×

জাতীয়

কালীগঞ্জের পতিত জমিতে খেজুর বাগান

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০২ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ০৩:৩২ পিএম

কালীগঞ্জের পতিত জমিতে খেজুর বাগান
কালীগঞ্জ উপজেলার অধিকাংশ মানুষ কৃষির ওপর নির্ভরশীল। এ উপজেলার কৃষকরা অন্যান্য ফসলের পাশাপাশি তাদের পতিত জমিতে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে খেজুর বাগান গড়ে তুলছে। ফলে কালীগঞ্জ উপজেলায় খেজুরের গুড় ও পাটালি দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। শীত মৌসুমে গাছিরা সেই পুরনো নিয়মে গুড় পাটালি উৎপাদন করে আসছেন। কালীগঞ্জ উপজেলার ১১টি ইউনিয়নে কি পরিমাণ খেজুর গাছ আছে এবং তা থেকে কি পরিমাণ গুড় ও পাটালি উৎপাদন হচ্ছে তার কোনো সঠিক হিসাব নেই। কিন্তু আধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে সু-মিষ্টি, সু-স্বাধু খেজুর রস, গুড় ও পাটালি প্যাকেটজাত করে বিদেশে রপ্তানি করে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা সম্ভব বলে স্থানীয়দের ধারণা। ব্রিটিশ আমলে ইংরেজ শাসকরা এ অঞ্চলের কৃষকদের জমিতে নীল চাষ করতে বাধ্য করেছিল। নীল চাষের কুফল সম্পর্কে কৃষকরা যখন বুঝতে পারল তখন তারা নীল চাষের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করে। তাদের নীল চাষের উপযোগী জমিতে হাজার হাজার খেজুর গাছ রোপণ করা শুরু করেন। জনশ্রুতি আছে খেজুর গাছ থেকে অতীতে চিনি তৈরি করা হতো। যে কারণে চীনারা চিনি তৈরির পদ্ধতি শেখাতে এ দেশে এসেছিল। ঝিনাইদহের কোটচাঁদ উপজেলায় এ শিল্পের ব্যাপক প্রসার ঘটেছিল। নির্ভরযোগ্য একটি সূত্রে জানা গেছে, তৎকালে খেজুর গুড় থেকে উৎপাদিত চিনির পরিমাণ ছিল ১২ লাখ ২১ হাজার ৪শ টন। ইংরেজরা সে সময় ভারত থেকে বিপুল পরিমাণ চিনি রপ্তানি করে প্রচুর মুনাফা অর্জন করে। চিনি রপ্তানি করে অনেক লাভ হওয়ায় তারা খেজুরের গুড় থেকে চিনি উৎপাদনের জন্য এ অঞ্চলে কারখানা স্থাপনের সিদ্ধান্ত নেয়। মি. বালকে সর্বপ্রথম ভারতের বর্ধমান জেলার ধোবা নামক স্থানে এ ধরনের কারখানা স্থাপন করেন। পরবর্তী সময়ে ধোবা সুগার কোম্পানি কোটচাঁদ উপজেলায় আরো ২টি খেজুর গুড় থেকে চিনি উৎপাদনের কারখানা স্থাপন করেন। ১৮৮২ সাল পর্যন্ত এ ব্যবসা অত্যন্ত সফলতার সঙ্গে চলে বলে জানা যায়। পরে আখ থেকে চিনি উৎপাদন শুরু হলে প্রতিযোগিতায় খেজুরের গুড় পিছিয়ে পড়ে। ১৯০১ সাল পর্যন্ত বৃহত্তর কুষ্টিয়া, যশোর-ঝিনাইদহ অঞ্চলের গুড় থেকে চিনি তৈরির জন্য ১১৭টি কারখানা ছিল এবং ১৯২৪ সালে তা কমে ৫০-এর কোটায় নেমে আসে। আস্তে আস্তে খেজুর গুড় থেকে চিনি তৈরির কারখানাগুলো সম্পূর্ণরূপে বিলুপ্ত হয়ে যায়। সেই থেকে আর কেউ খেজুর গাছের প্রতি যতœবান হয়নি। তবে বন জঙ্গলে অযতœ আর অবহেলায় বেড়ে ওঠা খেজুর গাছগুলোই আজো নিজেদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রেখেছে। তবে স¤প্রতি উপজেলার কৃষকদের মাঝে তাদের পতিত জমিতে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে খেজুর বাগান তৈরির প্রবণতা ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। উপজেলার ঈশ্বরবা গ্রামের রোস্তম আলী ও চাঁচড়া গ্রামের আক্কাচ আলী জানান, খেজুর গাছের বাগান তৈরি করতে যতেœর প্রয়োজন হয় না। খেজুর গাছ কাঁটাযুক্ত হওয়ায় গরু-ছাগলের উৎপাত কম হয়। একটি খেজুর গাছ ৪/৫ বছর বয়স থেকে রস দিতে শুরু করে এবং তা ৪০/৫০ বছর পর্যন্ত অব্যাহত থাকে। শীত মৌসুম শুরু হলেই গাছিরা খেজুর গাছ থেকে রস সংগ্রহে ব্যস্ত থাকে। একটি খেজুর গাছ থেকে এক মৌসুমে ১৫/১৬ কেজি গুড় পাওয়া যায়। শীত মৌসুমে কালীগঞ্জে প্রচুর পরিমাণে গুড় উৎপাদন হয়। এই গুড় এই অঞ্চলের চাহিদা পূরণ করে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সরবরাহ করা হয়। শীত মৌসুমে এ উপজেলা থেকে প্রতি সপ্তাহে ১০/১২ ট্রাক গুড় দেশের বিভিন্ন শহরে চালান হয়। কালীগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা জানান, আগের তুলনায় বর্তমানে কৃষকরা খেজুর বাগান গড়ে তুলতে আগ্রহী হচ্ছেন। তাই সরকারিভাবে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে খেজুর রস, গুড় ও পাটালি প্যাকেটের মাধ্যমে বিদেশে রপ্তানি করলে প্রতি বছর প্রচুর পরিমাণে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা সম্ভব।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App