×

জাতীয়

বিএনপিকে তিন প্রশ্ন ওবায়দুল কাদেরের

Icon

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ০১ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ১০:৩২ পিএম

বিএনপিকে তিন প্রশ্ন ওবায়দুল কাদেরের

ফাইল ছবি

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বিএনপির কাছে তিনটি প্রশ্ন রেখে জবাব জানতে চেয়েছেন।

তিনি বলেছেন, বিএনপির কাছে তিনটি প্রশ্নের জবাব চাই। পঁচাত্তরে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর হত্যাকারীদের বিচারের পথ রুদ্ধ করতে কুখ্যাত ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ জারি ও সেটিকে পঞ্চম সংশোধনীতে অন্তর্ভুক্ত হওয়ার কী ব্যাখ্যা জাতির সামনে আছে বিএনপির? বিনা পয়সায় সাবমেরিন কেবল প্রত্যাখ্যান করার মাধ্যমে দেশকে পিছিয়ে দেওয়ার যে কাজটি তারা করেছে, তার ব্যাখ্যা কী? তৃতীয় প্রশ্ন হচ্ছে, তড়িঘড়ি করে খালেদা জিয়ার রায়ের আট দিন আগে বিএনপির গঠনতন্ত্র থেকে সাত ধারা বাতিল করা হলো কেন? আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে এগুলোর ব্যাখ্যা জানতে চাই।

শনিবার আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার ধানমণ্ডির রাজনৈতিক কার্যালয়ে আওয়ামী লীগের সম্পাদকমণ্ডলীর জরুরি সভা শেষে সংবাদ সম্মেলনে ওবায়দুল কাদের এসব কথা বলেন।

'জনগণের রায়ে আস্থা নেই বলে সরকার ইভিএমে নির্বাচন করার ষড়যন্ত্র করছে'- বিএনপির এমন অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিএনপির প্রতিই দেশের জনগণের কোনো আস্থা নেই। ইভিএম নিয়ে বিএনপির কেন ভয়, সেটাও আমরা বুঝে ফেলেছি। বিএনপির ভয় হচ্ছে ইভিএমে ভোট হলে তারা আর কেন্দ্র দখলের পুরনো অভিযোগ আনতে পারবে না, ভোট জালিয়াতি ও ভোট কারচুপি এবং কেন্দ্র থেকে তাদের পোলিং এজেন্টদের বের করে দেওয়ার পুরনো অভিযোগও আনতে পারবে না। এ কারণেই বিএনপি ইভিএম চায় না।

ওবায়দুল কাদের বলেন, ইভিএম আওয়ামী লীগের নতুন কোনো দাবি নয়। সারা দুনিয়ায় আধুনিক, স্বচ্ছ ও স্বল্প সময়ে ভোট প্রদান ও গণনা এবং ফলাফল ঘোষণার এটি সর্বশেষ প্রযুক্তি। ভারতে এটা নিয়ে অনেক বিতর্ক হয়েছে। আম আদমি পার্টির অরবিন্দ কেজরিওয়াল অভিযোগ করেছিলেন, এখানে টেম্পারিংয়ের সুযোগ আছে। অনেক বিতর্ক ও আলাপ-আলোচনার পর দেশটির নির্বাচন কমিশন শেষ পর্যন্ত অরবিন্দ কেজরিওয়ালের অভিযোগ নাকচ করে দিয়েছে।

নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগে সরকারের পদত্যাগ ও খালেদা জিয়ার মুক্তি দিতে বিএনপির দাবি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, প্রথম বিষয়টি সংবিধানসম্মত নয়। আর দ্বিতীয় বিষয়টি আইনি বিষয়। তারা যদি মামলা মোকাবেলা করে আইনি প্রক্রিয়ায় খালেদা জিয়াকে মুক্ত করে আনতে পারে, ওয়েলকাম। সরকার যদি বাধা দিত, সরকার যদি বিচার বিভাগকে কোনোভাবে প্রভাবিত করতে চাইত, তাহলে খালেদা জিয়া এতগুলো মামলায় জামিন পেতেন না। প্রায় ৩০টি মামলায় তিনি জামিন পেয়েছেন। সরকার হস্তক্ষেপ করলে কীভাবে এসব মামলা থেকে জামিন পেলেন?

'আইনি প্রক্রিয়ায় খালেদা জিয়ার মুক্তি সম্ভব নয়'- বিএনপি নেতা মওদুদ আহমদের এমন বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, মওদুদ আহমদের কাছ থেকে আইনি প্রক্রিয়া শিখতে হবে? তিনি এমনও বলেছেন, সংবিধানের বাইরে গিয়েও নির্বাচনের ব্যবস্থা করা যায়। সংসদের বাইরে গিয়ে তাদের দাবি মেনে নেওয়ার দাবি করেছেন। যারা সংবিধান ও আইন লঙ্ঘন করে ক্ষমতায় আসে, এটা তাদের পক্ষেই বলা সম্ভব। মওদুদ নিজেই আইন লঙ্ঘন করেন। তিনি মৃত ব্যক্তির নামে ভুয়া সার্টিফিকেট আদালতে জমা দিয়ে ৪০ বছরের দখল করা বাড়ি রক্ষা করতে পারেননি। যিনি নানা অপচেষ্টার দালাল, তার পক্ষের এ ধরনের দাবি আমরা সেভাবে নিচ্ছি না।

খালেদা জিয়াকে রাজপথে আন্দোলনের মাধ্যমে মুক্ত করা হবে- বিএনপি নেতাদের এমন বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় তিনি বলেন, সরকারের দশ বছর হয়ে গেল। এই দশ বছরে বারবার আন্দোলনের ডাক দিয়েছে বিএনপি। সবই সর্বাত্মক আন্দোলনের ডাক, ছোটখাটো আন্দোলনের ডাক নয়। খালেদা জিয়াও সর্বাত্মক আন্দোলনের ডাক দিয়েছিলেন। এর সঙ্গে বাস্তবতা কতটুকু, সেটা সবাই জানে। দশ বছরে একটা দিনও সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করার মতো কোনো আন্দোলন বিএনপি নামক দল করতে পারেনি। বাংলাদেশের ইতিহাসে এত ব্যর্থ বিরোধী দল আর আসেনি। এই ব্যর্থতার জন্য বিএনপির টপ টু বটম সব নেতার পদত্যাগ করা উচিত।

তিনি বলেন, ফখরুল ইসলাম আলমগীর, মওদুদ আহমদ ও ড. খন্দকার মোশাররফরা রাস্তায় দাঁড়িয়ে মাইক দিয়ে কয়েকজনকে নিয়ে আওয়াজ দিলেই কি সরকার হটে যাবে? এই সরকারের গণভিত ও শিকড় খুবই শক্তিশালী, বাংলাদেশের মাটির অনেক গভীরে প্রোথিত। আমরা হঠাৎ করে এসে জনসমর্থহীনভাবে সরকারে আসিনি, এটা যেন তারা ভুলে না যায়।

'শরিকদের ৭০ আসন দেবে আওয়ামী লীগ'

ওবায়দুল কাদের বলেন, আওয়ামী লীগ জাতীয় নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে। এ মাসেই কার্যক্রম পুরোপুরি শুরু হবে। জোট নিয়েও পরোক্ষভাবে আলাপ-আলোচনা করা হয়েছে। যারা আমাদের এতদিনের শরিক, তাদের বিষয় নিয়ে কথা বলেছি। অনেকে আসতে চাচ্ছে, তাদের সঙ্গেও আমরা কথাবার্তা বলতে শুরু করেছি।

তিনি বলেন, আমাদের জোটে আলাপ-আলোচনা চলছে। এ মাসের শেষদিকে ফাইনাল সেপ দেবে। বেশিদূর গেলে অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত যেতে পারে। জোটের শরিকদের জন্য ৬৫ থেকে ৭০ আসন ছেড়ে দেওয়ার চিন্তাভাবনা আছে। এখানেও কথা আছে, এটা কোনো বাইন্ডিং বিষয় না। জোটের যে কোনো দলেরই ভালো প্রার্থী হলে আমরা গ্রহণ করব। উইনেবল প্রার্থীকে মনোনয়ন দেওয়া হবে।

সম্পাদকমণ্ডলীর বৈঠক প্রসঙ্গে ওবায়দুল কাদের বলেন, দেশের সর্বশেষ অবস্থা ও দলের সাংগঠনিক অবস্থা নিয়ে সভায় আলাপ-আলোচনা করেছি। জেলা পর্যায়ে তৃণমূলে দলের অবস্থান নিয়েও আলোচনা করেছি। সামনে ট্রেনে করে দেশের উত্তরাঞ্চল সফরে যাওয়ার পরিকল্পনা দলের রয়েছে।

এর আগে ওবায়দুল কাদেরের সভাপতিত্বে বৈঠকে দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের মধ্যে মাহবুবউল আলম হানিফ, ডা. দীপু মনি, অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক, আবদুর রহমান, ড. হাছান মাহমুদ, আহমদ হোসেন, একেএম এনামুল হক শামীম, খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, ফরিদুন্নাহার লাইলী, শাম্মী আহমেদ, সুজিত রায় নন্দী, ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App