
বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনীর কার্যক্রম দেশব্যাপী বিস্তৃত হলেও তাদের জন্য নেই কোনো ভূমি নীতিমালা। এমনকি সময়ের বিবর্তনে পুলিশের জনবল বাড়লেও বাড়েনি ভূমি বরাদ্দ। জমি সংকটে আটকে আছে পুলিশের অনেক অবকাঠামো নির্মাণ। ব্রিটিশ শাসনামলে শহরের থানার জন্য ৫ একর করে জমি বরাদ্দ দেয়ার বিধান চালু হলেও পরে তা অনেকাংশে কমানো হয়। ফলে থানা ভবন নির্মাণের পর আর ব্যারাক, আবাসন ভবন, মালখানা, আলামত রাখার স্থানসহ আনুষঙ্গিক স্থাপনা নির্মাণের জায়গা থাকছে না। পুলিশের জমি বরাদ্দের জন্য চিঠি চালাচালির পর একটি নীতিমালা তৈরির জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের অতিরিক্ত সচিবের নেতৃত্বে ১৫ সদস্যের কমিটি গঠন করা হলেও কাজে দৃশ্যমান অগ্রগতি নেই। প্রাপ্ত তথ্য মতে, এরশাদ সরকারের সময়ে গঠিত ব্রিগেডিয়ার এনাম কমিশনের সুপারিশ মতে, ১৯৮৪ সালে পুলিশের জনবল ছিল ৭২ হাজার ৯৭ জন। বর্তমানে বাংলাদেশ পুলিশের জনবল ২ লাখ ৯ হাজার ১৯২ জন (সিভিল স্টাফ ১০ হাজার ৪৮৮ জনসহ)। যারা র‌্যাব, সোয়াত, এপিবিএন, এসপিবিএন, পিবিআই, এসবি, সিআইডি, টুরিস্ট পুলিশসহ বিভিন্ন ইউনিটে ছড়িয়ে আছে। এ প্রসঙ্গে পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সের অতিরিক্ত ডিআইজি (উন্নয়ন) গাজী মো. মোজাম্মেল হক ভোরের কাগজকে বলেন, জমির অভাবে পুলিশের অনেক অবকাঠামো নির্মাণকাজ থমকে আছে। পুলিশ হেডকোয়ার্টার্স থেকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো প্রস্তাবের সুরাহা না হওয়ায় আটকে আছে অনেক প্রকল্প। তিনি বলেন, অর্থ এবং পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের আগ্রহের পরও শুধুমাত্র জমি বরাদ্দ না পাওয়ায় পুলিশের আবাসন এবং দাপ্তরিক কাজের জন্য ভবন নির্মাণ করা যাচ্ছে না। পুলিশের জনবল বেড়েছে কিন্তু বাড়েনি কোনো জমি। জানা গেছে, খাস জমি বন্দোবস্ত নিয়ে বা জমি অধিগ্রহণ করে পুলিশের জন্য ভূমি ব্যবস্থাপনা করা হয়ে থাকে। ব্রিটিশ শাসনামলে শহরের থানার জন্য জমি বরাদ্দ ছিল ৫ একর করে। ঢাকার তেজগাঁও এবং রমনা থানার জমি রয়েছে ৫ একর করে। ১৯৮৪ সালে তা কমিয়ে শহরের থানার জন্য ৫০ শতাংশ এবং জেলা উপজেলার থানার জন্য ১ একর করে জমি বরাদ্দের সিদ্ধান্ত হয়। সময়ের বিবর্তনে পুলিশের জনবল বাড়লেও বাড়েনি জমি। ফলে স্বরাষ্ট্র, অর্থ এবং পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় প্রকল্প চূড়ান্ত করে অর্থ ছাড় দিলেও অবকাঠামো নির্মাণ করতে পারছে না পুলিশ। এ জন্য পুলিশের সবকটি ইউনিটের জন্য সুনির্দিষ্টভাবে উল্লেখ করে ৩ বছর আগে ভূমি নীতিমালা প্রস্তুতের জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠানো হলেও তা ঝুলে আছে। সর্বশেষ গত ৯ মে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল একই মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. নূরুল ইসলামকে আহŸায়ক ও ১৪টি সংস্থার প্রতিনিধির সমন্বয়ে পুলিশ অধিদপ্তর, বিজিবি, কোস্ট গার্ড, আনসার এবং ভিডিপির বিভিন্ন ইউনিটের জন্য জমির পরিমাণ নির্ধারণ সংক্রান্ত নীতিমালা চূড়ান্ত করার লক্ষ্যে কমিটি গঠন করেন। ৩০ কার্যদিবসে ওই কমিটির পূর্ণাঙ্গ সুপারিশ প্রস্তুতের কথা থাকলেও প্রায় ৫ মাসেও তা আলোর মুখ দেখেনি। এদিকে পুলিশ বিভাগের ১০১টি জরাজীর্ণ ভবন ভেঙে নতুন ভবন নির্মাণ করার কাজ চলছে। ৪৬টি ভবন নির্মাণকাজ শেষ হয়েছে। ৪৪টির নির্মাণকাজ চলছে। বাকিগুলো প্রক্রিয়াধীন বলে জানা গেছে। অনেক থানারই নিজস্ব জমি নেই। চলছে ভাড়া বাড়িতে। এর মধ্যে ডিএমপির ৫০ থানার মধ্যে ওয়ারী, খিলগাঁও, খিলক্ষেত, শাজাহানপুর, মুগদা, শাহাবাগ, হাতিরঝিলসহ ২২ থানা চলছে অন্যের ভবনে। পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সের প্রস্তাবনায় মেট্রোপলিটনের থানার জন্য এক একর করে এবং জেলা উপজেলা পর্যায়ের থানার জন্য আড়াই একর করে জমি বরাদ্দের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। যাতে মূল ভবনের পাশাপাশি অন্য সব অবকাঠামো নির্মাণ করা হবে। পুলিশের একাধিক কর্মকর্তা বলেছেন, পুলিশ ছাড়া অন্য বাহিনীগুলোর জনবল কম হলেও পুলিশের তুলনায় তাদের জমি কয়েকগুণ বেশি। কিন্তু পুলিশের জন্য জমি বরাদ্দে চিঠি চালাচালি চললেও ফলাফল মিলছে না। ফলে বিশাল জনবলের পুলিশ বাহিনীর দৈনন্দিন কর্মকান্ড যেমন ব্যাহত হচ্ছে, তেমনিভাবে অনেক কাজেই গতি আসছে না।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App